বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের প্রশংসা করে বিখ্যাত মার্কিন অনলাইন সংবাদপত্র পলিসি ওয়াচার বলেছে, অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেস স্টাডিতে পরিণত হয়েছে।
অনলাইন পত্রিকাটির ২২ জুলাই সংখ্যায় প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি কি সত্যিই দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে?’ শিরোনামের এক নিবন্ধে বলা হয়, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৫০ বছরে ২৭১ গুণ বেড়েছে।
পলিসি ওয়াচারের সম্পাদকীয় বাছাই বিভাগে নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধের লেখক সুইজারল্যান্ডের লুসার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক ড. এমিলিয়া ফার্নান্দেজ। তিনি দক্ষিণ এশীয় ভূরাজনীতি বিশেষজ্ঞ এবং নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
নিবন্ধে এমিলিয়া ফার্নান্দেজ বলেন, অনেক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেস স্টাডিতে পরিণত হয়েছে, যা খুব কম অর্থনীতিবিদই ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছিলেন।
তিনি লিখেছেন, ২০০৬ সালে বাংলাদেশ যখন জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যায়, তখন অনেকেই এটিকে আকস্মিক সৌভাগ্য বলে উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে, বাংলাদেশ প্রতি বছর পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে এবং বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সফল যাত্রা একটি ভালো উদাহরণ এবং মাত্র দুই দশকে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে এবং গত ২০ বছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ৫০০ শতাংশ বেড়েছে, যা পাকিস্তানের আড়াই গুণ।
নিবন্ধে বলা হয়, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক রক্ষণশীল থিংক ট্যাংক দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালে ৫৬.৫ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ১২০তম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের সমান স্কোর নিয়ে ভারত ১২১তম অবস্থানে এবং পাকিস্তানের অবস্থান ১৫২তম।
এমিলিয়া ফার্নান্দেজ বলেন, বৈশ্বিক শান্তি সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থিত একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি) প্রকাশিত সর্বশেষ গ্লোবাল পিস ইনডেক্সে (জিপিআই) দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭২ সালে এবং সে সময় প্রতিটি অর্থনৈতিক সূচকে ভারত ও পাকিস্তান এগিয়ে ছিল। আজ ৫০ বছর পর প্রায় প্রতিটি সূচকে ভারত ও পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে। এটাই স্বাধীনতার মহান অর্জন।
নিবন্ধে বলা হয়, ‘যেকোনো দেশের উন্নয়নে মানবসম্পদকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাই বাংলাদেশ শুধু পাকিস্তান নয়, অনেক ক্ষেত্রে ভারতের চেয়েও এগিয়ে আছে।’
নিবন্ধকার বলেন, নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হ্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। কয়েকটি দেশ ছাড়া বিশ্বের সব দেশ বৈশ্বিক মন্দায় কঠিন সময়ের মুখোমুখি হচ্ছে এবং বাংলাদেশেও এই চাপ প্রবলভাবে অনুভূত হচ্ছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল একেবারে তলানিতে এবং অযোগ্য ওয়ান-ইলেভেনের কল্যাণে অর্থনীতি ছিল ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু সেই থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস এগিয়ে যাচ্ছে। এমনকি এই মহামন্দার সময়েও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বের সবচেয়েও ধনী ও সেরা অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিবেচিত দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের বলিষ্ঠ পদক্ষেপে বিশ্ব তোলপাড় শুরু করেছে।
এমিলিয়া ফার্নান্দেজ বলেন, কীভাবে এই দেশকে থামানো যায়, তা নিয়ে বিশ্বনেতাদের কারসাজি শুরু হয়েছে। তবে বাংলাদেশকে যে হারানো যাবে না, তা গোল্ডম্যান শ্যাক্স রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০৭৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ১৬তম অর্থনীতির দেশ।
তিনি বলেন, পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৭৫ সালে বাংলাদেশের জিডিপি হবে ৬ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় জিডিপি হবে ৬৮৬.৭ লাখ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরে সরকারের আনুমানিক জিডিপির চেয়ে ৬৩৬ লাখ কোটি টাকা বেশি।
একটি দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, শ্রমশক্তি ও বিশাল প্রতিভা পুলের জন্য প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার সম্ভাবনা দ্বারা অর্থনীতির পূর্বাভাস দেওয়া হয়। গোল্ডম্যান শ্যাক্সের জিডিপি আউটলুক ২০৭৫ উদীয়মান অর্থনীতিকে প্রতিশ্রুতিশীল বলে। বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা মন্থর হলেও অর্থনীতি আবার চাঙা হচ্ছে।
এমিলিয়া ফার্নান্দেজ লিখেছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৭৫ সালে বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি সৌদি আরব, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ইতালি, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়াকে ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্ব অবাক হয়ে বাংলাদেশের দিকে তাকাবে।
বাসস থেকে নেয়া