মুদ্রার বিনিময় হারের প্রস্তাব আইএমএফের

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

অক্টোবর ১৮, ২০২৩, ১০:৫৫ পিএম

মুদ্রার বিনিময় হারের প্রস্তাব আইএমএফের

ছবি: সংগৃহীত

কাগজে-কলমে বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাইয়ে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করে। বাস্তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনায় বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করে থাকে। মুদ্রার নতুন বিনিময় হার।

বাংলাদেশ ব্যাংক যদি বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পরিচালনার ক্ষেত্রে ‍‍‘ক্রলিং পেগ‍‍’ পদ্ধতি অনুসরণ করে তাহলে আইএমএফ স্টাফ মিশন আগামী ডিসেম্বর ও আগামী বছরের জুনের জন্য দেশের রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দিতে ইচ্ছুক।

‍‍‘ক্রলিং পেগ‍‍’ হচ্ছে মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের এমন ব্যবস্থা যা নির্দিষ্ট বিনিময় হারের সাথে মুদ্রাকে হারকে একটি ব্যান্ডের মধ্যে ওঠানামার অনুমতি দেয়। এই ব্যবস্থাটি পুরোপুরি স্থির বিনিময় ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যবহার করে। এর পাশাপাশি এটি ভাসমান বিনিময় হার দাপটকে নিয়ন্ত্রণে আনে।

এই ব্যবস্থাটি মুদ্রার মানকে স্থির রাখার চেষ্টা করে। তবে একই সময়ে বিনিময় হারকে একটি ব্যান্ডের মধ্যে খোলা বাজারের অনিশ্চয়তাকে ‍‍‘গ্লাইড‍‍’  করতে ডিজাইন করা হয়েছে।

সফররত আইএমএফ স্টাফ মিশনকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে যে তারা ‍‍‘ক্রলিং পেগ‍‍’ গ্রহণে রাজি। তবে এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। ।

চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির জন্য বিশ্ব ব্যাংকের সাথে রাজি হওয়া শর্ত অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুন থেকে মুদ্রার সমন্বিত ও বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

কাগজে-কলমে বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাইয়ে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করে। বাস্তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনায় বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করে থাকে।

রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে সফররত আইএমএফ মিশন বাংলাদেশে বিদ্যমান বিনিময় হার ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট নয়। কারণ এটি ডলারের মজুদ বাড়াতে ব্যর্থ হচ্ছে।আইএমএফ স্টাফ মিশন বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী ডিসেম্বর ও জুনের জন্য কম রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে সরকারের অনুরোধের সাথে একমত প্রকাশ করেছে।

রিজার্ভের সর্বনিম্ন লক্ষ্যমাত্রা একটি নির্দিষ্ট মাসের আমদানি বিলের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়েছিল। সরকারি কর্মকর্তারা মনে করেন, যেহেতু সরকার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের সময় থেকে আমদানি কমিয়েছে, তাই কম লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ অনুপযুক্ত নয়।

আগামী ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন রিজার্ভ অন্তত ২৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার হওয়ার কথা।বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের হিসাব অনুসারে, বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারেরও কম।

সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে রিজার্ভ সংরক্ষণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে কঠোর উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব নয়। তাই আগের প্রান্তিকের লক্ষ্যমাত্রার মতো ডিসেম্বরের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হবে না।

আইএমএফ মিশন সংস্থাটির বোর্ডকে এই বাধ্যতামূলক শর্তে কিছুটা ছাড় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।আইএমএফ স্টাফ মিশন জুনে চালু হওয়া সুদের হার করিডোর ব্যবস্থা নিয়েও সন্তুষ্ট নয়। কারণ এটি প্রকৃতপক্ষে বাজারভিত্তিক নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সুদের হারের সূত্র অনুসারে, ব্যাংকগুলো ‍‍ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের চলমান গড় হারের‍‍ ওপর তিন শতাংশ মার্জিন আরোপ করতে পারবে। অর্থাৎ, সুদের হারের ওপর এখনো একটি সীমা রয়ে গেছে।

আইএমএফ মিশন বলেছে যে তারা সরকারের সিদ্ধান্তের সাথে একমত। তবে তারা বিশেষ করে আর্থিক ও রাজস্ব খাতে এর ধীর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অসন্তুষ্ট।পরবর্তীকালে, আইএমএফ মিশন একটি সত্যিকারের বাজারভিত্তিক সুদের হার ব্যবস্থার আহ্বান জানায়।

যেমন, আইএমএফ দল ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনী নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে তারা ব্যাংকিং খাতে, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোয় ও কর্পোরেট গভর্নেন্সে উচ্চ খেলাপি ঋণ নিয়ে সন্তুষ্ট নয়।আইএমএফ চেয়েছিল যে সরকার রাজস্বসহ অন্যান্য খাতে কর ছাড়ের পরিস্থিতির ওপর সমীক্ষা পরিচালনা করুক।

মিশনটি জ্বালানির মূল্য বাস্তবতার নিরিখে নির্ধারণের কৌশল ও জ্বালানি খাতের জন্য ভর্তুকি কমানোর বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছিল।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মূল্যায়ন জানতে স্টাফ মিশন বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সাথে বৈঠক করেছে। আইএমএফ মিশন আজকের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার আশা করছে।
 

Link copied!