জুন ১৩, ২০২৩, ০৬:০০ পিএম
বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের এই সময়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)-এর কাছ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আমদানির বিল মেটাতে ও দেশের ব্যবসা পরিস্থিতিতে স্থিরতা আনতে এই বাজেট সহায়তা প্রভাব ফেলবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, এডিবি এবং চীনের নেতৃত্বাধীন এআইআইবি উভয়েই এই আর্থিক সহায়তায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার করে অবদান রাখবে।
এই দুই সংস্থার ছাড়াও, চলতি মাসে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সাথে ইয়েনে প্রায় ২৩০ মিলিয়নের আরও একটি বাজেট সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।
জাইকার সাথে আগামী সপ্তাহেই চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ইআরডি কর্মকর্তারা।
এডিবির নেতৃত্বে এই বাজেট সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ফলে এডিবির সাথে চুক্তির হওয়ার পর দিনই এআইআইবির সাথে আরও ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান ইআরডির কর্মকর্তারা।
সাধারণত ঋণ চুক্তির পর পরই বাজেট সহায়তার অর্থ ছাড় হয়ে যায়। ফলে আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই ৮০০ মিলিয়ন ডলার অর্থছাড় হবে।
এই দুই সংস্থার কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে বাজার ভিত্তিক সুদ হারে। ফলে একটু উচ্চ সুদে এই ঋণ নিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ২৯.৭৮ বিলিয়ন ডলার। সুদহার বেশি হলেও ডলার সংকটের কারণে বর্তমানে দেশে বাজেট সহায়তা প্রয়োজন।
আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড় করতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে আগামী জুনের শেষে ২৪.৪৬ বিলিয়ন ডলার থাকতে হবে। এছাড়া, সেপ্টেম্বরে থাকতে হবে ২৫.৩২ বিলিয়ন ডলার।
আগামী ডিসেম্বরে আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড় হবে। এ কারণে এডিবি ও এআইআইবির এই বাজেট সহায়তা রিজার্ভ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, বর্তমানে দ্য সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিয়াল রেট (এসওএফআর) ৫ শতাংশের ওপরে। এডিবির বাজেট সহায়তার সুদহার হবে এসওএফআর +০.৫ শতাংশ এবং এরসঙ্গে কমিমেন্ট ফি থাকবে ০.১৫ শতাংশ। ৩ বছরের বছরের গ্রেস পিরিয়ড সুবিধাসহ এই ঋণ ১৫ বছরে শোধ করতে হবে।
অন্যদিকে, এআইআইবির ঋণের সুদহার এসওএফআর`র সঙ্গে পরিবর্তনশীল বিষয়গুলোর (ভেরিয়েবল স্প্রেড) ওপর ভিত্তি করে গণনা করা হবে। এছাড়া, কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে ০.২৫ শতাংশ এবং ফ্রন্ট এন্ড ফি ০.২৫ শতাংশ। ৩ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ২৬ বছর।
চলতি অর্থবছরে এডিবি ও জাইকার কাছ থেকে প্রথমবারের মতো বাজেট সহায়তা পেলেও এর আগেও ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা দিয়েছে এআইআইবি।
এছাড়া, গত এপ্রিলে বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেয় বিশ্বব্যাংক। এরমধ্যে ৩২৪ মিলিয়ন ডলার ছিল সুদ ও চার্জ মুক্ত ঋণ। ৬ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১২ বছরে এই ঋণ শোধ করতে হবে। বাকি ১৭৬ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তার সুদ হার ১.২৫ শতাংশ, সার্ভিস চার্জ ০.৭৫ শতাংশ এবং কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে ০.৫০ শতাংশ হারে।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে কোভিড-১৯ এর টিকা কেনার অর্থসহ বাজেট সহায়তা পেয়েছিল ৩ বিলিয়ন ডলার। এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট সহায়তা ছিল ১.০৯ বিলিয়ন ডলার।