খালিস্তানি আন্দোলনকারী হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ভারত-কানাডা সম্পর্কে স্থায়ী অবনতি ঘটলে গন্তব্য হিসেবে কানাডার ওই কদর ভারতীয়দের কাছে থাকবে কি না সন্দেহ।
ধারাবাহিকতার নিরিখে দেশত্যাগী ভারতীয়দের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের পর কানাডার গ্রহণযোগ্যতাই সবচেয়ে বেশি। তৃতীয় স্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, চতুর্থ স্থানে যুক্তরাজ্য।
ভারতীয়দের বড় একটা অংশ যাচ্ছে কানাডায়। নরেন্দ্র মোদির ‘নতুন ভারত’ ও কেন নাগরিকদের ধরে রাখতে পারছে না, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই।
দেশত্যাগী ভারতীয়দের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই সবচেয়ে বেশি কদর কানাডার। গত সাড়ে ৫ বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার ৯১৭ ভারতীয় দেশত্যাগী হয়ে কানাডার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। এই সাড়ে পাঁচ বছরে ভারতীয় নাগরিকত্ব ছেড়ে বিদেশে চলে গেছেন ৮ লাখ ৩৯ হাজার ৮৫০ জন।
সংসদে পেশ করা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক তালিকা অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার মানুষ ভারতের নাগরিকত্ব ছেড়ে বিদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।
পৃথিবীর মোট ১১৪টি দেশ ভারতীয়দের গন্তব্য হলেও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। নিউজিল্যান্ডেও এই সময়ে থিতু হয়েছেন প্রায় ২৩ হাজার ভারতীয়।
লক্ষণীয়, যে পাঁচ দেশ ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির সাহায্যে অপরাধের কিনারায় গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের জন্য জোটবদ্ধ, যে জোটের পোশাকি নাম ‘ফাইভ আইজ’, যার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিজ্জর হত্যায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভারতকে সন্দেহ করছেন, এই পাঁচ দেশই সেই জোটের অংশীদার।
ভারতীয়দের কাছে বসবাসযোগ্য দেশ হিসেবে তাদের প্রাধান্যই বেশি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় যাওয়া মানুষের সংখ্যা মোট হিসাবের ৫৮ শতাংশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছর প্রায় সোয়া লাখ থেকে দেড় লাখ ভারতীয় দেশের নাগরিকত্ব ছাড়ছেন। সাম্প্রতিক কালে সবচেয়ে বেশি ভারতীয় দেশত্যাগ করেছেন ২০২২ সালে— ২ লাখ ২৫ হাজার ৬২০ জন।
২০১১ সালে থেকে দেওয়া সরকারি হিসাবে দেখা যাচ্ছে- পছন্দের দেশের তালিকায় জার্মানি, ইতালি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, পর্তুগাল, সুইডেন, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত যেমন আছে, তেমনই রয়েছে মালয়েশিয়া, ইসরায়েল, এমনকি চীনও।
নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের পর কানাডার হিন্দু ভারতীয়দের দেশছাড়া করার হুমকি দিয়েছে সে দেশের খালিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখ সম্প্রদায়ের একাংশ। সেই হুমকি ও প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর অভিযোগের পর ভারতীয় নাগরিক ও অভিবাসীদের সজাগ ও সতর্ক থাকার নির্দেশ জারি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভারতের পক্ষে স্বস্তির কথা, কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের মধ্য থেকেই ওই হুমকির বিরোধিতা শুরু হয়েছে। কানাডা সরকারও তা রুখতে সচেষ্ট।