দেশের ব্যাংক খাতের চলমান গভীর সংকট কোভিড কিংবা যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে নয়। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা দুর্বল শাসন ও সংস্কারের অভাবে এ সংকট তৈরি হয়েছে’ এমনটিই মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।
শনিবার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইন অডিটোরিয়ামে ‘সংকটে অর্থনীতি : কর্মপরিকল্পনা কী হতে পারে?’ শীর্ষক এক সংলাপে সিপিডির পক্ষে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এমন কথা কথা বলেন।
ড. ফাহমিদা তার প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর বহু বছর ধরেই সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ঋণ খেলাপি বেড়েই চলেছে। সুশাসন ও সংস্কারের অভাবে এই খাত ক্রমাগতভাবে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের ক্ষেত্রে বড় দুর্বলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছ। খেলাপি ঋণের উন্নতি না হলে এ ধরনের ঘাটতি রয়েই যাবে। খেলাপি যা বলা হচ্ছে বাস্তবে এর পরিমাণ অনেক বেশি। আইএমএফসহ সংশ্লিষ্টরা এটা বারবার বলেছে। তাদের ধারণা, সব সূচক যদি বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে ফাহমিদা বলেন, মূল্যস্ফীতি যে অবস্থায় ছিল সেখান থেকে আরও ঘনীভূত হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বড় কারণ হলেও আগে থেকেই মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারের পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা বড় কারণ। এর ফলে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। আগে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বাড়লে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমতো। কিন্তু এখন দুটোই সমানতালে বেড়ে চলছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তুলনা করলেও অনেক পণ্যের ক্ষেত্রেই মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
রিজার্ভের বিষয়ে সিপিডি বলছে, রিজার্ভের হিসাব নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। রিজার্ভের কারণে এলসি খোলা কিংবা আমদানির ক্ষেত্রে চাপ তৈরি হয়েছে। রপ্তানি বাড়লেও কারেন্ট হিসাব ব্যালেন্স নেতিবাচক। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে এসেছে। বিদেশে মানুষ যাওয়ার প্রবণতা বাড়লেও রেমিট্যান্স বাড়ছে না। এখানে হুন্ডি মার্কেটের বিরাটভাবে প্রভাবিত করছে, সরকারের আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা থাকা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স বাড়ছে না।
সংলাপে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধান অতিথি ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।