নিজের দিনটা যেখানে নিরামিষের স্বাদে বুঁদ হয়ে যাবে

অভিশ্রুতি শাস্ত্রী

নভেম্বর ২, ২০২৩, ০৮:১৯ এএম

জগন্নাথ ভোজনালয়ের সব আইটেম নিরামিষ- ভর্তা, ডাল, ছানা, বড়া, সয়াবিন, রসা, ধোকা।

হোটেল কিংবা রেস্তোরায় খাবার মেন্যু চাইলেই যেন একগাদা আমিষের তালিকা সামনে দিয়ে দেয়। একটু নিরামিষ হিসেবে শাক,সবজি চাওয়ার পর হয়তো বলে মাছ নাকি মাংস। কিন্তু স্রেফ নিরামিষ দিয়েই যে ভুঁড়িভোজ করা যায় সে ধরনের হোটেল খুব কমই রয়েছে। তবে যারা নিরামিষ দিয়েই পুরো দিন চলতে চান তাদের জন্য আদর্শ স্থান জগন্নাথ ভোজনালয়।

যেভাবে আসবেন

পুরান ঢাকার ১১০ নম্বর তাঁতিবাজারের একটি দোতলা ভবনেই অবস্থিত এই নিরামিষভোজীদের স্বর্গরাজ্য। পুরান ঢাকার খাবারের কথা বললে প্রথমেই মনে হয় বিরিয়ানির কথা। এরপর কাবাব,আণ্ডাপুয়াসহ বাহারি আমিষ খাবারই যেন আমাদের মনে গেথে আছে। তবে সব স্বাদেরই বুমেরাং আছে। আমিষ খেতে খেতে যদি একটু ভিন্নতা চান তাহলে আপনাকে আসতেই হবে এই জগন্নাথ ভোজনালয়ে। 

রাজধানীর যেকোন প্রান্ত থেকে তাঁতিবাজার এসে পুরান ঢাকার ১১০ নম্বর তাঁতিবাজারের দোতলায় পাবেন এই ভোজনালয়। নিচতলায় আছে পুষ্প নামে একটি জুয়েলারি দোকান। তাঁতিবাজার শিবমন্দিরের কাছ থেকে সহজেই যাওয়া যায়। তবে নিজে চিনতে অসুবিধা হলেও রিক্সাওয়ালা ঠিক নিয়ে যাবে। আর পায়ে হেটে বড়জোর ৫ মিনিট লাগে। স্থানীয় যে কেউই দেখিয়ে দিতে পারবে।

দেড় যুগ আগে ২০০৫ সালে নিতাই পাল শুরু করেন এই ভোজনালয়। ওদিকের সবচেয়ে পুরনো নিরামিষ ভোজনালয়টি বিষ্ণুপ্রিয়া। তারপরই হয়েছে জগন্নাথ। ২০২০ সালে কোভিড আক্রান্ত হয়ে লোকান্তরিত হন নিতাই পাল। তারপর মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে এর তত্ত্বাবধানে আছেন অশোক কবিরাজ। তিনি গোপীনাথ ভোজনালয়েরও মালিক। এখন দুটো হোটেলই একসঙ্গে চালাচ্ছেন।

তিনি জানান, জগন্নাথ ভোজনালয়ের সব আইটেম নিরামিষ। ভর্তা, ডাল, ছানা, বড়া, সয়াবিন, রসা, ধোকা। শেষপাতে পায়েস আর চাটনি। রান্নায় পেঁয়াজ ও রসুন ব্যবহার করা হয় না। তবে অন্যান্য মসলা দেওয়া হয়। একাদশীর সময় হলে, চন্দ্র তিথিতে বিশেষ খাবার পাওয়া যায়। পুষ্পান্ন (অর্থাৎ পোলাও), খিচুড়ি, সাগুদানা ভুনা, ছানার রসা, ফুলকপির রসা, পাঁচমিশালি সবজি ও শ্যামা দানার পায়েস করা হয়। একাদশীর রান্না হয় সানফ্লাওয়ার তেলে। অন্যান্য দিন সয়াবিন ব্যবহার করা হয়।

ভিন্ন স্বাদের রান্নায় কোনটা খাবেন

পেঁয়াজ- রসুন তো বাদই, অন্যান্য মসলাও একাদশীর রান্নায় দেওয়া হয় না। শুধু আদা আর কাঁচামরিচটা দেওয়া হয়। এখানে ভর্তা পাওয়া যায় ৮-১০ রকমের। ডাল পাওয়া যায় ৩-৪ প্রকারের। শাকও পাবেন ৫ প্রকারের। হোটেলের টেবিলগুলোয় সারিবদ্ধ করে সাজানো রেকাবি । সেখানে ইস্পাতের ছোট ছোট বাটিতে করে সাজানো প্রায় ২০ প্রকারের নিরামিষ পদ। যার যেরকম প্রয়োজন, সেভাবে নিয়ে নিতে পারেন। যেন মনেই হচ্ছে বিশেষ নিমন্ত্রণে এসেছেন যা খুশি খেয়ে যান। আর বাস্তবেও তাই। একটা দুটো আইটেম দিয়ে খাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও সেটা যে শেষে ৬-৭ আইটেমে গিয়ে দাড়ায়। তরকারির দাম ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। ভাত এক প্লেট ১৫ টাকা, প্রয়োজনে ৫ টাকা করে অতিরিক্ত ভাত নিতে পারবেন। ভাত টেবিলে দেওয়া থাকে না। এটি দোকানের লোকেরাই পরিবেশন করে থাকেন। দৈনিক ২০টি পদ করা হয় এখানে। তার ভেতর রসা, লাবড়া, শুক্তো, ৫ তরকারি, ধোকা-সবই পাবেন। একবারে দোকানে বসে খেতে পারেন ৩৫-৩৬ জন।

পনিরের রসা কিংবা ধোকা সচরাচর বাসায় করা হয় না। আর অন্যান্য পদও যদি বিবেচনা করি একসাথে কোন বাসাতেই এত আইটেম প্রস্তত করা হয়না। তাই এখানে আসলে অবশ্যই এই দুই আইটেম চেখে দেখবেন। এছাড়া আপনার স্বাদ ও রুচি অনুসারে অন্যান্য সবজিতো রয়েছেই। আর শীতে যে সবজির মনোহর পসরা বসবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

মূলত নিরামিষ আহারি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কথা চিন্তা করে হোটেলটি প্রতিষ্ঠা করা হলেও সব ধর্মের মানুষের জন্যই এটি উন্মুক্ত। এখানে দূর-দুরান্ত থেকেও অনেকেই খেতে আসেন। দুপুর ১টা থেকে সাড়ে ৩টা -৪টা পর্যন্ত বেশ লোকসমাগম হয়। রাতে ১০টা পর্যন্ত সাধারণত দোকান খোলা রাখেন। তবে ভিড় বাড়লে সেটি বেড়ে হয় ১১টা।

Link copied!