বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি

চিনির দাম কেজিপ্রতি আরো ২৫ টাকা বাড়াতে চায় সুগার রিফাইনার্স সমিতি

এম মনিরুল আলম

জুন ২০, ২০২৩, ১২:৪৫ এএম

চিনির দাম কেজিপ্রতি আরো ২৫ টাকা বাড়াতে চায় সুগার রিফাইনার্স সমিতি

এবার ঈদ-উল-আযহা‍‍`র এক সপ্তাহ আগে চিনি আমদানীকারক ও রিফাইনার্সরা আবারো কেজি প্রতি দাম ২৫ টাকা বাড়াতে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে।

নতুন করে দাম বাড়ানো হলে কেজিপ্রতি খোলা চিনি ১৪৫ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম কেজিপ্রতি পড়বে ১৫০ টাকা।

প্রস্তাবিত এ দাম বৃহস্পতিবার (২২ জুন) থেকেই কার্যকর করতে চায় চিনির কারবারীরা।

বাজারে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের বেঁধে দেয়া দাম এমনিতেই মানছেনা খুচরা বিক্রেতারা। বর্তমানে বাজারে খোলা চিনি ১২০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা দরে নির্ধারিত থাকলেও বিক্রি হচ্ছে এর চেয়ে ১০-১৫ টাকা বেশী দরে।

দেশে চিনির সরবরাহ সংকট দেখিয়ে এর আগে গত মার্চে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়কে চিঠি দেয় চিনির আমদানীকারক ও রিফাইনার্স সমিতি। এর প্রেক্ষিতে গত ১০ মে বাণিজ্য মন্ত্রনালয় থেকে চিনির দাম কেজিপ্রতি খোলা ও প্যাকেটজাত যথাক্রমে ১২০ ও ১২৫ টাকা নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে। তবে এর প্রভাব বাজারে ছিলোনা। বাজারে চিনি কেজিপ্রতি ১৩০ টাকা থেকে ১৪৫ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচা হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ মে মাসে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী খোলা চিনি কেজি প্রতি ১২০ টাকা ও প্যাকেটজাত প্রতি কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

তিনি তখন সাংবাদিকদের বলেন, "চিনির জন্য বিদ্যমান শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ ৩১ মে শেষ হবে। বাজারে দাম ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে শুল্কছাড় অব্যাহত রাখার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কে আমরা চিঠি পাঠাবো।" বাণিজ্য সচিব সে সময় আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম ও দেশে ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় চিনির আমদানি ও সরবরাহ কমেছে।

ইতোমধ্যে সরকার তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিনি ক্রয়ের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। বলা হয়, সরকার চিনি কিনে এনে টিসিবি (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) এর মাধ্যমে বিক্রি করে সরবরাহ বাড়িয়ে চাহিদা পূরণ করবে। এর ফলে বাজারমূল্যে প্রভাব পড়বে এবং দাম কমবে। কিন্ত এ চিনি ক্রয়ের অগ্রগতি সরকারের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রনালয় প্রকাশ করেনি।

শুল্কছাড়ে এনবিআর কে চিঠি দেয়া ও ক্রয়কৃত চিনি আমদানীর সর্বশেষ পরিস্হিতি জানতে সোমবার (১৯ জুন) বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও সচিব তপন কান্তি ঘোষ এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

এদিকে, নিত্যপণ্যমূল্যের বাজার দর নির্ধারণে সরকারের বিশেষ স্বায়ত্বশাসিত সংস্হা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন গত মে মাসে চিনির নতুন দাম নির্ধারণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রেরিত প্রস্তাবে আগের নির্ধারিত দাম কেজিপ্রতি ১০৪ টাকা থেকে ১৬ টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনির দাম ১২০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ১০৯ টাকা থেকে একই পরিমান বাড়িয়ে ১২৫ টাকা করার কথা বলে।

কমিশন জানায়, এক কেজি পরিশোধিত খোলা চিনির প্রস্তাবিত মিলগেট মূল্য ১১৫ টাকা ও পরিবেশক মূল্য হবে ১১৭ টাকা। পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির মিলগেট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১১৯ টাকা আর পরিবেশক পর্যায়ে যার দাম হবে কেজিতে ১২১ টাকা।

কমিশন আন্তর্জাতিক বাজারদরের রেফারেন্স দিয়ে জানায়, ২০২২ সালের মে মাসের শুরুতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি বেচাকেনা হয়েছে ৪২০ ডলারে। চলতি মাসের শুরুতে অপরিশোধিত সেই চিনির দাম ১৬০ ডলার বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫৮০ ডলার।

কমিশন জানায়, ইতোমধ্যে বৈদেশিক মূদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনও হয়েছে। গেলো বছর ১ ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ৯০ টাকা। এবার প্রতি ডলার বিনিময় হার ১১০ থেকে ১১১ টাকা পর্যন্ত পৌছেছে।

সরকার গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাজারে চিনির দাম নির্ধারণ করে দিতে শুরু করে। এর মধ্যে পাঁচ দফায় চিনির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও একবারও সরকারি মূল্য কার্যকর হয়নি।

সবশেষে সরকার গত ৬ এপ্রিল প্রতি কেজি চিনির দাম তিন টাকা কমায়। এতে সরকার ঘোষিত পরিশোধিত খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল কেজিতে ১০৪ টাকা আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির দাম প্রতি কেজি ১০৯ টাকা।

সরকার নির্ধারিত এ দামের কোনও প্রভাব খুচরা বাজারে  চিনির দরে পাওয়া যায়নি। এ পরিস্হিতিতে আবারো চিনির দর বাড়াতে তোড়জোড় করছে চিনি ব্যবসায়ীরা।

Link copied!