সংগৃহীত ছবি
অপরূপ সৌন্দর্য আর স্নিগ্ধতার এক লীলাভূমি কুয়াকাটা। মায়াবী সূর্যোদয় আর রক্তিম সূর্যের আভা মিশিয়ে সূর্যাস্ত একই স্থান থেকে দেখার সৌভাগ্য সাধারণত হয়ে উঠে না। কুয়াকাটা সেই সৌভাগ্য বহন করছে আপনার জন্য। অনিন্দ্য সুন্দর সমুদ্র সৈকত ছাড়াও যেখানে রয়েছে ঘুরে বেড়ানোর মতো আরও নানা স্নিগ্ধতম স্থান। যেখানে নেই কৃত্রিমতার কোন ছাপ।
ভালোবেসে ভ্রমণপিপাসুরা কুয়াকাটার নাম দিয়েছেন ‘সাগরকন্যা’। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষাসহ সকল ঋতুতেই মৌসুমী পাখির কলরবে মুখরিত থাকে সাগরকন্যা।
শহুরে কোলাহল আর কর্মব্যস্ততায় নিজেকে হারিয়ে ফেললে, নিজেকে ফিরে পেতে একবার ঘুরে আসতে পারেন স্নিগ্ধতম সৈকত কুয়াকাটা থেকে। সাগরকন্যা আপনাকে তাঁর স্নিগ্ধতা উজার করে দিতে মুখিয়ে আছে।
কক্সবাজারের চাকচিক্য এখনো গ্রাস করেনি ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কুয়াকাটাকে। বিশাল বিশাল অট্টালিকা না থাকায় বেশ গ্রামীণ পরিবেশেই কুয়াকাটাকে দেখতে পারবেন আপনি।
কুয়াকাটায় পর্যটকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুঁজে পান তিনচাকার বাহন ভ্যান কিংবা অটো বা মোটরসাইকেলে চড়ে।
একদিনে কুয়াকাটায় যা দেখতে পাবেন:
খুব সকালে হোটেলের রুম থেকে বের হয়ে কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট। বীচ থেকে বেরিয়ে পড়বেন গঙ্গামতির চরের উদ্দেশে। গঙ্গামতির চরের বীচে দাঁড়িয়ে দেখতে পারবেন সমুদ্রের বুক চিরে টকটকে লাল সূর্য উদিত হওয়ায় দৃশ্য।
আরও দেখবেন লাল কাঁকড়ার অবাধ ছোটাছুটি। সাথে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। সেখানে সকালের নাস্তা সেরে মিশ্রিপাড়ায় গিয়ে দেখবেন এশিয়ার অন্যতম বৌদ্ধ বিহার। আছে আদিবাসী রাখাইনদের কৃষ্টি-কালচার।
সেখান থেকে ফিরে হোটেল কক্ষে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুটা বিশ্রাম। এরপর হোটেল থেকে বের হয়ে ফের কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট। ভ্যানে চড়ে যেতে যেতে লেবুর চরে দেখতে পারবেন বিশাল এলাকা নিয়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। লেবুর চরেই দেখতে পারবেন রক্তিম সূর্যাস্ত।
এরপর তিন নদীর মোহনা। রয়েছে শুঁটকি পল্লী ও জেলেদের জীবন জীবিকার দৃশ্য। সেখান থেকে ফিরে সন্ধ্যায় সৈকতের বীচ। বিকেলের স্নিগ্ধতার ঘোর নিয়ে বীচে ফিরে এসে সারিবদ্ধ বেঞ্চে বসে দেখবেন সাগরের ঢেউ আর শো শো গর্জন। যেখানে নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি আপনি দেখতে পারবেন।
প্রকৃতির নির্মল পরিবেশ উপভোগের জন্য কুয়াকাটা ভ্রমণ যখন উপভোগ্য হয়ে উঠে তখন, সমুদ্র সৈকতের চেয়ারে অলস সময়ে রাতের তারা আর জ্যোৎস্নার আলো শরীরে মেখে সামুদ্রিক মাছের ফ্রাই আর বারবিকিউসহ রাতের খাবার খাওয়ার সুযোগ হয়। ভালোলাগার কল্পনাকেও হার মানাতে পারে কুয়াকাটার নিস্তব্ধ পরিবেশ।
এছাড়া ফাতরার বন, চর বিজয়, পায়রা বন্দরসহ একটু দূরের দর্শনীয় স্থানে যেতে চাইলে হাতে সময় বাড়িয়ে নিতে হবে আরও দুই একদিন।
কিছুদিন আগেও কুয়াকাটার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য পর্যটকদের প্রধান সমস্যা ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াকাটায় দর্শনার্থীদের ব্যাপক সমাগম দেখা যাচ্ছে। ঢাকা থেকে মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, ভাঙ্গা-বরিশাল এক্সপ্রেসওয়েসহ নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর দেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
জোয়ার-ভাটায় ঢেউয়ের গর্জন আর কোলাহলমুক্ত পরিবেশ উপভোগ করার তাড়না বারবার কুয়াকাটায় আসার ইচ্ছে জাগিয়ে তুলবে। আর তাই নিজের অশান্ত মনকে শান্ত করতে ঘুরে আসুন অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা থেকে।