মার্চ-এপ্রিলের পুরোটুকু জুড়ে রেকর্ড গরম পড়েছে। গত বছরও এমন দশা ছিল। কিন্তু কেন এত গরম? সীমাহীন গরম পড়ার বিষয়ে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদরা বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু সঠিক কারণ জানাতে অপারগ হয়েছেন তারা।
মার্চে আগের চেয়ে ২ দশমিক ১২ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হয় ইউরোপে। এটিই এখন সেখানে মার্চের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। বিশ্বের অন্যান্য অংশেও তাপমাত্রা বাড়ছেই। অনুভূত হচ্ছে রেকর্ড গরম। আর বরফাচ্ছন্ন এলাকাগুলোতে তাপমাত্রার কারণে বরফ গলে হচ্ছে পানি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জলবায়ু বিষয়ক বিভাগ কোপার্নিকাস বলছে, চলতি বছরের মার্চেও রেকর্ড গরম পড়েছে। এই নিয়ে গত ১০ মাসেই রেকর্ড গরম অনুভূত হয়েছে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জ্যেষ্ঠ জলবায়ু বিশারদ গ্যাভিন স্মিড বলেন, ‘গত বছরের গরমের কারণ হিসেবে এল ন্যানোর কথা বলা যেতে পারে। কিন্তু এভাবে গরম বেড়ে যাওয়ার যথাযথ কারণ এখনও জানা যায়নি। বিষয়টি উদ্বেগজনক। আগামীতে কী অপেক্ষা করছে, আমরা জানি না।’
তাপমাত্রা নিয়ে যে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে তার চেয়েও বেশি গরম পড়ছে উল্লেখ করে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এর মানে গবেষণায় কিছু ফাঁক রয়ে যাচ্ছে। হয় পরিবেশব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। নয়তো এমন কিছু হচ্ছে যা আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি।’
সম্ভাব্য কারণগুলো-
ক. অতিরিক্ত গরম পড়ার প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব না হলেও সম্ভাব্য কারণগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা যেতেই পারে। এর জন্য প্রথমেই আসে বায়ুদূষণ প্রসঙ্গ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বিশ্বের বড় বড় শহরগুলোকে আমরা বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকতে দেখতে পাই। পরিবেশবিদরা এর কারণ হিসেবে বাতাসে সিএফসি গ্যাস বেড়ে যাওয়াকেব দায়ী করছেন। অথচ ২০২২ সালের চেয়ে ২০২৩ সালে এত বেশি গ্যাস বেড়ে যাওয়ার কথা নয়। এমনকি চলতি বছরেও গত বছরের চেয়ে বেশি নিঃসরণের কথা নয়।
গরম মাত্রাতিরিক্ত হওয়ার কারণ হিসেবে কার্বন মিথেন গ্যাসকেও অনেকে দায়ী করছেন। তবে বাতাসে এর পরিমাণ বাড়লেও এতটাও এখনও বেড়ে যায়নি যে হুট করেই গরম বেড়ে যাবে।
খ. বায়ুদূষণের পরেই আসে ভূ-গর্ভস্থ আগ্নেয়গিরির কথা। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রশান্ত মহাসগরীয় দেশ টোঙ্গার উপকূলে হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হাপাই আগ্নেয়গিরিতে পানির নিচ থেকে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। এতে যে গ্যাস বের হয়ে আসে, তা পরিবেশের অনেক ক্ষতি করে চলেছে। কিন্তুর নাসার জলবায়ু বিশেষজ্ঞ গ্যাভিন মনে করছেন, এতেও গরম এতটা বাড়ার কথা নয়।
গ. গরম মাত্রাতিরিক্ত হওয়ার কারণ হিসেবে সূর্যের চক্র, জলবায়ু রহস্য নিয়েও অনেকেই কথা বলেছেন। বিজ্ঞানীদের কাছে এগুলোকে সঠিক কারণ হিসেবে মনে হচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে গরম বাড়ার যথাযথ কারণ এখনও নির্ণয় করা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে এখনও আরও গবেষণার দরকার আছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।