আ. হ. ম. মুস্তফা কামাল
অর্থমন্ত্রী
রাজস্ব আদায়ে উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে বলেন, আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৫৯ হাজার কোটি টাকা। সেটা এখন ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। সুতরাং যে লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে সেটাও আমরা পারবো।
আইএমএফ এর ঋণের শর্ত প্রসঙ্গে বলেন, আইএমএফ এর সাথে কাজ করার ভালো দিক হলো তারা শুধু অর্থই দেয় না। পাশাপাশি অনেক সমস্যা উত্তরণে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে। তবে তাদেরকে প্রাধান্য দিয়ে বাজেট করিনি আমরা। শুধু এটা জেনে রাখুন আইএমএফ এর ঋণ আমাদের মাত্র দেড় মাসের রেমিট্যান্সের সমান।
কালো টাকা ও অপ্রদর্শিত আয় প্রসঙ্গে, "গত অর্থবছর বাজেটে কালো টাকা ও অপ্রদর্শিত অর্থ নিয়ে সংসদে কথা বলেছিলাম। কারন আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম নির্দিষ্ট খাতে নির্দিষ্ট পরিমান কর দিয়ে কালো টাকা ও অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করে নেয়া যাবে।"
তিনি বলেন, "আপনারা জানেন, আপনারাই রিপোর্ট করেছেন, কেউ সে সুযোগ নেয়নি। যেহেতু কেউ আসেনি তাই আমরা মনে করছি কারো অপ্রদর্শিত অর্থ নেই।"
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমরা নিজেরাও শঙ্কিত। কিন্ত আমরা এটাও জানি যে এটি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। কারন চিহ্নিত করে তা সমাধানে চেষ্টা করে যাবো। কর ছাড় দিয়েও যদি সেটা হয় আমরা তাও করবো।
এবারে নির্বাচনী বাজেট দেয়া হলো কি না? -এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সকল বাজেটই নির্বাচনের লক্ষ্যে হয়। সরকারে যেই থাকুক। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাজেট করলে এটা অন্যায় নয়। নির্বাচন ও বাজেট দুটোই দেশের মানুষের জন্য। দেশের মানুষ দুটোরই ভাগ পায়।
আব্দুর রউফ তালুকদার
গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ এখনো পাঁচ মাসের আমদানীর ব্যয় নির্বাহ করার মতো আছে। শুধু ফাইনান্সিয়াল আ্যাকাউন্ট নেগেটিভ আছে। এটা পজিটিভ হয়ে যাবে। আগামী কয়েকমাসের মধ্যে আর্থিক খাতে স্হিতীশীলতা আসবে এবং রিজার্ভও বাড়বে।
তিনি বলেন, ব্যাংক কোম্পানী আইন সংশোধন, সিকিউরড ট্রানজেকশন আ্যাক্ট ও ইনসলভেন্সী আ্যক্ট এবার সংসদে চলতি অধিবেশনে পাশ হয়ে যাবে। এতে করে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এনপিএল বা খেলাপী ঋণের বেসরকারী অংশ ৫ শতাংশ ও সরকারী ব্যাংকের অংশ ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। এছাড়াও, বাসেল ৩ এর আওতায় ব্যাংকগুলোতে কমপ্লায়েন্স আনতে চেষ্টা করা হচ্ছে। এটিও বড় কাজ দিবে।গভর্নর বলেন, কয়েকটা ব্যাংক সমস্যাবর্ত ব্যাংক চিন্হিত করা হয়েছে। তিন বছর মেয়াদে তাদের আ্যাকশন প্লান দেয়া হয়েছে। ঐসব ব্যাংকে যে ক্ষয় (ইরোসন) হয়েছে তা ঠিক হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় সরকারের আর্থিক ও মূদ্রানীতি মিলিয়ে একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বলেছেন। আমরা ১৮ জুন মূদ্রানীতি দিবো। তাতে মাইক্রো ডিটেল আপনারা পাবেন। সেখানে থেকে স্পষ্ট হওয়া যাবে মূল্যস্ফীতি কিভাবে কমবে। সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে কোনও কৃচ্ছতা করা হবে না।
গভর্নর দাবী করেন, বাজেটে পুশ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে টাকা ছাপতে হবে না। আর ব্যাংকব্যবস্হা থেকে ঋণ নেয়ার কারনে বেসরকারী বিনিয়োগে টান পড়বে না ও মূল্যস্ফীতি বাড়বে না। কারন, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০ বিলিয়ন ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করে ২ লাখ কোটি টাকার বেশী জমা করেছে। সেখান থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা বাজেটে পুশ করলে মূল্যস্ফীতিতেও প্রভাব পড়বে না।
