১৬ বছরের কম হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ অস্ট্রেলিয়ায়

রয়টার্স

নভেম্বর ২৯, ২০২৪, ০১:৪০ পিএম

১৬ বছরের কম হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ অস্ট্রেলিয়ায়

ছবি: প্রতীকী

১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে অস্ট্রেলিয়া। এর মধ্যে ফেসবুক, টিকটক, স্ন্যাপচ্যাট, রেডিট, এক্স এবং ইনস্টাগ্রাম আছে।

বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ায় এই আইন পাশ হয়েছে।

এই আইনটিকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর কঠোরতম আইন। আইনটি কার্যকর হলে ১৬ বছরের নীচে কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না অস্ট্রেলিয়ায়।

আইন ভাঙলে ৪৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানা করা হবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলিকে। অর্থাৎ, ১৬ বছরের নীচে কেউ অ্যাকাউন্ট খুলছে কি না এটা নজরদারি করার দায়িত্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলির।

ধারণা করা হচ্ছে, বয়স নির্ধারণের জন্য সর্বোচ্চ বায়োমেট্রিকস বা পরিচয়পত্রের তথ্যের ওপর নির্ভর করা হবে হয়তো। অবশ্য নতুন আইনে নিয়ম ভঙ্গকারী শিশুদের জন্য কোনও শাস্তির বিধান নেই।

এটি কার্যকর হতে কমপক্ষে ১২ মাস সময় লাগবে এবং এটি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কর্তারা কে কী বলছেন?

মেটা জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার সরকার তড়িঘড়ি এই আইন প্রণয়ন করেছে। আরেকটু সময় নিয়ে বিষয়টি পর্যালোচনা করা দরকার ছিল। ফেসবুক এমনিতেই বয়সের দিকটি নজরে রাখে। কোন বয়সের মানুষ কী ধরনের ফিড দেখতে পাবেন, সেদিকে নজর রাখা হয়।

স্ন্যাপচ্যাটের তরফেও বলা হয়েছে, আইনটি যুক্তিসংগত নয়। আইনের মধ্যে বহু ফাঁক থেকে গেছে। এবং পুরো বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কীভাবে এই আইন কাজ করবে তা-ও স্পষ্ট নয়। স্ন্যাপচ্যাটের তরফে জানানো হয়েছে, সরকারের সঙ্গে তারা এবিষয়ে কথা বলবে এবং একটি ভারসাম্য তৈরি করার চেষ্টা করবে।

টিকটকের তরফে বলা হয়েছে, তারা এই আইনটি নিয়ে অত্যন্ত হতাশ। এর ফলে শিশু এবং কিশোররা ডার্ক ওয়েভের দিকে ঢুকে পড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। ডার্ক ওয়েভে অপরাধমূলক কাজ হয়। সোশ্যাল মিডিয়া না থাকলে শিশু-কিশোরদের অপরাধমূলক সাইটে ঢোকার প্রবণতা বাড়তে পারে। 

অস্ট্রেলিয়া সরকার কী বলছে?

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবেনিস বলেছেন, তিনি চান ফোন ছেড়ে শিশু-কিশোররা ক্রিকেট মাঠে, টেনিস কোর্টে, সুইমিং পুলে ফিরে যাক। খোলা আকাশের নীচে তারা খেলাধুলো করুক। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি জানেন, এই নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি পালন করা যাবে না। কিন্তু যেভাবে দেশে মদ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, সেভাবেই এই ব্যান লাগু থাকবে। এতে অন্তত একটি সামাজিক বাধা তৈরি করা যাবে।

প্রধানমন্ত্রী একথা বললেও বিরোধীদের বক্তব্য, আইনটি এখনো তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। এই আইন ভাঙলে ব্যক্তির উপর কী শাস্তি নেমে আসবে, তা স্পষ্ট করে বলা নেই আইনে। বহু তথ্যই স্পষ্ট করে বলা নেই। কোনো রাজনীতিবিদের মতে, এই আইন ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ।

বিলটি ঘিরে তর্ক-বিতর্ক

বিলটি ঘিরে এখনো তীব্র বিতর্ক চলছে গোটা দেশে। অনেকেরই বক্তব্য, এর ফলে কিশোররা ডার্ক ওয়েবে ঢুকে পড়বে।

ডিজিটাল গবেষকরা বলছে যে এটি কার্যকর করা যাবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। ভিপিএন-এর মতো টুল ব্যবহার করে সহজেই এই নিয়মাবলী এড়ানো যেতে পারে। ভিপিএন ব্যবহার করলে এটি বোঝা যায় না যে কোন দেশ থেকে লগইন করা হয়েছে, বরং দেখা যে অন্য কোনও দেশ থেকে লগইন করা হয়েছে।

তারা বলছেন, এটি করতে গিয়ে যেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা না হয়।

এই সংস্কারের আগে একটি সীমিত আকারের জরিপ করা হয়েছে দেশটিতে। তাতে দেখা গেছে, বেশিরভাগ অস্ট্রেলিয়ান বাবা-মা ও অভিভাবকরা এই সংস্কারের পক্ষে সমর্থন করেছেন। 

Link copied!