মাটিতে না, মানুষ থাকবে পানিতে! সাগরে ভাসমান শহর!

তিথি চক্রবর্তী

ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪, ০৬:১৩ পিএম

মাটিতে না, মানুষ থাকবে পানিতে! সাগরে ভাসমান শহর!

ছবি: সংগৃহীত

প্রতি বছর একটু একটু করে ডুবে যাচ্ছে আস্ত একটি দেশ। মাটিতে নয়, আগামীতে দেশটির মানুষেরা বাস করবে পানিতে। নিজের ঘরবাড়ির মায়া ত্যাগ করে থাকতে হবে ভাসমান শহরে। কিন্তু এই ভাসমান শহরে যদি সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থাকে তাহলে কেমন হবে? বলছিলাম দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের কথা।

ধারণা করা হচ্ছে, চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বাড়বে। ফলে ডুবে যেতে পারে প্রায় পুরো মালদ্বীপ। এই কথা মাথায় রেখে নতুন পরিকল্পনা হিসেবে ভাসমান শহর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দ্বীপ দেশটির সরকার।

মালদ্বীপের ভাসমান শহরের লেকটি রাজধানী মালের পার্শ্ববর্তী হুলেমালে শহরে করা হবে, শহরটিতে যেতে সময় লাগে রাজধানী মালে থেকে প্রায় ১০ মিনিট। শহরটির কাজ পুরোপুরি শেষ হলে অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ বসবাস করতে পারবেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, শহরটির নকশা করা হয়েছে মানুষের মস্তিষ্কের আকৃতিতে। শহরটিতে নানা রকম অবকাঠামোগত ব্যবস্থা আছে। ২০২৪ সালে ভাসমান শহরটি খুলে দেওয়া হবে। তবে পুরো শহরের নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২৭ সালে।

বিদেশি আবাসন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ডাচ ডকল্যান্ডস ও মালদ্বীপ সরকারের যৌথ উদ্যোগে শহরটি নির্মিত হচ্ছে। শহরটিকে নানা রং দিয়ে সাজানো হচ্ছে। দেখলে যেন মনে হবে রংধনুর সাত রং দিয়ে সাজানো। এর প্রত্যেকটি বাড়ি বিভিন্ন রং দিয়ে আবৃত্ত করা। ফলে শহরটি দেখে মন ভরে ওঠবে স্থানীয়দের পাশাপাশি আগন্তুক পর্যটকদেরও।

ভাসমান শহরটিতে বসবাসকারী মানুষ যাতায়াতের জন্য ছোট ছোট নৌকা ব্যবহার করতে পারবেন। শহরটি মূলত নৌকা চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া শহরটির বালিভরা রাস্তাগুলো সাজানো হয়েছে মানুষের চলাচলের জন্য। এসব রাস্তায় বাসিন্দারা হাঁটতে এবং সাইকেল ও ইলেকট্রিক স্কুটার চালাতে পারবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো মাথায় রেখে শহরটির নকশা করা হয়েছে। শহরটি ভাসমান অবস্থায় থাকবে। সমুদ্রের উচ্চতা বাড়লে, শহরটিরও উচ্চতা বাড়বে। এটি পাঁচ লাখ মালদ্বীপবাসীকে নতুন আশা দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য শহরটির নকশাকারী প্রতিষ্ঠানের কোয়েন ওলথুইসের। তিনি বলেন, মালদ্বীপবাসী এখন জলবায়ু উদ্বাস্তু থেকে জলবায়ু উদ্ভাবক হয়ে ওঠবে।

নতুন ভাসমান শহরটি পরিবেশবান্ধব, এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যাতে ৫ হাজার প্লট ইস্যু করা যেতে পারে এবং এতে পর্যটকদের জন্যও কিছু জায়গা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মস্তিষ্ক আকৃতির প্রবালের নকশায় তৈরি ভাসমান শহরটিতে থাকবে একটি ইয়ট মেরিনা, দুটি পাঁচ তারকা রিসোর্ট এবং স্থানীয়দের জন্য ছোট পিকনিক আইল্যান্ড এবং হাসপাতাল, স্কুল, শপিংমল, কাউন্সিল, সরকারি অফিসও নির্মাণ করা হবে।

এই শহরের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যেন মানুষ তাদের ঘরের বারান্দা থেকে সমুদ্র দেখতে পারে। এছাড়াও শহরটিতে পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য সুন্দর ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহরের বাসিন্দারা এসব ব্যবহার করবে সানন্দে। শহরটিতে বাড়ি, রেস্তোরাঁ, দোকান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ৫ হাজার ভাসমান ইউনিট থাকবে।

এই শহরের আরেকটি লক্ষ্য থাকবে স্বাবলম্বী হওয়ার। এখানে বিদ্যুৎ থাকবে, তবে তার প্রধান উৎস হবে সৌর শক্তি। সমতলের ভূমির মতো এখানে চাষ হবে। ব্যবহৃত পানি পরিশোধনের ব্যবস্থাও থাকবে। এয়ার কন্ডিশনারের বিকল্প হিসেবে এই র‌্য ব্যবহার করবে গভীর সমুদ্রের শীতলতা। গভীর সমুদ্র থেকে পাম্প করে ঠান্ডা পানি তুলে আনা হবে জলাধারগুলোতে।

একই সঙ্গে মালদ্বীপের পর্যটনেও এই ভাসমান শহরটি নিঃসন্দেহে প্রভাব ফেলবে। একটি ভাসমান শহর দেখতে কিংবা সেখানে কয়েকটি দিন কাটিয়ে আসতে চাইবেন বিশ্বের নানা প্রান্তের ভ্রমণপ্রেমী মানুষ।

Link copied!