জুন ২৪, ২০২৩, ০৫:০৪ পিএম
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ২০১৭ সালে জামিনে বের হওয়ার পর থেকেই পলাতক জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রতিষ্ঠাতা (মোস্ট ওয়ান্টেড) শামিন মাহফুজ ও তার স্ত্রী ফাতিমা গ্রেফতার হয়েছেন।
শামিন মাহফুজ পাহাড়ে জঙ্গি ট্রেনিং করাতেন বলে শিক্ষক হিসেবে উগ্রপন্থিরা শামিনকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করত। পার্বত্য এলাকায় জঙ্গি কার্যক্রমের সময় সংগঠনের সদস্যদের কাছে এই বার্তা আদান-প্রদান জন্য ব্যবহার করতেন ‘মেন্ডিং মুরং’ নামটি।
শুক্রবার (২৩ জুন) রাতে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। এ সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক জব্দ করা হয়েছে।
শনিবার (২৪ জুন) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন করেন সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান ।
তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে ডেমরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শামিন মাহফুজ ও তার স্ত্রী ফাতিমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত শামিন মাহফুজ ওরফে আরিফ আসলাম ওরফে মেন্ডিং মুরং জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়া এর শীর্ষ নেতা ও মূল পরিকল্পনাকারী এবং তার স্ত্রী উক্ত সংগঠনের নারী শাখার সদস্য।
জিজ্ঞাসাবাদে শামিন জানান, ২০১৪ সালে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তার সাথে বিভিন্ন নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি, হুজি, আনসার আল ইসলাম এর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথোপকথন ও যোগাযোগ হয়। এ সময়কালে হরকাতুল জিহাদ (হুজি) ও জামায়াতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এর গ্রেফতারকৃত নেতারা জেলখানায় বসে এসকল সংগঠনের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি নতুন সংগঠন করার বিষয়ে আলোচনা করে। এই উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে শামিন মাহফুজ সংগঠনের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান শুরু করেন।
শামিন মাহফুজ নতুন সংগঠনের জন্য সদস্য সংগ্রহের কাজ করতে থাকেন এবং একই সাথে পাহাড়ে ক্যাম্পে ট্রেনিং এর অবকাঠামো তৈরির কাজ করতে থাকেন। এ সময় রক্সি, তমাল, রাকিব ওরফে জনি, রনবীর ওরফে বিকাশদের সাথে তার যোগাযোগ হয়। জেলখানার পরিকল্পনা মোতাবেক সে হুজি, জেএমবিসহ অন্যান্য সংগঠনগুলোর সদস্যদের সমন্বয়ে একটি নতুন সংগঠন তৈরির জন্য কাজ শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে বম জাতি গোষ্ঠির সদস্য নাথান কম এর সাথে তার সখ্যতা ছিল।
শামিন মাহফুজ পড়াশুনা করতেন সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে আর নাথান বম পড়াশুনা করতেন চারুকলা বিভাগে। সে কেএনএফ-এর সাথে সশস্ত্র জিহাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে একত্রে কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়ে নাথান বমের সাথে আলোচনা করে যার ধারাবাহিকতায় শামিন মাহফুজের উদ্যোগে ২০২০ সালের মার্চ/ এপ্রিলের দিকে কক্সবাজার জেলার কলাতলী এলাকায় হোটেল বে ওয়ান্ডার্সে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সঙ্গে সমাঝোতা চুক্তি হয় নতুন জঙ্গি সংগঠনটির।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার স্ত্রী জানায় যে, সেও এই সংগঠনের নারী সদস্যদের নেত্রী। সে একসময় আনসার আল ইসলামের প্রধান নেতা ইজাজ কারগিলের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিল। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে শামীন মাহফুজ ও তার স্ত্রীর কি সম্পর্ক রয়েছে তা জানা যাবে।
গ্রেফতারকৃতদের ডেমরা থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলায় আটক দেখিয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ (দশ) দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।