জুলাই ১, ২০২৪, ০৫:১৯ পিএম
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদ ও কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রাবেয়া মুহিবের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমান, স্টুডেন্টস রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব ও পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মারুফ।
আরও পড়ুন: পেনশনে আমলাদের চেয়ে যে ৪ সুবিধা কমেছে শিক্ষকদের
বক্তাদের ভাষ্য, ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বড় ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল। সেই আন্দোলনের জেরে এক পরিপত্রের মাধ্যমে কোটা ব্যবস্থাই বাতিল করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটার অংশটি বাতিল করেন উচ্চ আদালত। এরপর থেকে আবারও আন্দোলন শুরু হয়েছে। এবার তাদের আন্দোলন একেবারেই কোটা বাতিলের দাবিতে নয়। তারা চান সরকারি চাকরিতে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কোটা থাকুক। এছাড়া কোটা সুবিধা ভোগকারী কেউ যেন জীবনে শুধু একটি ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা নিতে পারেন সেই দাবিও জানান তারা।
এর আগে গতকাল রোববার এবং গত ৬ জুন কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে একই কর্মসূচি পালন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এর মধ্যে ছিল- ‘মেধাবীদের কান্না আর না আর না’, ‘কোটা বৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘কোটা প্রথায় নিয়োগ পেলে দুর্নীতি বাড়ে প্রশাসনে’, ‘মেধাবীদের যাচাই করো কোটা পদ্ধতি বাতিল করো’, ‘১৮’র হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান, কোটার হোক অবসান’, ‘কোটা বৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’ প্রভৃতি। মানববন্ধন শেষে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
আমানুল্লাহ আমান বলেন, “কোটা সম্পূর্ণ বাতিল হোক, সেটি আমাদের দাবি নয়। এদেশের স্বাধীনতায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অতুলনীয়। তবে তাই বলে তাদের জন্য বৃহৎ পরিমাণ কোটা রাখার কোনো মানে হয় না। একজন কোটাধারী একাধিকবার কোটা সুবিধা ভোগ করায় কোটাবিহীন শিক্ষার্থীরা সর্বক্ষেত্রেই তাঁদের থেকে পিছিয়ে থাকে। আমরা কোটা বাতিল চাই না, কোটা পদ্ধতির সংস্কার চাই। চাকরিতে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হোক। সেই সঙ্গে কোটা সুবিধা ভোগকারী কেউ যেন জীবনে যেকোনও একটি ক্ষেত্রে কোটার সুবিধা নিতে পারেন।”
মেহেদী সজীব বলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে এসেও সাম্য প্রতিষ্ঠা হয়নি। আমাদের দেশে একজন কোটাধারী শিক্ষার্থী তাঁর জীবদ্দশায় একাধিকবার কোটার সুবিধা পান। এই পদ্ধতি বাতিল করতে হবে।”
গত ৫ জুন সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (নবম-১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত। ওই দিন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। এ-অবস্থায় আদালতের ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদনটির ওপর শুনানির জন্য ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।