গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক-২০২৪

জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধের দাবি তুললেন তরুণরা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ০৪:৫৭ পিএম

জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধের দাবি তুললেন তরুণরা

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

বিশ্বের চলমান গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে যোগ দিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধের দাবি তুলেছে তরুণরা। তারা আহ্বান করেছে, বিশ্বকে বাঁচাতে নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণ ও টেকসই কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের যুব প্ল্যাটফর্ম অ্যাক্টিভিস্ট বাংলাদেশের সহযোগিতায় আয়োজিত সমাবেশ থেকে দেশ ও বৈশ্বিক বেসরকারি বিনিয়োগ সংস্থা, ব্যাংক ও বেসরকারি সেক্টরের কাছে এই আহ্বান জানানো হয়।

গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিতে বিশ্ব নেতাদের কাছে জলবায়ুতে ক্ষতিকর ও ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধে দাবি জানান তরুণরা। জাতীয় প্রেস ক্লাবে সমাবেশ শেষে র‌্যালি শুরু করে শিক্ষা ভবন প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনারে সমবেত হোন ৫ শতাধিক স্লোগানমুখর জলবায়ু যোদ্ধারা। সেখানে জলবায়ু সুবিচারের দাবি জানিয়ে আন্দোলন কার্যক্রমের সমাপ্তি টানা হয়।

উন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে আন্দোলনকারীরা সমাবেশে জানান, নব্য ঔপনিবেশিক শোষণ, যুদ্ধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে বিশ্বকে ধ্বংস করছে উন্নত দেশগুলো। পুঁজিবাদী মানসিকতা নিয়ে সর্বোচ্চ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনকারীরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মধ্য দিয়ে বিশ্বকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যেখানে মানুষের চেয়ে মুনাফাই মুখ্য। বিশ্বে এটি বাস্তুতন্ত্র ও জলবায়ুর জন্য গুরুতর হুমকি।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে মিছিল বের করে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের যুব প্ল্যাটফর্মের তরুণরা। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

টেকসই প্রকল্প ও নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে তারা উল্লেখ করেন, এ অবস্থায় দক্ষিণ এশিয়ার তরুণ, কৃষক, নারী ও প্রান্তিক সম্প্রদায়ে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এমনটা চলতে থাকলে অনুন্নত দেশগুলোর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের কাছে তাদের পরিবেশগত ঋণ বহুগুণ বাড়িয়ে তুলবে। সেজন্য জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে টেকসই প্রকল্প ও নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা উচিত।

জলবায়ু সংকট নিরসন, এই বিষয়ে ন্যায়বিচার দাবি ও জনগণকে সচেতন করতে একশনএইড বাংলাদেশ ও অ্যাক্টিভিস্টা বাংলাদেশসহ ২০ সংগঠনের ৫ শতাধিক তরুণ জলবায়ু কর্মী এই স্ট্রাইকে অংশ নেন। একই সময় সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, জামালপুর, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ভোলা, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী, কুষ্টিয়া, নেত্রকোনা, বরিশাল, টেকনাফ, বরগুনাসহ ২১ জেলা ও বেশ কিছু লোকাল ইয়ুথ হাবের তরুণ স্বেচ্ছাসেবকও গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে সংহতি প্রকাশ করেন।

এই ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা স্লোগান, প্ল্যাকার্ড, চিত্রকর্ম, গান, নাটক ও পোস্টার প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে জলবায়ু সুবিচারের দাবি তোলেন। একই সময় এখনই জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে এই মর্মে ‘ফিক্স দ্য ফাইন্যান্স’, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াও’, ‘ক্ষতিকারক কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ বন্ধ করো’, ‘ক্লাইমেট জাস্টিস নাউ’ ও ‘জলবায়ু সহনশীল টেকসই কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ করুন’-সহ ইত্যাদি লেখা ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেন স্ট্রাইকে যোগ দেওয়া জলবায়ু আন্দোলনকারীরা।

স্লোগান, প্ল্যাকার্ড, চিত্রকর্ম, গান, নাটক ও পোস্টার প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের দাবি তোলেন তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

‘বিত্তবানদের মুনাফা ক্ষুধার মানসিকতা আমাদের ব্যথিত করছে’ 
তরুণ জলবায়ু কর্মী ফাহিদা সুলতানা বলেন, ‘আজ আমরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, টেকসই কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবিতে লড়াই করছি। বিত্তবানদের মুনাফা ক্ষুধার মানসিকতা আমাদের ব্যথিত করছে। লোভী এই স্বার্থের জন্য আমাদের ভবিষ্যত সংকটে ফেলতে পারি না।’

‘এখন কথা বলার সময় নয়, শুধু কর্মের সময়’
তরুণ জলবায়ু কর্মীদের এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ এর ইয়াং পিপল টিম লিড মো. নাজমুল আহসান বলেন, ‘আমরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নকে অবসান করা এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ও জলবায়ু সহনশীল টেকসই কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ বাড়ানোয় প্রাধান্য য়ার দাবিতে আওয়াজ তুলছি। এখন কথা বলার সময় নয়, শুধু কর্মের সময়। আমরা এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি যেখানে কোন লোভ এই বিশ্ব ও তার বাসিন্দাদের মঙ্গলকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না।’

জলবায়ু সুবিচার নিশ্চিতে উত্তরের দেশগুলোর কাছে দায়বদ্ধতা নিয়ে টেকসই সবুজ বিশ্ব রূপান্তরে প্রযুক্তি ও রিসোর্স বিনিময় করার আহ্বান জানান তিনি।

‘আমরা জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধের দাবি করছি’
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশ বিশ্বের জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম, সেহেতু আমরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ ও টেকসই সবুজায়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি জানাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির আহ্বান এবং চলমান নৃশংস যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানাই। আমরা তরুণদের সঙ্গে সবাই একসঙ্গে আরও ন্যায্য, জলবায়ুবান্ধব ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অবদান রাখতে চাই।’

সমাবেশে জলাবায়ু আন্দোলনকারীরা ফিলিস্তিনে চলমান অমানবিক যুদ্ধ বন্ধে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়। এতে অসংখ্য শিশু, নারী ও বৃদ্ধের মৃত্যুতে গভীর সহানুভূতি ও শোক প্রকাশ করা হয়।

Link copied!