দক্ষিণ চীন সাগরে চীন ও ফিলিপাইন গত কয়েক মাস ধরেই বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে মুখোমুখি অবস্থান করছে ।
রবিবার ( ১০ ডিসেম্বর ) সেখানে দুই দেশের জাহাজের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিতর্কিত জলসীমার মধ্যে চীনের বিরুদ্ধে হয়রানি, প্রতিবন্ধকতা ও বিপজ্জনক কৌশল প্রয়োগ করার অভিযোগ এনেছে ফিলিপাইন। তবে ফিলিপাইন অভিযোগ করে যে চীনারা নিজেদের তিনটি জাহাজকে বাধা দিতে জলকামান ব্যবহার করেছে ।
এছাড়াও বর্তমানে চীন, ফিলিপাইন সহ আরও কয়েকটি রাষ্ট্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে দক্ষিণ চীন সাগর।
ফিলিপাইন বলেছে, স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জ এলাকায় দ্বিতীয় থমাস শোলে তাদের মালবাহী বেসামরিক জাহাজগুলোকে টার্গেট করছে চীন। এই অঞ্চলটি নিয়েই বর্তমানে বিরোধ চলছে দুই দেশের মধ্যে।
এক বিবৃতিতে ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, খাদ্যসামগ্রী বহন করছিল এমন দুটি জাহাজের মধ্যে একটির ওপর চড়াও হয় চীনা কোস্টগার্ড। শুধু তাই নয়, জলকামান ব্যবহার করে ওই জাহাজটির ইঞ্জিনের বিপুল ক্ষতি সাধন করেছে তারা।
এদিকে চীনা কোস্টগার্ড পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, তাদের একাধিক কঠোর সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেই ফিলিপাইনের জাহাজটি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
এর আগে শনিবার ( ৯ ডিসেম্বর ) ফিলিপাইন অভিযোগ করেছিল, চীনা কোস্টগার্ড জলকামান ব্যবহার করে তাদের তিনটি জাহাজকে বাধা প্রদান করেছিল। বিষয়টিকে ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ ‘অবৈধ এবং আক্রমণাত্মক’ হিসেবে বর্ণনা করেছিল। তবে এই বিষয়ে বেইজিংয়ের বক্তব্য তারা তাদের জলসীমায় নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
গত সপ্তাহেও বিরোধপূর্ণ জলসীমায় চীন ১৩৫টি জাহাজ জড়ো করেছে বলে অভিযোগ করেছিল ফিলিপাইন।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীন ও ফিলিপাইনের মধ্যে এমন বিরোধের সূত্রপাত হয়েছে গত বছর ফার্দিনান্দ জুনিয়র মার্কোস জুনিয়র ফিলিপাইনের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে। মার্কোসকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
গত মাসেই দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি যৌথ নজরদারি মহড়া পরিচালনা করেছিল ফিলিপাইনের কোস্টগার্ড। কয়েক দিন আগে অস্ট্রেলিয়ার সাথেও একই ধরনের আরেকটি মহড়া পরিচালনা করে ফিলিপাইন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহু বছর ধরেই দক্ষিণ চীন সাগরের ৯০ শতাংশ অঞ্চল দাবি করে এসেছে চীন। তবে ২০১৬ সালে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি আদালত দেশটির এমন দাবিকে অবৈধ হিসেবে রায় প্রদান করে।
একটি ব্যবহৃত টিস্যুর সাথে এই রায়কে তুলনা করে চীনা কর্তৃপক্ষ বিতর্কিত অঞ্চলগুলোতে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া অব্যাহত রেখেছে। এতে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে অংশীদার রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ধীরে ধীরে বিরোধ বাড়ছে।
২০২১ সালে ২০০টির বেশি চীনা জাহাজ মোতায়েনের মাধ্যমে ম্যানিলা ও বেইজিংয়ের মধ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তখন ম্যানিলা জোর দিয়েছিল যে ফিলিপাইনের একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাদের অনুপ্রবেশ বেআইনি।
তবে এ নিয়ে চীন বলেছে, তারা বৈরি আবহাওয়ার সময় মাছ ধরার নৌকাগুলোকে আশ্রয় দিয়েছিল।
এদিকে চীনা জাহাজের ওপর নজরদারি বাড়াতে দক্ষিণ চীন সাগরের সবচেয়ে বড় দ্বীপে একটি কোস্ট গার্ড স্টেশন স্থাপন করার ঘোষণা করেছে ফিলিপাইন।