কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার, কীভাবে চলবে দিল্লি প্রশাসন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মার্চ ২২, ২০২৪, ০৮:৩৪ পিএম

কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার, কীভাবে চলবে দিল্লি প্রশাসন?

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (এএপি) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার হয়েছেন। বহুল চর্চিত আবগারি নীতি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেপ্তারের ফলে দিল্লির প্রশাসন কীভাবে চলবে- স্বাভাবিকভাবেই উঠেছে সেই প্রশ্ন। তবে দলটির পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কারাগারে অন্তরীণ থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন কেজরিওয়াল।

যদিও কারাগার থেকে সরকার পরিচালনায় আম আদমি নেতাকে ঠেকানোর মতো আইনি বাধা নেই, তারপরও কারাবিধির কারণে বিষয়টা ক্রমশ জটিল হয়ে উঠতে পারে।

দিল্লির তিহার কারাগারের সাবেক একজন আইনজীবী বলেন, ‘একজন কারাবন্দী সপ্তাহে দুটি বৈঠক করার অনুমতি পান; যা কেজরিওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার দায়িত্ব পালনে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করবে।’

সুনীল গুপ্ত নামে একজন আইনজীবী বলেন, ‘কারাগার থেকে সরকার পরিচালনা করা সোজা নয়। কারাগারের বিধিতে বলা আছে, আপনি পরিবার, বন্ধু-বান্ধব অথবা সহযোগীদের সাথে সপ্তাহে মাত্র দুইবার দেখা করার সুযোগ পাবেন। এসব বিধিনিষেধের কারণে সরকার পরিচালনা করা তার জন্য সহজ হবে না।’

তবে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কেজরিওয়ালের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের একটি উপায় আছে। যে কোনো একটি ভবনকে কারাগারে রূপান্তরের ক্ষমতা আছে লেফটেন্যান্ট গভর্নরের। আর কেজরিওয়াল যদি তাকে গৃহবন্দি করতে রাজি করাতে পারেন, তবে সেই সম্মতির ভিত্তিতেই তাকে দিল্লি সরকারের দৈনন্দিন কাজের অংশ হতে সহায়তা করবে।’

দিল্লির মদ নীতি মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে ইডি অন্তত ৯ বার কেজরিওয়ালকে তলব করেছিল। কিন্তু প্রতিবারই ইডির তলব এড়িয়ে যান তিনি। দিল্লির হাইকোর্টে কেজরিওয়াল গ্রেপ্তারি এড়ানোর বিষয়ে আবেদন করলেও তা নাকচ করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের পর দিল্লির রাজ্য সরকারে ২ নম্বর অবস্থানে থাকা এএপির নেতা অতীশি বলেন, ‘দলের নেতৃত্বে কোনো পরিবর্তন হবে না।’

তিনি বলেন, ‘অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আছেন এবং থাকবেন... এটা নিয়ে অন্য কোনও উপায় নেই।’

কিন্তু দেশটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল পদত্যাগ না করায় সরকার পরিচালনায় কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ভারতের আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত বা অপসারণ করতে পারে। কারণ তিনি একজন সরকারি কর্মচারী। গ্রেপ্তারকৃত সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করা হয়। তাদের তাৎক্ষণিকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

কেন কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার?
২০২১ সালে কেজরিওয়ালের সরকার দিল্লিতে নতুন একটি আবগারি নীতি চালু করে। নীতি অনুযায়ী, সরকার মদ বিক্রয় থেকে সরে আসে এবং বেসরকারি লাইসেন্সধারীদের মদের দোকান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়।

এই অনুমতির বিষয়ে সমালোচনার জবাবে কেজরিওয়াল সরকার জানায়, মদের কালোবাজারি বন্ধ, সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি ও সামগ্রিকভাবে গ্রাহকদের সুবিধা দিতেই নতুন আবগারি নীতি করা হয়। এতে বলা হয়, মধ্যরাত পর্যন্ত মদের দোকান খোলা রাখতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি দোকানে বিভিন্ন ধরনের ডিসকাউন্টের সুযোগও রাখা হয়।

নতুন এই নীতি কার্যকর হওয়ার পর পরই মদের বিক্রি হঠাৎ আকাশ ছুঁয়ে ফেলে। দিল্লি সরকারের রাজস্ব এক লাফে ২৭ শতাংশ বেড়ে যায়। তবে দেশটির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার নতুন আবগারি নীতির বিরোধিতা করে। বিজেপির অভিযোগ, আবাসিক এলাকায় মদের দোকান খোলার অনুমতি ও রাজধানীতে ‌‌‘মদের সংস্কৃতি’ চালু করছে আম আদমি পার্টির সরকার।

দিল্লির মুখ্য সচিব নরেশ কুমার ২০২২ সালের জুলাইয়ে নতুন আবগারি নীতিতে একটি গুরুতর অনিয়মের বিষয় চিহ্নিত করেন। তার তৈরি তদন্ত প্রতিবেদনে মদের লাইসেন্সধারীদের ‘অন্যায্য সুবিধা’ দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালীন মদের লাইসেন্স ফি বাবদ ১৪৪ কোটি টাকা ছাড়ের কথাও তুলে ধরেন ওই কর্মকর্তা।

নিজের করা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ ঘটনায় সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা। এরপরই আম আদমি পার্টি সরকারের ওপর বিজেপির তীর্যক আক্রমণ আসতে থাকে। বিতর্ক ওঠার পর নতুন আবগারি নীতি প্রত্যাহার করে নিলে অভিযোগ অস্বীকার করতে থাকে দিল্লি সরকার।

এর ফলে দিল্লিতে নতুন চালু হওয়া ৪ শতাধিক দোকান বন্ধ হয়ে যায়। নতুন নীতি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত মদ বিক্রি আবার চলে আসে সরকারি নিয়ন্ত্রণে। পরে মামলার কয়েকজন অভিযুক্ত ও সাক্ষীর বক্তব্যে কেজরিওয়ালের নাম উঠে আসে। কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে ইডির চাওয়া রিমান্ড নোট ও চার্জশিটে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইডি অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে মদ নীতি কেলেঙ্কারি মামলার ‌‌‘ষড়যন্ত্রকারী’ বলে অভিহিত করেছে। ইডি বলেছে, মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও আম আদমি পার্টির নেতা মণীশ শিশোদিয়া ও সঞ্জয় সিং মদ নীতি তৈরিতে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) নেতা কে. কবিতা।

কথিত ষড়যন্ত্র অনুযায়ী দিল্লিতে এমন এক মদ নীতি তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়; যা দক্ষিণ ভারতের একটি মদের লবিকে সুবিধা দেবে। ইডির তথ্য অনুযায়ী, এর বিনিময়ে সেই ‘‘দক্ষিণ লবি’’ আম আদমি পার্টিকে ১০০ কোটি রুপি দেবে।

গ্রেপ্তারের পর যা বললেন কেজরিওয়াল
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার হওয়ার প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার জীবনকে জাতির জন্য উৎসর্গ করেছি।’

সূত্র: এনডিটিভি

Link copied!