ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পর আরও পাঁচ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
ঋণ কেলেঙ্কারি ও নানা অনিয়মে তারল্য সংকটের কারণে দুর্দশায় পড়া এসব ব্যাংকে অধিকতর নিরীক্ষার জন্য ‘ফরেনসিক অডিট’ করা হবে। এর অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে থাকা এসব ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ‘আপাতত বাধ্যতামূলক ছুটিতে’ থাকবেন।
ব্যাংকগুলোর পর্ষদ তাদের ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাতে সায় দিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
ব্যাংকগুলোর এ সিদ্ধান্ত নিয়ে গত বৃহস্পতিবার গভর্নরের সঙ্গে এ ছয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান বৈঠক করেন। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার আবার তারা গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেন যেখানে ফরেনসিক অডিটররাও অংশ নেন। বৈঠকে নিরীক্ষার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ব্যাংকগুলোর এমডিরা হলেন- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী, এক্সিম ব্যাংকের মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন, এসআইবিএলের মোহাম্মদ ফোরকানউল্লাহ, ইউনিয়ন ব্যাংকের শফিউদ্দিন আহমেদ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সৈয়দ হাবিব হাসনাত।
তবে বাধ্যতামূলক ছুটির তালিকায় আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের এমডির নাম থাকলেও পর্ষদে পরিবর্তনের পর গত অক্টোবরে ইসলামিক আইসিবি ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শফিক বিন আবদুল্লাহর পুনঃনিয়োগ অনুমোদন আটকে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমানকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এমডিদের ছুটির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা সাংবাদিকদের বলেন, “ছয় ব্যাংকের এমডি ছুটিতে থাকবেন, এটা ছয় ব্যাংকের পর্ষদের সিদ্ধান্ত।”
এমন সিদ্ধান্তের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “এটা এজন্য করা হয়েছে কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যাংকগুলোতে অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউয়ের আওতায় আনবে। কারণ এসব ব্যাংকে অডিট পরিচালনা করার একটি পরিকল্পনা রয়েছে। তারা যাতে কোনো রকমের অযাচিত হস্তক্ষেপ করতে না পারেন, অর্থাৎ প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ রাখার জন্য তাদের সাময়িকভাবে ছুটিতে যেতে বলা হয়েছে।
“নিরীক্ষায় যদি তাদের (এমডি) কোনো রকমের অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত না থাকার প্রমাণ পাওয়া না যায়, তারা আবার চাকরিতে এসে যোগদান করতে পারবেন। যদি কোনো কিছু পাওয়া যায় তখন অন্য রকম চিন্তা করতে হবে। এটা আন্তর্জাতিক রীতি মেনে করা হয়েছে।”
জালিয়াতি ও ঋণ কেলেঙ্কারিতে এসব ব্যাংক বেশ কিছু দিন থেকে ধুঁকছে। তারল্য সংকটে গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না। এমন প্রেক্ষাপটে খাদের কিনারায় যাওয়া এ ছয় বেসরকারি ব্যাংকে ‘ফরেনসিক অডিট’ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংক খাত সংস্কারে গঠিত টাক্সফোর্স।
এ ছয় ব্যাংকের মধ্যে ইসলামিক আইসিবি ছাড়া বাকি পাঁচটির পর্ষদ দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত ব্যবসায়ী এস আলম ও তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এতে ব্যবস্থাপনা ও নিয়োগের সবকিছুও তারা নিরঙ্কুশভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ ছিল।
ব্যাংকগুলো থেকে নামে ও ভিন্ন নামে এস আলম ঋণের নামে টাকা বের করে নেন। দীর্ঘদিন অপরিশোধিত থাকায় সেগুলো খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে।
ক্ষমতার পালাবদলের পর এসব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ এস আলমের বাইরে চলে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর আহসান এইচ মনসুর এসব ব্যাংকে নতুন পরিচালনা বোর্ড গঠন করেন।
একটি নির্দিষ্ট সময়ে হওয়া সবধরনের লেনদেন যাচাই-পর্যালোচনা ও কোনো তথ্য মুছে ফেলা হয়েছি কি না, তা দেখতে এই ফরেনসিক অডিটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে টাক্সফোর্স। সেই সিদ্ধান্তে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকও।