মানুষের আয় না বাড়লেও, জিনিসপত্রের দাম ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে। যার কারনে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে, সঞ্চয় কমেছে। কিন্তু এর মধ্যেও বাংলাদেশে বাড়ছে কোটিপতির সংখ্যা।
গত ৯ মাসে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৬৪০টি। এর মধ্যে ব্যক্তির পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক হিসাবও রয়েছে।
এক বছর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে কোটি টাকার এই হিসাব ছিল এক লাখ ছয় হাজার ৫২০টি। বছরের ব্যবধানে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে সাত হাজার ৬৬টি। তিন মাসে এ রকম হিসাব বেড়েছে ৩২টি।
প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ বিভিন্ন তহবিলের অর্থ রয়েছে প্রতিষ্ঠানের আমানত হিসাবে। আর ব্যক্তি আমানতকারীদের হিসাবে রয়েছে ব্যক্তিগত সঞ্চয়। এসব হিসাবে সুদসহ মুনাফা যোগ হওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে কোটিপতির সংখ্যা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
করোনা মহামারি ও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতেও। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ব্যাংকে টাকা জমানোতো দূরের কথা,সাধারণ মানুষদের এখন এক বেলা খেলে আরেক বেলার খাবার যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও দেশের ব্যাংকগুলোতে বেড়ে গেছে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত রিপোর্টের তথ্য বলছে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৬টি। আলোচ্য ৯ মাসে কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব বেড়েছে তিন হাজার ৬৪০টি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবদেন বলছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি। সেই হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে ৩২টি।
অন্যদিকে শীর্ষ পর্যায়ে ৫০ কোটি টাকার বেশি এমন সংখ্যা বেড়েছে তুলনামূলক কম। তবে এই হিসাবগুলোর মধ্যে ব্যক্তির সংখ্যা কত, সেই পরিসংখ্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে নেই।
তবে ব্যাংকাররা বলছেন, এখানে কোটিপতি ব্যক্তির সংখ্যার চেয়ে প্রতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্টই বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ৫০ কোটি টাকার বেশি জমা আছে এমন আমানতের হিসাব গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল এক হাজার ৭৬২টি, গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৭৮টি।
৪০ কোটি টাকার বেশি থেকে ৫০ কোটি টাকার কম এমন আমানতকারীর হিসাব গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৫৭৭টি। গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪৭টি।
একই সময়ের ব্যবধানে ২৫ কোটি টাকার বেশি থেকে ২০ কোটি টাকার কম এমন আমানতাকারীর হিসাব এক হাজার ১৪৩টি থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ২৭৪টি। ২০ কোটি টাকার কম থেকে ১৫ কোটি টাকার বেশি আমানতকারীর হিসাব ১ হাজার ৮৪৫টি থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৬৮টি।
১৫ কোটি টাকার কম থেকে ১০ কোটি টাকার বেশি এমন আমানতকারীর হিসাব তিন হাজার ৮৪৫টি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৭৪টি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮। এরপর ১৯৯০ সালে কোটিপতি হিসাবধারী হয় ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪টি।
২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এ রকম আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বেড়ে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই হিসাবের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬।