মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীতার দৌড়ে এগিয়ে আছেন যাঁরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩, ০২:০৯ এএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীতার দৌড়ে এগিয়ে আছেন যাঁরা

সবসময় বিশ্ববাসীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কে হবেন ক্ষমতাধর এই রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট? এই বছরের নভেম্বরে হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে এই সম্পর্কে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে বিশ্বনেতাদের মাঝে। 

আলেচিত এ নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির ১০ জন প্রার্থী হতে আগ্রহী। তাঁরা আগামী নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে লড়তে চান।

তবে বাইডেনই যে সহজে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হতে যাচ্ছেন বিষয়টি এমনও নয়। তাঁর সামনেও রয়েছে চ্যালেঞ্জ। আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে তোড়জোড় শুরু করেছেন এমন ব্যক্তিদের তালিকা তুলে ধরা হলো।

রিপাবলিকান পার্টি:

ডোনাল্ড ট্রাম্প: চারটি পৃথক ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাবেক কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে এটি নজিরবিহীন ঘটনা। তবে বিষয়টি রিপাবলিকানদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় ভাটা ফেলতে তো পারেইনি, উল্টো তাঁকে দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে সামনের কাতারে এগিয়ে দিয়েছে।

ট্রাম্পের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক, যা তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতারোহকে ব্যর্থ করার চেষ্টার জন্য অংশ মাত্র। যদিও মার্কিন বিচার বিভাগ ট্রাম্পের এমন কথাবার্তা প্রত্যাখ্যান করেছে। দলের ওপর ট্রাম্পের অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রন ডিস্যান্টিস (৪৪):  জনমত জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে  প্রায় ৪০ শতাংশ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকা ডিস্যান্টিস এই মুহূর্তে ট্রাম্পের সবচেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। গত মে মাসে প্রচার শুরুর পর তিনি তাঁর নির্বাচনী কর্মকর্তাকে অপসারণ করেছেন; প্রচারকে নতুন করে গতি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে এসব পদক্ষেপ তার প্রার্থিতাকে সামনে এগিয়ে নিতে সামান্যই সহায়তা করেছে।

মাইক পেন্স: ট্রাম্পের মেয়াদে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা মাইক পেন্স ক্যাপিটাল ভবনে তান্ডব চালানোর জন্য তাঁর সাবেক বসের সঙ্গে সমালোচনার শিকার হয়েছেন। ওই তাণ্ডব চালিয়েছিলেন ট্রাম্পের সমর্থকেরা। ৬৪ বছর বয়সী পেন্স বলেছেন, ‘ইতিহাস ট্রাম্পকে দায়ী হিসেবে’ দাগিয়ে রাখবে ক্যাপিটল ভবনে আক্রমণে তার ভূমিকার জন্য। প্রচারণা অর্থ সংগ্রহে তেমন সুবিধা করতে না পারা ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের সাবেক এই গভর্নর ইভাঞ্জেলিক্যাল খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কাছে সরাসরি আবেদন করেছেন। অন্যদিকে জনমত জরিপে মাত্র এক অঙ্কের ঘরে আটকে থাকা সমর্থন তাঁকে সামনে এগোতে দিচ্ছে না।

বিবেক রামাস্বামী (৩৮): তিনি একজন সাবেক জৈবপ্রযুক্তি বিনিয়োগকারী ও নির্বাহী। ২০২২ সালে তিনি পরিবেশগত, সামাজিক ও কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণ পরিহারে কোম্পানিগুলোকে চাপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। রাজনৈতিক বৃত্তের বাইরে থাকা রামাস্বামী ট্রাম্পের শক্ত বিকল্প হিসেবে ভালোই চাঞ্চল্য তৈরি করতে পেরেছেন। রামাস্বামী সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকও বটে। তিনি বলেছেন, তিনি হোয়াইট হাউসে যেতে পারলে ট্রাম্পকে ক্ষমা করবেন।

নিকি হ্যালি (৫১): দক্ষিণ ক্যারোলিনার সাবেক গভর্নর এবং জাতিসংঘে নিয়োজিত ট্রাম্পের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত জোর দিচ্ছেন বাইডেন ও ট্রাম্পের চেয়ে তুলনামূলক তাঁর অল্প বয়সের বিষয়টির ওপর। পাশাপাশি তাঁর ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়ার বিষয়টি সামনে তুলে ধরছেন।

দলের মধ্যে একজন পুরোদস্তুর রক্ষণশীল হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। তিনি তাঁর অন্যান্য সহকর্মীর অনেকের চেয়ে বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে লিঙ্গ ও জাতিগত বিষয়টি সামনে তুলে ধরতে সক্ষম। বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় নিজেকে একজন অটল রক্ষক হিসেবেও নিজেকে তুলে ধরেন হ্যালি। তবে জনমত জরিপ বলছে, রিপাবলিকানদের মধ্যে তাঁর সমর্থন এক অঙ্কের ঘরে।

টিম স্কট (৫৭): তিনি একজন কৃষ্ণাঙ্গ রিপাবলিকান সিনেটর। নিজ রাজ্য দক্ষিণ ক্যারোলিনার বাইরে তাঁর নাম সেভাবে উচ্চারিত নয়। যদিও তিনি বিভক্ত দলকে একত্রিত করার দিকে বেশি মনোনিবেশ করেছেন। তাঁর আশা, এই অবস্থান তাঁকে ট্রাম্প ও ডিস্যান্টিসের আক্রমণাত্মক পদ্ধতির বিপরীতে আলাদা করে তুলে ধরেছে।
সমর্থকদের কাছে তাঁর হাসিখুশি আচরণ দারুণ একটা বিষয়, তবে এটি জয়ের জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে। জনমত জরিপ অনুযায়ী, রিপাবলিকানদের মধ্যে স্কটের  মাত্র ১ শতাংশ সমর্থন রয়েছে।

ইসা হাচিনসন (৭২): আরকানসাসের সাবেক এই গভর্নর গত এপ্রিল মাসে তাঁর হোয়াইট হাউসে যাওয়ার দৌড় শুরু করেছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগপত্র দেওয়ার জেরে তিনি ট্রাম্পকে প্রার্থিতা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। একটি চরম রক্ষণশীল অঙ্গরাজ্যের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি—এই অভিজ্ঞতা তাঁকে সমৃদ্ধ করেছে বলে দাবি তার। রিপাবলিকান ভোটারদের পক্ষে যায় এমন নীতি প্রণয়ন, করে কাটছাঁট এবং কর্মসংস্থান তৈরির অভিজ্ঞতা তাঁর আছে। তবে হাচিনসনের নাম আরকানসাসের বাইরে তেমন একটা ছড়ায়নি। জনমত জরিপে দেখা গেছে, রিপাবলিকানদের মধ্যে এ পর্যন্ত তাঁর কোনো সমর্থন নেই।

ক্রিস ক্রিস্টি (৬১): নিউ জার্সির সাবেক এই গভর্নর এবং ফেডারেল প্রসিকিউটর ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্পের অনুসারীদের তাণ্ডব চালানোর পর সাবেক প্রেসিডেন্টের কড়া সমালোচক হয়ে ওঠেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে আক্রমণ বাড়িয়ে চলেছেন ক্রিস্টি। জনমত জরিপ অনুযায়ী, ক্রিস্টি রিপাবলিকানদের মধ্যে প্রায় ১ শতাংশ সমর্থন অর্জন করতে পেরেছেন।

ডগ বারগাম (৬৭): বারগাম নর্থ ডাকোটার গভর্নর হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ পার করছেন। ২০০১ সালে তিনি তাঁর সফটওয়্যারের ব্যবসা মাইক্রোসফট করপোরেশনের কাছে বিক্রি করে দেন। কম কর ও কম প্রবিধানের প্রবক্তা হিসেবে তিনি নিজেকে একজন ঐতিহ্যবাহী রক্ষণশীল হিসেবে চিত্রিত করে থাকেন। বারগামের দাবি, তাঁর মনোযোগের কেন্দ্রে অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি।

আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সবচেয়ে কম পরিচিত প্রতিদ্বন্দ্বীদের একজন তিনি, জনমত জরিপ অনুযায়ী যাঁর সমর্থন প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।

উইল হার্ড (৪৬): ট্রাম্পের একজন কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত সাবেক কংগ্রেসম্যান উইল হার্ড। তিনি একজন মধ্যপন্থী রিপাবলিকান। তিনি দক্ষিণ টেক্সাস সীমান্তের একটি ডিসট্রিক্টের প্রতিনিধিত্ব করতেন। ২০২০ সালে পুনরায় নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ওই সময় আলাদা করে পরিচিতি পান তিনি। তিনি রিপাবলিকান দলের দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ প্রার্থী।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টি:

জো বাইডনে (৯১):  এরই মধ্যে তিনি সবচেয়ে বয়স্ক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। তাই হোয়াইট হাউসে আরও চার বছর থাকার মতো সামর্থ্য তাঁর আছে, এটা ভোটারদের তাঁকে বোঝাতে হবে। যদিও তাঁর বয়স নিয়ে উদ্বেগ আছে। তাঁর পক্ষে অনুমোদনের বিষয়টিও তেমন জোরালো নয়। তবে বাইডেনেই একমাত্র গণতান্ত্রিক প্রার্থী, যিনি ট্রাম্পকে হারাতে সক্ষম বলে দাবি সহযোগীদের। গত নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণার সময় বাইডেন বলেছিলেন, তাঁর কাজ যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র রক্ষা করা।

রবার্ট কেনেডি জুনিয়র (৬৯): অ্যান্টি-ভ্যাকসিন অবস্থানের জন্য পরিচিত পান তিনি। ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়নের জন্য দীর্ঘ লড়াই চালাচ্ছেন তিনি। বাইডেনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত তিনি। তাঁর বাবা মার্কিন সিনেটর রবার্ট এফ কেনেডি ১৯৬৮ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনয়নের দৌড়ে নেমে হত্যার শিকার হন।
এদিকে কোভিড–১৯ মহামারি ও ভ্যাকসিন নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে কেনেডি জুনিয়রকে ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ম্যারিনে উইলিয়ামসন: সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের লেখক ও ‘গুরু’ হিসেবে পরিচিত ম্যারিনে উইলিয়ামসন। তিনি দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে যাওয়ার দৌড়ে নেমেছেন। ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হিসেবে তিনি ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও মাঠে নেমেছিলেন। তবে কোনো ভোট হওয়ার আগেই বাদ পড়েন তিনি। মার্চ মাস থেকে উইলিয়ামসন দ্বিতীয় দফায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার শুরু করেছেন।

কর্নেল ওয়েস্ট: গ্রিন পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি মাঠে আছেন রাজনৈতিক কর্মী, দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ কর্নেল ওয়েস্ট। গত জুন মাসে তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতার জন্য তৃতীয় পক্ষের হয়ে মাঠে নেমেছেন। তিনি প্রগতিশীল, ডেমোক্র্যাটের প্রতি ঝোঁকা ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন। দারিদ্রের অবসান ও আবাসনের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন ওয়েস্ট।

নিজের প্রচার ব্যবস্থাপক হিসেবে পিটার ডাউকে নিয়োগ দিয়েছেন ওয়েস্ট। ডাউ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টা ছিলেন এবং ২০১৬ সালের ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের উপদেষ্টা ছিলেন।

Link copied!