বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যেন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে । মাছ , মাংস ,ডিম থেকে শুরু করে পেঁয়াজ, রসুন ,আদার পর এবার গায়ে আগুন ধরিয়েছে আলু । নতুন সাদা আলু বাজারে আসতেই প্রথমে ষাট টাকা এবং পরবর্তীতে এখন ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে । নতুন আলুর প্রকারভেদে সাদা এবং লাল আলুর দামে রয়েছে বেশ তফাৎ। রাজধানীর কাওরান বাজারে নতুন লাল আলু বিক্রয় হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে এবং সাদা আলু বিক্রয় হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে । কাওরান বাজারের পাইকারি বাজার থেকে কেনা একই আলু বাইরে গিয়ে বিক্রয় হচ্ছে ১০০-১২০টাকা কেজি দরে । আলুর আড়তে যথেষ্ট পুরাতন আলু মজুদ থাকা সত্ত্বেও নতুন আলুর দাম বৃদ্ধিতে আড়তদারগন জানান ।
চলতি মাসে টানা বৃষ্টিপাত হওয়াতে ক্ষেতেই অনেক আলু পচে গেছে এবং আড়তে যা আলু মজুদ আছে তা বাজার হিসেবে যথেষ্ট নয় । আলুর উৎপাদন এবার যথেষ্ট কম হওয়াতে নতুন আলু বাজারে ঢুকতেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন আড়তদারগন। তবে আলুর দাম বৃদ্ধি বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি আড়তের বেশিরভাগ মালিক।
ক্রেতাগন বলেন শীতের মৌসুমে আলুর দাম হওয়া উচিত ২০-৩০টাকা । কিন্তু সেই আলু এখন তিনগুণ বেশি দামে আমাদের কিনতে হচ্ছে । আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি । কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম এভাবে বাড়তে আর কোনো কিছুই কিনে খাওয়া সম্ভব হবে না। সিম ৬০ টাকা কেজি থাকলেও টমেটোর কেজি দাড়িয়েছে ১০০টাকা ,মরিচ আড়তে ৫০ টাকা কেজি বিক্রয় হলেও আড়ত থেকে বাইরে এসেই ২০-৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রয় হচ্ছে ।
আলু ,পেঁয়াজের পর ব্রয়লার এবং তেলের মূল্যতেও উর্ধ্বগতির তীর যেন উপর দিকেই উঠছে । ২০২৩ এর ডিসেম্বরে প্রত্যেক সপ্তাহে কেজি প্রতি দশ টাকা করে বাড়ছে ব্রয়লারের দাম । এই সপ্তাহে কেজি প্রতিতে বেড়েছে বিশ টাকা । গত সপ্তাহে ১৬০ টাকা হলেও এখন তা ১৮০ -১৮৫ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে । দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বিক্রেতাগন বলেন শীতকালে মুরগির উৎপাদন কমে যাওয়া এবং ফার্ম অনেকটা বন্ধ হয়ে যায় যার ফলে এখন দাম অনেকটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে । তবে উৎপাদন যদি এভাবেই কমতে থাকে তবে ব্রয়লারের দাম ২০০ টাকা ছাড়াবে ।
তেলের লিটার প্রতি দাম বেড়েছে চার টাকা । তবে বিক্রেতাদের মতে লিটার প্রতি চার টাকা ছাড়িয়ে লিটার প্রতি ১২-১৫ টাকা দরে বাড়বে ।
শুধুমাত্র সয়াবিন নয় বাড়বে সরিষার তেলের দাম । সয়াবিন তেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাড়ানো হবে সয়াবিন তেলের দাম । খোলা সয়াবিন লিটার ১৪০ টাকা ,পামওয়েল ১২২-২৩ টাকা ,ইনটেক সয়াবিন ১৭০ টাকা লিটার দরে পাওয়া যাচ্ছে । তবে দাম বৃদ্ধি পেলে
খোলা সয়াবিন ১৫৫ টাকা
পামওয়েল ১৩৭ টাকা
ইনটেক সয়াবিন ১৮৫ টাকা
দরে বিক্রয় হবে ।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অনেকটাই ক্ষুব্ধ সাধারণ এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্রেতাগন । কাওরান বাজারে বাজার করতে আসা দিনমজুর কলিমুল্লাহ বলেন । আগে আয় করতাম পাঁচশো টাকা এখন আয় ছয়শো টাকা হলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যেভাবে বাড়ছে আমাদের মতো দিনমজুরের পক্ষে সম্ভব হবে না প্রতিদিন দুইবেলা ভাত খাওয়া,না খেয়েই মরতে হবে ।
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের নাসির উদ্দিন বলেন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আমাদের দেশে নতুন কিছু না । কিন্তু এখন যেভাবে তেল ,আলু,পেয়াজ, ব্রয়লার মুরগি সহ সবজির দাম যেভাবে বাড়ছে এটা বলায় যাচ্ছে কোনো একটা সিন্ডিকেট পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আমাদের মতো মানুষের পকেট কাটতে থাকে । এদের উদ্দেশ্যই থাকে কোনো একটা পরিস্থিতি আসবে এবং তখন নিজেদের আখের গোছাবে ।
কিন্তু আমাদের বাজার ব্যবস্থায় আরেকটু মনিটরিং দরকার ছিলো যেইটা কখনোই আমাদের বাজার ব্যবস্থায় ছিলো না । এখন যদি আশা রাখি এই সিন্ডিকেট ভাঙবে বা মনিটরিং করবে এইটা একেবারেই ভুল ।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাসকে ফোন করা হলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন সবজি বাজার তো নির্ধারণ করা যায় না । তাই নতুন সবজি বাজারে আসলে দামের খানিকটা চড়াই উতরাই হতেই পারে ।
আলুর দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে বলেন নতুন আলুর দাম বাড়লেও বিকল্প হিসেবে পুরাতন আলু আছে । এখন সাধারণ মানুষ ভেবে দেখবে তারা বেশি দামের খাবে নাকি কম দামের । তেলের লিটার ১২-১৫ টাকা বৃদ্ধির বিষয়ে বলেন তেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেই আসলে এই দাম নির্ধারণ করা । তবে বাজারের থেকে বেশি দাম কেউ বিক্রয় করলে সেটা অবশ্যই বিবেচনা করা হবে । হুট করে তেলের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জনজীবন কতোটুকু সহনশীল হবে এ প্রশ্নে তিনি বলেন আগের থেকে আয় বেড়েছে সবার । সবদিক বিবেচনা করেই তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে ।
পরিশেষে,দ্রব্যমূল্যের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ভোগান্তিতে আছেন দেশের ৬০-৭০ শতাংশ মানুষ। যাদের বেশিরভাগই নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের ।