আড়াই লাখ একর বনভূমি উজাড় করে হোটেল-রিসোর্ট

গোলাম রাব্বানী

এপ্রিল ২৩, ২০২৪, ০৫:১১ পিএম

আড়াই লাখ একর বনভূমি উজাড় করে হোটেল-রিসোর্ট

ছবি: সংগৃহীত

গত কয়েক বছর ধরেই তীব্র তাপদাহের ফলে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি নিতে উদ্যোগ দেখা যায়। কিন্তু গাছ লাগানোর চেয়ে বেশি হারে বনভূমি দখল করা হচ্ছে। এই এই দখলকৃত বনভূমি মূলত হোটেল-রিসোর্ট প্রস্তুত করা হচ্ছে। বর্তমানে ২ লাখ ৫৭ হাজার একর বনভূমি দখল করা অবস্থায় আছে। যেগুলো ১ লাখ ৬০ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দখলকৃত।

দখলের পরিমাণ আরও বেশি
৫ লাখ গাছ থাকা একটি বনভূমির আয়তন হবে মাত্র ১৮৫ একর। অর্থাৎ প্রতিবছরে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচিতে যে পরিমাণ গাছ লাগানো হয়ে থাকে সেগুলো বৃক্ষ নিধনের তুলনায় সামঞ্জস্য রাখতে পারছে না।

বন বিভাগের পরিসংখ্যান অনুসারে বর্তমানে ২ লাখ ৫৭ হাজার একর বনভূমি দখলকৃত অবস্থায় রয়েছে। একক জেলা হিসেবে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি কক্সবাজারে। এই জেলায় মোট দখল হওয়া জমির পরিমাণ ৫৯ হাজার ৪৭১ একর।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, এক লাখ ৬০ হাজার একর বনভূমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশনও রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে দেওয়া হয়েছে ৪৩ হাজার ৯৫ একর জমি। এছাড়া অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে ২৩ হাজার ২২১ একর বনভূমি।

তবে বাস্তবিক দখল আরও বেশি বলে ধারণা করছেন পরিবেশবিদরা। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং প্রতিষ্ঠানটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘গাছ টাকার হার অনেক বেশি। অনেক সময় দেখা যায় ডালপালা কাটার টেন্ডার নেয়ার বিপরীতে গাছই কেটে ফেলা হচ্ছে। এ দিকে আমরা বেশি নজর দিইনি।’

বর্তমানে গরমের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ফ্যাক্টর একসঙ্গে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘গাছ কাটার পাশাপাশি জলাশয় ভরাট করে ফেলছি। কাঁচা রাস্তায় টাইলস বসিয়ে ঘাসগুলো মেরে ফেলছি। সেই সঙ্গে এসির অত্যাধিক ব্যবহার,গ্লাস বিল্ডিংয়ের ফলে তাপের পরিমাণ বাড়ছে। এজন্য গাছ ও বনায়ন ধ্বংসের উৎসগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো রক্ষা করতে হবে।’

দখলকৃত বনভূমির উদ্ধারের গতি কম
বর্তমানে দেশের মোট আয়তনের ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ এলাকায় বনভূমি রয়েছে। বন অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রিত বনভূমির পরিমাণ ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। দেশের বনভূমির পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে জবরদখল করা বনভূমি উদ্ধারে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বনভূমি জবরদখলের বিপরীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৮ হাজার ২০০ একর জবরদখল করা বনভূমি পুনরুদ্ধার করে বনায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বনভূমি দলকৃত ব্যক্তিদের তালিকাও করা হয়েছে। সেই তালিকা ধরে ধরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বন অধিদপ্তরের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, ‘দখলকৃত বনভূমি উদ্ধারে ৬ হাজারের বেশি মামলা চলমান রয়েছে। বন অধিদপ্তর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৬ হাজার ৪৭৪ দশমিক ৭ একর জবরদখল করা বনভূমি পুনরুদ্ধার করে বনায়ন করে হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনে পাঠানো উচ্ছেদ প্রস্তাব ৭ হাজার ৩৭৬টি, জেলা প্রশাসনের রুজু করা উচ্ছেদ মামলা ১৩, নিম্ন আদালতে দেওয়ানি মামলা ৮৫২, উচ্চ আদালতে রিট মামলা ১২২, আপিল বা মিস মামলা ৮৭, পিওআর মামলা ৭ হাজার ৫৩২ ও অন্যান্য ব্যবস্থায় ৬ হাজার ১৩০টি মামলা করা হয়েছে।’

সরকারের এসডিজি এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২৫) বাস্তবায়নে বন অধিদপ্তর থেকে দেশব্যাপী বনাচ্ছাদন ও বৃক্ষাচ্ছাদনের পরিমাণ ২০২৫ সালের মধ্যে বনভূমির পরিমান ২৪ শতাংশে উন্নীতের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তবে বর্তমানে ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ এলাকায় বনভূমি রয়েছে। আগামী দুই বছরে সেটি ২৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এ পরিকল্পনার আওতায় শালবনের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারে ৭ হাজার ২২০ হেক্টর সমতল ভূমি এবং ১ লাখ ৩০ হাজার ৫৮০ হেক্টর পাহাড়ি অবক্ষয়িত বনভূমিতে বনায়ন, ৫০০ হেক্টর আগরবাগান, ১৫ হাজার কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান সৃজন ও স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে অংশীদারত্বমূলক বন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চলমান। এছাড়া বনায়ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪ হাজার ৪৯৮ দশমিক ৫ হেক্টর ব্লক, ১ হাজার ৭০১ কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান ও ৯ হাজার ৪০৫ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজন করা হয়েছে।

Link copied!