ডিসেম্বর ১০, ২০২৩, ০৭:৪৭ পিএম
বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে পর্যায়ক্রমে প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করতে এবং ‘শূন্য বর্জ্য কৌশল’ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশবাদীরা। কপ-২৮এ আন্তর্জাতিক কঠিন বর্জ্য সমিতির (আইএসডব্লিউএ) বর্জ্য এবং সম্পদ প্যাভিলিয়নে এ আহ্বান জানান তারা।
‘জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন এবং শূন্য বর্জ্য কৌশলের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো’ শিরোনামে এ আয়োজন করে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইনসিনারেশন অল্টারনেটিভস (জিএআইএ) এবং এবিটি অ্যাসোসিয়েটস।
বক্তারা বলেন, প্লাস্টিক সমগ্র জীবনচক্রে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে, এমনকি পুনর্ব্যবহারযোগ্য পর্যায়েও। তাছাড়া এটি ভাগাড় থেকে মিথেন গ্যাসও নির্গত করে। সুতরাং, এর প্রতিকার হলো শূন্য বর্জ্য কৌশল গ্রহণ করা।
আয়োজনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিএআইএর সদস্য সংস্থা পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার (ইএসডিও) মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন।
শাহরিয়ার বলেন, প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ না করে কার্বন নিঃসরণ থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই । আমাদের শূন্য বর্জ্য কৌশল গ্রহণ করতে হবে এবং প্লাস্টিক পণ্যের পর্যায়ক্রমিক নিষেধাজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে।
প্রবন্ধ উপস্থাপনে শাহরিয়ার আরও জানান, প্লাস্টিকের জীবনচক্র জুড়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ করে এবং বিশ্বব্যাপী গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের শতকরা ৩.৪ ভাগ নির্গত হয় প্লাস্টিক থেকে। ২০১৯ থেকে ২০৬০ সালের মধ্যে প্লাস্টিকের এই নির্গমন দ্বিগুণ হয়ে যাবে। ২০১৯ সালে যা ছিল ১.৮ গিগাটন, ২০৬০ সালে তা ৪.৩ গিগাটনে পৌঁছাবে। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে যত ভাগাড় আছে সেসব থেকে ২ মিলিয়ন টন মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে।
ড. শাহরিয়ার আরও জানান, বার্ষিক প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়ার সময় ১৬ মিলিয়ন টনেরও বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়, যার মধ্যে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেই আসে ৫.৯ মিলিয়ন টন।
এরপর পুড়িয়ে ফেলা, রিসাইকেল করা ও ভাগাড়ে ফেলা মিলিয়ে যে উৎপাদন ও রূপান্তর প্রক্রিয়া- সে সময়ও এটি বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস যুক্ত করে, এমন কি রিসাইকেলিংয়ের পরেও।
প্লাস্টিকের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে জানিয়ে ইএসডিও মহাসচিব বলেন, প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনে প্রায় ১৩ হাজার রাসায়নিক পণ্য ব্যবহৃত হয় যেগুলো পরিবেশ দূষণ করে সাথে জনস্বাস্থ্য ও জলবায়ুর অনেক ক্ষতি করে।
এর মধ্যে কিছু রাসায়নিক বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা, হরমোনের ব্যাঘাত ও প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে। আবার কিছু রাসায়নিকের কারণে স্তন ক্যান্সারসহ অন্যান্য ক্যান্সার হতে পারে।
এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ-ভিত্তিক সমাধানের জন্য পরামর্শ দেন ড. শাহরিয়ার। পাশাপাশি প্লাস্টিক উৎপাদনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে একক-ব্যবহার্য পণ্য যা পচনশীল সেসব তৈরি উৎসাহিত করার পরামর্শ দেন তিনি।
এছাড়াও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে উৎপাদক ও দূষণকারীদের ওপর দায়িত্ব বাড়িয়ে দিতে এবং উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ ও প্রয়োগের জন্য পরামর্শ দেন।
এবিটি অ্যাসোসিয়েটসের সিনিয়র বিশ্লেষক অ্যামি রোল্যান্ডের পরিচালনায় এ আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন, আইএসডব্লিউএর সভাপতি কার্লোস সিলভা ফিলহো, সেন্টকুপ-এর প্রেসিডেন্ট ডিরেক্টর অ্যালাইন সুসা দা সিলভা।
মেহেদী আল আমিন, দুবাই থেকে