আগস্ট ৭, ২০২২, ১১:১৯ পিএম
পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ভারতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। পদাধিকার বলে তিনিই হবেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান। বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডুর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১০ অগস্ট। এরপরই শপথ নেবেন নতুন উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়।
ভারতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শুধুমাত্র সাংসদদের ভোটাধিকার থাকে। আর দেশটির লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একক শক্তিতেই ধনখড়ের জয় নিশ্চিত ছিল। তবে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ভোট পেয়েছেন তিনি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়,পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদরা তার বিরুদ্ধে ভোট না দিয়ে বরং ভোটদানে বিরত থেকেছে।
রাজস্থানের এক অখ্যাত গ্রাম থেকে দেশীয় রাজনীতির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদাধিকারীর আসনে বসেলে জগদীপ ধনখড়। রাজনৈতিক জীবনে নিঃসন্দেহে বড় সাফল্য পেলেন তিনি। তাঁর বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন কংগ্রেসের মার্গারেট আলভা। বিরোধীদের সম্মিলিত প্রার্থী হলেও ভোট দান থেকে বিরত থেকেছে তৃণমূল।
বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
রাজ্যপাল থেকে উপরাষ্ট্রপতি হলে রোজগার অনেকটাই বেড়ে যাবে ধনখড়ের। সেই সঙ্গে অন্যান্য সুযোগসুবিধাও রাজ্যপালের তুলনায় উপরাষ্ট্রপতির বেশি।
২০১৮ সালে দেশে রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী, উপরাষ্ট্রপতি থেকে রাজ্যপাল— সকলের বেতন কাঠামোয় পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় সরকার। ওই পরিবর্তনের পরে ভারতে এখন রাজ্যপালদের মাসিক বেতন হয় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। আগে ছিল ১ লাখ ১০ হাজার টাকা।
সেই সময়ে উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের বেতন ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয় মাসিক ৪ লাখ টাকা। রাষ্ট্রপতির বেতন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে হয় মাসিক ৫ লাখ টাকা।
উপরাষ্ট্রপতি বেতন ছাড়াও অনেক সুবিধা পান। বাড়ি, পরিবহণ, চিকিৎসা সংক্রান্ত সব খরচই কেন্দ্রীয় সরকার বহন করে।
কখনও উপরাষ্ট্রপতিকে যদি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করতে হয়, তখন যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ও বেতনও রাষ্ট্রপতির সমান হয়।
উপরাষ্ট্রপতি দিল্লিতে একটি বড় বাংলো যেমন পান, তেমন অফিস চালানোর খরচও অনেকটাই বেশি হয়। আর উপরাষ্ট্রপতি অবসরের পরে মাসে দু’লাখ টাকা করে পেনশন পান
রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালদের তুলনায় বেতন অনেকটাই কম প্রধানমন্ত্রীর। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর মূল বেতনও এক জন সাংসদের সমান। কারণ, তিনিও প্রথমে সাংসদ, পরে প্রধানমন্ত্রী।
বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী মূল বেতন এক লাখ টাকা। সেই সঙ্গে সংসদীয় এলাকা ভাতা পাওয়া যায় ৭০ হাজার টাকা। অফিস চালানোর খরচ ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে অফিসের খরচ ২০ হাজার আর কর্মীদের বেতনের জন্য বরাদ্দ ৪০ হাজার টাকা। এর বাইরে অতিথি আপ্যায়ন বাবদ প্রধানমন্ত্রী মাসে পান তিন হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ২ লাখ ৩১ হাজার টাকা।
করোনাকালে এক বছর প্রধানমন্ত্রী-সহ মন্ত্রিসভার সদস্য কিংবা রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, রাজ্যপালরাও ৩০ শতাংশ বেতন কম পেয়েছেন। ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল সাংসদদের বেতনও কমিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে এক বছরের জন্য সাংসদদের মাসিক বেতন কমে হয়ে যায় ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।
জন্ম ও শিক্ষা
১৯৫১ সালের ১৮ মে রাজস্থানের এক জাত কৃষক পরিবারে জন্ম হয়েছিল ধনখড়ের। সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশের আগে আইনকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন কিঠানা গ্রামের এই ছেলেটি।
চিত্তৌরগড়ের সৈনিক স্কুলের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনাও করেছেন নিজের রাজ্যে। রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকস্তরের পড়াশোনা শেষ করেন ধনখড়। এক কালে রাজস্থান হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বিভিন্ন ভূমিকায় ধনখড়
৭১ বছর বয়সী জগদীপ ধনখড়কে নানা ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। আইনজীবী হিসাবে পেশাদার জীবন শুরু করলেও এক কালে তা ছেড়ে রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়েন ধনখড়। এরপর একে একে বিধায়ক থেকে সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছেন।
উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার পরেই ধনখড়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সংসদীয় বিষয়ে ধনখড়ের প্রজ্ঞাকে তারিফ করেছেন। সংবিধান নিয়ে তিনি যে অত্যন্ত ওয়াকিবহাল, তা-ও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিধায়ক হওয়ার আগেই সাংসদ হয়েছিলেন ধনখড়। তবে তাঁর প্রথম রাজনৈতিক দল ছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখরের জনতা দল।
বাংলার রাজ্যপালের দায়িত্বভার নেওয়ার পরে নানা বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সঙ্ঘাতে জড়িয়েছেন তিনি। সেই দায়িত্ব সামলানোর আগে একাধিক পদে ছিলেন ধনখড়। জনতা দল থেকে বিজেপিতে যোগদানের আগেই অবশ্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এ বার আরও বড় দায়িত্বে ভারতের এই নতুন উপরাষ্ট্রপতি।
সূত্র: আনন্দবাজার