কম দামে সুতা বিক্রি ও অতিরিক্ত গ্যাসবিল

১৫ মাসে স্পিনিং মিলগুলোর ক্ষতি ৪৫ হাজার কোটি টাকা

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

মে ৩০, ২০২৩, ০৮:১৯ পিএম

১৫ মাসে স্পিনিং মিলগুলোর ক্ষতি ৪৫ হাজার কোটি টাকা

দেশের স্পিনিং মিলগুলো উৎপাদিত সুতা কম দামে বিক্রি এবং অতিরিক্ত গ্যাস বিল পরিশোধের কারণে গত 
১৫ মাসে ৪৫ হাজার কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে।

রাজধানীর পান্হপথে নিজস্ব কার্যালয়ে মঙ্গলবার (৩০ মে) "টেক্সটাইল খাতে বিরাজমান সমস্যা ও উত্তরণ" শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য দিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।

তিনি বলেন, স্পিনিং মিলগুলো তাদের উৎপাদন অব্যাহত রেখে শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন-ভাতাদি পরিশোধ ও ইউটিলিটি বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে  উৎপাদন খরচের তুলনায় ১৮ থেকে ২০ শতাংশ কম দামে সুতা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে গড়ে প্রতিটি মিলকে গ্যাস ব্যবহার না করেও সরকার নির্ধারিত ট্যারিফ অনুযায়ী গ্যাস বিল দেওয়ায় বছরে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত বিল দিতে হচ্ছে।

মোহাম্মদ আলী খোকন জানান, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অস্থিতিশীল দামে তুলা আমদানি, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না থাকায় সৃষ্ট প্রোডাকশন লস, গ্যাস ব্যবহার না করে অতিরিক্ত গ্যাস বিল ও অতিরিক্ত নিরাপত্তা জামানত দেওয়ায় স্পিনিং মিলগুলোর এ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

তিনি বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) অনিয়মিত বরাদ্দ, এ তহবিল থেকে ঋণের পরিমাণ হ্রাসসহ প্রয়োজনীয় ডলারের অভাবে কাঁচা তুলা আমদানির জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক এলসি ওপেন না করায় সমস্যা হচ্ছে। গত প্রায় এক বছর ধরে এ তহবিল থেকে সংশ্লিষ্ট মিলের অনুকূলে ঋণ বরাদ্দ অনিয়মিত এবং পর্যায়ক্রমে এ তহবিলের আকার প্রতিটি স্পিনিং মিলের ক্ষেত্রে ৩০ মিলিয়ন ডলার থেকে ২০ মিলিয়ন ডলারে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে একটি মিল তার পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহারের জন্য যে পরিমাণ কাঁচামাল তথা তুলা আমদানির প্রয়োজন হয় তা করতে পারছে না। অতঃপর মিলগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ শুধু কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন ক্ষমতার বাইরে থেকে যাচ্ছে, যা উৎপাদন খরচ বাড়াচ্ছে।

মোহাম্মদ আলী জানান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি গভীর চক্রান্তের সম্মুখীন। বর্তমানে ঘরে ঘরে পাকিস্তানি কাপড়। সরকার ২০৩০ সালে টেক্সটাইল ও ক্লথিং থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে খাতটির এ নাজুক অবস্থা চলতে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।

বিটিএমএ সদস্য খোরশেদ আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিকদের বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। আমার ৩৭ বছরের শিল্পজীবনে এমন গ্যাসের সংকট দেখা যায়নি। ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকে না, এ কারণে আমার একটি ইউনিট বন্ধ, অন্য ইউনিটের ৩৫ শতাংশ কাজ চলছে। বিদ্যুতের সমস্যাও ভয়াবহ।

বস্ত্রকলের মালিকরা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে সুতা বিক্রিতে নতুন করে সুরক্ষানীতি দাবি করেন। তাঁরা চান, তৈরি পোশাকশিল্পে কাপড় তৈরির জন্য ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের মাধ্যমে কটন সুতা সংগ্রহের একটি অংশ দেশীয় বস্ত্রকল থেকে করার বিধান করা হোক।

অন্যান্যের মধ্যে এই সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সহসভাপতি ফজলুল হক, পরিচালক সৈয়দ নূরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ জুবায়ের ও খোরশেদ আলম উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!