গভর্নর বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে মানি সাপ্লাই বা টাকার সরবরাহ আছে জিডিপি`র ৩৮ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি প্রভাবিত হবার কথা নয়। ভারতে এ হার বর্তমানে ৭৩ শতাংশের মতো।
শেয়ারবাজার প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, কিছু সমস্যা ছিলো তা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আলোচনা করে সমাধান করেছে। আরও পলিসি সাপোর্ট দেয়া হবে।
আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম
চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)
গরীব মানুষ বা আয় নেই এমন মানুষের জন্য টিআইএন নয় জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, টিআইন যাদের আছে তারা প্রয়োজেনই করেছে। বাধ্যতামূলক কর তালিকাটা নিন। দেখুন কারা আছে। তাহলে বিষয়টি পরিস্কার হবে।
করপোরেট কর প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিবছর করপোরেট কর কমানো হবে এমনটা প্রত্যাশা করা ঠিক না। ইতোপূর্বে দফায় দফায় কমিয়ে ৪৫ শতাংশ থেকে ২৭ শতাংশে আনা হয়েছে। সরকারের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় মেটাতে অর্থ দরকার হয়। সব কর কমালে সরকার চলবে কি করে?
তাজুল ইসলাম
স্হানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রী
সরকার বিগত তিন মেয়াদে ২ কোটি ৪৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে দাবী করে তাজুল ইসলাম বলেন, দেশে বর্তমানে কর্মে নিয়োজিত আছে ৭ কোটি ১১ লাখ। ক্ষমতায় আসার প্রথম বছরে এ সংখ্যা ছিলো ৪ কোটি ৭০ লাখ।
তিনি জানান, দেশে মোট কর্মক্ষম জনসংখ্যার ৩ দশমিক ২ শতাংশ বর্তমানে বেকার। বাংলাদেশের অবস্থা তুলনামূলক ভালো দাবী করে তিনি বলেন আমেরিকার মতো উন্নত দেশে এ হার ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
স্হানীয় সরকারমন্ত্রী দাবী করেন, গত ১৪ বছরে খাদ্যের জন্য দেশে কোনো হাহাকার হয়নি। আপনারাও খুঁজে পাননি। কারন আপনারা লিখেননি। ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতে পারে।
আইএমএফ এর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইএমএফ বাংলাদেশের ম্যাক্রো ইকোনোমিক অবস্থা পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে প্রশংসা করেছে।
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে বিশ্বব্যাপী জ্বালানী সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে নানা সংকট তৈরী হয়েছে। এমন পরিস্হিতিতে ভর্তূকি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে।
আব্দুর রাজ্জাক
কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ১৫ টাকা কেজি চাল বিতরন সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি করার প্রস্তাব আছে বাজেটে।
তিনি বলেন, এছাড়াও টিসিবি`র মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে নিত্যপন্য সরবরাহ কর্মসূচি চালু আছে। এটি অব্যাহত থাকবে। এরপরও যদি কোনও প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আসে তাহলে তা মোকাবেলায় অন্যত্র বাজেট কমিয়ে খাদ্যপন্য সরবরাহ করবে সরকার।
বাজেটোত্তর এ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্হিত ছিলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, অর্থবিভাগ, পরিকল্পনাবিভাগ ও ইকোনোমিক রিলেনস ডিভিশনের সিনিয়র সচিববৃন্দ।