বাজেট ২০২৪-২৫: খাবার কিনতে খরচ আরও বাড়বে

গোলাম রাব্বানী

জুন ৪, ২০২৪, ০৪:২৪ এএম

বাজেট ২০২৪-২৫: খাবার কিনতে খরচ আরও বাড়বে

পরোক্ষ কর ও ভ্যাটহার বাড়ানোর কারণে শাকসবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিপত্রের দাম বাড়বে

আপনি যদি মনে করেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন তাহলে আপনার জন্য এবারের বাজেট দুঃসংবাদ নিয়ে আসছে। কেননা বাজেটে পরোক্ষ কর ও ভ্যাটহার বাড়ানোর কারণে  সামনে আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।

আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বাজেটে পরোক্ষ কর ও ভ্যাটহার বাড়ানোর কারণে চাল, গম থেকে শুরু করে কৃষিজাত পণ্য ও আমদানিকৃত ওষুধের দাম বাড়বে। যার ফলে দৈনিক খরচ যে আপনার আরও বেড়ে যাচ্ছে তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে।

এখন যে দামে খাদ্যপণ্য কিনতে হচ্ছে সেটি আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে। আমদানিতে পরোক্ষ কর হিসেবে আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাড়ানো হবে আসন্ন বাজেটে। যার ফলে প্রায় ৩০০ শতাধিক মৌলিক পণ্যের শুল্কছাড় আর থাকছে না।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে করে বাজেটের পর সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তাদের জীবনধারণ আরও কঠিন হয়ে উঠবে

মৌলিক এই পণ্যের মধ্যে জনজীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে চাল, গম, জ্বালানি, সার, বীজ, সয়াবিন তেল, পাম তেল, গ্যাস ও ওষুধ।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার ব্যয়ের প্রাক্কলন করেছে অর্থ বিভাগ। এই বিপুল পরিমাণ ব্যয় মেটাতে রাজস্ব আয়ও বাড়ানো হচ্ছে। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তপূরণে রাজস্ব বাড়াতে আগামী অর্থবছরে বিভিন্ন খাতের ভ্যাট সুবিধা তুলে দিয়ে ভ্যাট আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে এনবিআরের। একই শর্তের কারণে ৩৩৫টি মৌলিক পণ্যের ওপর শূন্য শুল্ক সুবিধাও প্রত্যাহার হতে যাচ্ছে।

এছাড়া আসন্ন বাজেটে বাড়তে যাচ্ছে ব্যাংকে রাখা অর্থের ওপর আবগারি শুল্কও। বাড়বে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্কও। সব মিলিয়ে বাড়তি করের চাপে বাড়তে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

চাল
বাড়তে চলেছে চাল, গমসহ অন্যান্য মৌলিক পণ্যের দামও

মোবাইল ফোনে কথা বলা বা ইন্টারনেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। এখন মোবাইল ফোনে কথা বলায় ১৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপিত আছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আছে। এর সঙ্গে ভোক্তাদের ১ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। আসন্ন বাজেটে আরও ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে মোবাইল সেবার দাম বাড়তে পারে।

এই সময়ে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্কে প্রবেশে এবং রাইডে চড়তে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপিত আছে। এটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে পার্কে ঘোরার খরচ বাড়বে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোমল পানীয়, কার্বোনেটেড বেভারেজ, এনার্জি ড্রিংকস, ফলের জুস, আমসত্ত্বের দাম বাড়তে পারে। কারণ সরবরাহ পর্যায়ে এসব পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। এখন ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে। এটা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে।

মৌলিক পণ্যের ওপর চাপ
আসন্ন বাজেটের পর বিভিন্ন মৌলিক পণ্যের ওপর চাপ আসবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা

নতুন ভ্যাট আইনে একটি স্ট্যান্ডার্ড ভ্যাটহার (১৫ শতাংশ) ছিল। নানা কারণে সেটি রাখা সম্ভব হয়নি। এ জন্য বর্তমানে একাধিক হারে ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে। আগামী বাজেটে এই হার যৌক্তিক করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ভ্যাটহার বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে এনবিআরের। ২০২৬ সাল নাগাদ পর্যায়ক্রমে সব পণ্য ও সেবার ওপর স্ট্যান্ডার্ড ভ্যাটহার আরোপ করা হবে।

ব্যাংকে রাখা টাকার ওপর আবগারি শুল্কের স্তর ও হারে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে রাজস্ব বিভাগ।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ-সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে। এখন ১০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত স্তরটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে ১০ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত আগের মতোই ৩ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক বসবে। ৫০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ৩ হাজার টাকার বদলে ৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক বসতে পারে।

Link copied!