সনাতন পদ্ধতির সোনা-রূপার অলংকার তৈরি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে জুয়েলার্স সমিতি

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

জুলাই ২১, ২০২৩, ০১:৪৭ এএম

সনাতন পদ্ধতির সোনা-রূপার অলংকার তৈরি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে জুয়েলার্স সমিতি

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) দেশব্যাপী ৪০ হাজার সদস্যের (জুয়েলারী ব্যবসায়ী ও প্রস্তুতকারক) জন্য সনাতন পদ্ধতির সোনা ও রুপার অলংকার তৈরি ও বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।  

তবে, সনাতন পদ্ধতির সোনা-রুপার অলংকার শুধু ক্রেতাদের কাছ থেকে কিনতে পারবে বাজুস অন্তর্ভুক্ত  জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান।

আর এখন থেকে বাজুস সদস্যরা ক্যাডমিয়াম পদ্ধতিতে শুধু ১৮, ২১, ২২ ও ২৪ ক্যারেটে অলংকার তৈরি ও বিক্রি করতে পারবে।

বাজুস বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) এ সম্পর্কিত বিধিনিষেধসহ "অলংকার ক্রয় ও বিপনন নির্দেশিকা-২০২৩" এর চুড়ান্ত ঘোষনাপত্র প্রকাশ করেছে।

এ নির্দপশিকায় বলা হয়, অলংকারের ক্ষেত্রে হল-মার্ক করা বাধ্যতামূলক। এই হল-মার্কে অলংকারে ব্যবহৃত সোনার গুণগত মান সম্পর্কে তথ্য থাকবে এবং তা লেজার মেশিন দিয়ে অলংকারের গায়ে খোদাই করে লেখা হবে।

অলংকার বিতান এর মালিক ও বাজুস এর স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং এন্ড প্রাইস মনিটরিং এর চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ দি রিপোর্ট ডট লাইভ কে বলেন, সনাতন পদ্ধতির সোনা রূপার অলংকার এ গুনগত মান ঠিক থাকেনা বিধায় গ্রাহক ও ব্যবসায়ী দু‍‍`পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া অলংকারের মান নিশ্চিত করতে একটি সুনিদ্দিষ্ট ব্যবস্হাপনা আনতে এ নির্দেশিকা জারী করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারকে তারা দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যাপারে দাবী জানিয়ে আসছিলেন।

নতুন এ নির্দেশিকা অনুযায়ী, বাজুস সদস্যরা গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সোনার অলংকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বর্তমান ওজন থেকে ১০ শতাংশ বাদ দিয়ে নতুন অলংকারের দামের সঙ্গে সমন্বয় করবে।

আর গ্রাহকের কাছ থেকে পুরোনো অলংকার কেনার ক্ষেত্রে অলংকারের বর্তমান ওজন থেকে ২০ শতাংশ বাদ দিয়ে জুয়েলার্স প্রতিষ্ঠান বাজারমূল্যে দাম পরিশোধ করবে। এ ছাড়া সোনার অলংকার বিক্রির সময় ক্রেতার কাছ থেকে প্রতি গ্রামে কমপক্ষে ৩০০ টাকা মজুরি নিতে হবে।

নির্দেশিকায় বলা হয়, কোনো প্রতিষ্ঠান এই সিদ্ধান্ত অমান্য করলে প্রথমবার কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। দ্বিতীয়বার এই নির্দেশনা ভঙ্গ করলে সদস্যপদ কেন বাতিল করা হবে না এই মর্মে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেবে সমিতি। জবাব সন্তোষজনক না হলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি।

এছাড়া, জুয়েলার্স সমিতির সদস্য প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কেন্দ্রে বাধ্যতামূলকভাবে বাজুসের স্টিকার ও হালনাগাদ সনদ দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে।

বাজুস ঢাকা মহানগরের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্টিকার, সনদ ও পরিচয়পত্র সরবরাহের জন্য ৫ হাজার টাকা ফি আদায় করবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ জন্য ফি দিতে হবে দেড় হাজার টাকা। এ ছাড়া সমিতির সদস্যপদ পেতে ঢাকা মহানগরের জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১০ হাজার টাকা এবং অন্য এলাকার জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার টাকা।

অলংকার বেচাকেনার নিয়ম পুরোনো সোনার অলংকার কেনার ক্ষেত্রে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান অবশ্যই বিক্রেতাকে রসিদ প্রদান করবে। সেই রসিদে বিক্রেতার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র উল্লেখ থাকতে হবে। এ ছাড়া বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংরক্ষণ করতে হবে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানকে। মূল মালিক ছাড়া কোনো প্রতিনিধির কাছ থেকে পুরোনো অলংকার কেনা যাবে না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক জারীকৃত ব্যাগজ রুলসের আওতায় আনা সোনা ও অলংকার কেনার ক্ষেত্রে বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিতে হবে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানকে। বিমানবন্দরে ব্যাগজ রুলসের আওতায় আনা সোনা ও অলংকারের বিপরীতে পরিশোধ করা কর প্রদানের মূল সনদ সংরক্ষণ করতে হবে। অবশ্যই প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে সোনা কিনতে হবে।

রুপার অলংকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বর্তমান ওজন থেকে ৩০ শতাংশ বাদ দিয়ে নতুন অলংকারের দামের সঙ্গে সমন্বয় করবে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান। আর গ্রাহকের কাছ থেকে পুরোনো অলংকার কেনার সময় অলংকারের বর্তমান ওজন থেকে ৪০ শতাংশ বাদ দিয়ে জুয়েলার্স প্রতিষ্ঠান বাজারমূল্যে দাম পরিশোধ করবে। অন্যদিকে রুপার নতুন অলংকার বিক্রির সময় ক্রেতার কাছ থেকে প্রতি গ্রামে ২৬ টাকা মজুরি নিতে হবে।

জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে সোনা-রূপার অলংকারের সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই ইমিটেশন, মেটাল বা গোল্ড প্লেট করা অলংকার প্রদর্শন করতে পারবে না। এসব অলংকার আলাদাভাবে প্রদর্শন করতে হবে। কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের কাছে ইমিটেশন, মেটাল বা গোল্ড প্লেট করা অলংকার রুপার অলংকার হিসেবে বিক্রি করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিলসহ প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডায়মন্ড বা হীরার অলংকার বিক্রিতে একেক প্রতিষ্ঠান একেক রকম মূল্যছাড় দেয়। নতুন নির্দেশনায় বলা হয়, ডায়মন্ডের অলংকারে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ মূল্যছাড় দেওয়া যাবে। যদি কোনো জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান এই নিয়ম অমান্য করে, তাহলে ৫ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে।ডায়মন্ডের অলংকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ এবং ক্রেতার কাছ থেকে পুরোনো ডায়মন্ডের অলংকার কেনার সময় বর্তমান ওজন থেকে ২৫ শতাংশ বাদ দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করবে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান। ৫০ সেন্টের ওপর সব ডায়মন্ডের অলংকারের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক সনদ দিতে হবে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে। এ ছাড়া ডায়মন্ডের অলংকার বিক্রির ক্যাশ মেমোতে ডায়মন্ডের রং, ক্যারেট ইত্যাদি উল্লেখ থাকতে হবে।

Link copied!