মহামারি করোনার কারণে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে স্কুলে যেতে পারেনি শিশুশিক্ষার্থী রুবাইয়াত মাইশা। শিক্ষা থেমে থাকলেও শরীর থেমে থাকেনি। গায়েগতরে বড় হয়ে গেছে সে। এ কারণে স্কুলড্রেস, জুতা ছোট হয়ে গেছে। ওদিকে খাতা-কলম, কালার পেন্সিলের বক্সগুলোও লাপাত্তা। এ অবস্থায় সরকার স্কুল খোলার ঘোষণা দেওয়ায় মাইশা তার বাবার সাথে বের হয়েছে শিক্ষা উপরকরণগুলো কিনতে।
তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী রুবাইয়াত মাইশাই শুধু নয়, রাজধানীসহ সারাদেশের সব শিশুশিক্ষার্থীদেরই একই দশা। অনেকদিন পর স্কুলে যাওয়ার খবর পেয়ে মহাখুশি এই শিশুরা। স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত জানার পর অনেক অভিভাবক নিজেদের সন্তান এবং ছোট ভাই-বোনদের নিয়ে যাচ্ছেন স্টেশনারি দোকানে। কিনছেন প্রয়োজনীয় শিক্ষা সামগ্রী।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস পর আবার আলোর মুখ দেখছে শিক্ষার্থীরা। আলোর মুখ দেখছেন স্টেশনারি ব্যবসায়ীরাও। স্কুল খোলার ঘোষণা আসার পর থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ কিনতে স্টেশনারি দোকানে ভিড় করছেন শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা।
গত বছরের মার্চে বন্ধ ঘোষণার পর গত ৫ সেপ্টেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক মিটিং শেষে শিক্ষামন্ত্রী ড. দিপুমনি জানান, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল খুলবে। শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা,সামাজিক দূরত্ব মানা এবং মাস্ক ব্যবহারসহ বিভিন্ন শর্তে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে স্কুল বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল শিক্ষা উপকরণ বিক্রির স্টেশনারি দোকানগুলোও। দীর্ঘ সময়ের পর স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাননির্ভর এসব দোকানীরাও এখন বেজায় খুশি।
ভিকারুননিসা স্কুলের সামনে স্টেশনারি এবং বইয়ের দোকান 'থিয়েটার কর্ণারে'র স্বত্বাধিকারী চন্দন রেজা দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানান, স্কুল খুলে দেয়ার ফলে বেচা বিক্রি বেড়েছে। কিন্তু তার চেয়ে বড় বিষয় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা হচ্ছে। আশারাখি করোনার ভয় কাটিয়ে আমরা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো। তবে আমাদের সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে।
এমনই এক দোকানি রেজা। করোনা সংক্রমণের কারণে শিক্ষা উপকরণের দামের উপর কোন প্রভাব ফেলছে কিনা—জানতে চাইলে জনাব রেজা বলেন, এখনও আমরা আমাদের স্টকের সামগ্রীই বিক্রি করছি। আমাদের কলমের ব্যবসা খুব ভাল পর্যায়ে আছে। তবে চীন থেকে যেসকল কাঁচামাল আমাদের দেশে আসে এখনতো সব বন্ধ। পরিস্থিতি যা বলছে কিছুদিন পর এই সামগ্রীর দাম বাড়তে পারে।
বেইলি রোডের স্টেশনারি ব্যবসায়ী 'বই বিতান' এবং ‘বই বিচিত্রায়’ গিয়ে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের ভিড় সেখানে। বই বিতানের মোঃ আব্দুল কুদ্দুস দ্য রিপোর্টকে জানান, করোনার কারণে বিক্রি ৭০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু এখন খুব ভাল লাগছে স্কুল কলেজ খুলে দেওয়াতে। আজকে অনেকদিন পর প্রায় ত্রিশ হাজার টাকার বেচা বিক্রি করেছি। কয়েকদিন ধরেই কাস্টমাররা আসছে।
বেলি রোড সংলগ্ন বই এবং স্টেশনারি দোকান বই বিচিত্রা। করোনার সময়ে ব্যবসা প্রায় বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছিল উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী দ্য রিপোর্টকে বলেন, স্কুল খুলে দেওয়াতে আমরা আনন্দিত। অনেক শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়ে যাবে যদিও। কিছু কাঁচামাল বিদেশ থেকে কিনতে হয়, যার সাপ্লাই অনেকদিন ধরে বন্ধ।
এদিকে ব্যবসায়ীরাও বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে আগে থেকে এসব পণ্য স্টক করে রাখেনি। চাহিদা আর সাপ্লাইজনিত কারণে দামের উপর বিশাল প্রভাব পরতে পারে বলেও বই বিচিত্রার মালিক জানালেন।