পুঁজিবাজার থেকে বিদেশী শেয়ার বিক্রির হিড়িক

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ৩, ২০২১, ০৫:২৫ এএম

পুঁজিবাজার থেকে বিদেশী শেয়ার বিক্রির হিড়িক

করোনায় অন্যান্য আর্থিক খাতে মন্দাভাব থাকলেও উল্টো পরিস্থিতি পুঁজিবাজারে। একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলছিল দেশের পুঁজিবাজার সম্ভাবনাময় বাজারে প্রবাসী ও বিদেশিদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একের পর এক রোড শো করছে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু এই রোড শোর পরপরই বিদেশি বিনিয়োগ বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিচ্ছে।

স্বাভাবিক প্রক্রিয়া দাবি সংশ্লিষ্টদের

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুলাই ও আগস্ট মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করেছেন দ্বিগুণ। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে প্রায় ৪শ কোটি টাকার নিট বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে ঢাকা স্টক ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে পাঠানো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচার চিত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে। বিএসইসি সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।

অথচ এই সময়ে নতুন করে বিনিয়োগ না করে, উল্টো পুঁজিবাজারে থাকা বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিনিয়োগ করে মুনাফা পেলে তা তুলে নেওয়াই তো পুঁজিবাজারের নিয়ম।

রোড শো করে নতুন বিনিয়োগ আসেনি

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোড শো কেন্দ্র করে নতুন করে দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আসেনি। বরং বাজারে ভালো বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানি না থাকায় শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিচ্ছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। তবে শেয়ার বিক্রি করলেও তারা পুঁজিবাজার ছাড়ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএস) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, প্রবাসী ‍কিংবা বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে ভালো শেয়ার দেখে বিনিয়োগ করেন। তারা বিনিয়োগের আগে শেয়ারগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করেন, যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে কম দামে পেলে কেনেন। বেশি দাম হলে বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেন। এটাই তো পুঁজিবাজারের নিয়ম।

তিনি বলেন, আগে শেয়ারের দাম কম ছিল তারা কিনেছেন, এখন দাম বেশি তারা বিক্রি করছেন। তারা তো লাভের আশায় বাজারে এসেছেন, তাই না।

মোট বিদেশি শেয়ারের পরিমাণ

বিএইসির তথ্য মতে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে ডিএসইতে প্রবাসী ও বিদেশিদের শেয়ার কেনাবেচা বাবদ লেনদেন হয়েছে প্রায় ৮শ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডিএসইতে শুধু আগস্ট মাসে ৫১১ কোটি ৬৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে। আর জুলাই মাসে ২৭৮ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচার করেন তারা। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রামে জুলাই ও আগস্ট মাসে মোট ৫০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।

বিএসইর তথ্য চিত্রে দেখা যায়, জুলাই মাসে বিদেশিদের ২৭৮ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মধ্যে ৫১ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার কিনেছেন। তার বিপরীতে শেয়ার বিক্রি করেছেন ২২৭ কোটি ৪০ লাখ টাকার। অর্থাৎ শেয়ার কেনার চেয়ে সাড়ে চারগুণ বেশি বিক্রি করেছেন। তাতে নিট বিনিয়োগ কমেছে ১৭৬ কোটি ২০ লাখ টাকা।

তারপরের মাস আগস্টে শেয়ার বিক্রি বেড়েছে দ্বিগুণ। গত মাসে প্রবাসীরা ৫১১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেছেন। এর মধ্যে ১৫৩ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার কিনেছেন। তার বিপরীতে বিক্রি করেছেন ৩৫৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার। অর্থাৎ নিট বিনিয়োগ কমেছে ২০৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

প্রায় ৭০ টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে

বিএসইসির তথ্য মতে, পুঁজিবাজারে বর্তমানে বিদেশিদের ৬০-৭০ কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি কোম্পানিতেই গত দুই মাসে বিনিয়োগ কমেছে। অর্থাৎ এই ৪০ কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করেছেন তারা। সবচেয়ে বেশি শেয়ার বিক্রি করেছেন ওষুধ ও রসায়ন খাতের শেয়ার।

শেয়ার বিক্রি করলেও বিদেশিরা পুঁজিবাজার ছাড়ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ২০২০ সাল থেকে বিদেশিরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছেন। এখন পুঁজিবাজারে অনেক নতুন নতুন পণ্য এসেছে। বাজারের গভীরতা বেড়েছে। বাজারও চাঙ্গা হয়েছে। ফলে বাজার ছাড়ার কোনো কারণ নেই। তারা এখন মুভমেন্ট করছেন।

করোনায় ঘুরে দাড়িয়েছে পুঁজিবাজার

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে মহাধসের এক যুগ পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। ২০২০ সালের প্রথম দিক থেকে অর্থাৎ দেড় বছর ধরে দেশের পুঁজিবাজার পরিচালনা করছেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের কমিশন। তার হাত ধরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন হচ্ছে পুঁজিবাজারে। এই সময়ে লেনদেন ৩শ কোটি টাকার কোটা থেকে ৩ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। সূচক সাড়ে ৩ হাজার পয়েন্ট থেকে দ্বিগুণ বেড়ে ৭ হাজার ৩শ পয়েন্ট অতিক্রম করেছে। প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। আর তাতে ডিএসইর বাজার মূলধন ৩ লাখ কোটি টাকা থেকে ৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।

Link copied!