দেশে দেশে ইফতারে বৈচিত্র্য

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ২৮, ২০২৩, ০৪:২৪ পিএম

দেশে দেশে ইফতারে বৈচিত্র্য

বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ পালন করছে পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান। আর রোজাদারের কাছে সবচেয়ে কাঙ্খিত মুহূর্ত ইফতারের সময়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের কাছে ইফতার ও সেহরির ধরন বিভিন্ন রকম। তবে বিভিন্ন দেশের ইফতার ও সেহরিতে  কতিপয় সাধারণ আইটেম দেখা যার মধ্যে খেজুর ও রুহ আফজা অন্যতম।

সৌদি আরব

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ সৌদি আরব। ইফতারে সৌদিরা ‘অ্যারাবিক কফি’ পান করে থাকেন। আর খেজুর তো থাকেই। সুপ, ভাজা অথবা বেক করা নানা ধরণের পেস্ট্রি খেয়ে থাকেন তাঁরা। আর সৌদির পূর্বাঞ্চলের লোকেরা ইফতারে সালুনা নামের একটি খাবার খান, যা মাংস ও সবজির স্টু দিয়ে তৈরি। সৌদিরা খেজুর ও ক্রিমজাতীয় খাবার খেয়ে নামাজ পড়তে যান। এরপর লেবন হালিব, যা আমাদের দেশের বিরিয়ানির মতো ও মিষ্টিজাতীয় খাবার হারিসা কোনাফা খেয়ে থাকেন।

পাকিস্তান

পাকিস্তানে বেশ উদ্দীপনার সাথে পবিত্র রমজান পালন করা হয়। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের ইফতারের টেবিলে রুটি ও গরুর মাংস থাকতে হবে। এটা তাদের ঐতিহ্য। এছাড়াও আরো থাকে ফল, ফলের সালাদ, ফালুদা, টিক্কা, বিভিন্ন ধরনের সরবত,ফালুদা, কাবাব ও বিরিয়ানি।

ভারত

মুসলিম প্রধান দেশ না হলেও ভারতে প্রায় ২০ কোটি মুসলমান রয়েছেন। দেশটিতে বিভিন্ন রাজ্যে ইফতারের আইটেমে রয়েছে ভিন্নতা। হায়দরাবাদ শহরে ইফতার শুরু হয় সুস্বাদু হালিম দিয়ে। অপর দিকে কেরালা ও তামিলনাড়ুর মুসলমানরা ইফতার করেন নমবু কাঞ্জি নামে একধরনের খাবার দিয়ে। মাংস, সবজি ও পরিজ দিয়ে প্রস্তুত করতে হয় খাবারটি। এ ছাড়া দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে ইফতারের শুরুতে থাকে খেজুর, তাজা ফল, ফলের রস। এরপর পাকোড়া,সামোসার মতো ভাজা আইটেমও থাকে।

ইরান

ইফতারে ইরানের ঘরে ঘরে তৈরি হয় জাফরানের ঘ্রাণযুক্ত একধরনের হালুয়া। আর নামাজ শেষে তারা খায় স্যান্ডউইচ, মিষ্টি চা, তাবরেজি চিজ। আশ রাসতেহ নামে একটি ঘন সবজির স্যুপও সেখানে ইফতারের সময় আগ্রহ নিয়ে খাওয়া হয়।

মরক্কো

মরক্কোয় ইফতারকে বলা হয় এফতোর। ইফতারের সময় দেশটির রাস্তাগুলো পরিণত হয় খাবারের বাজারে। মরক্কোর অধিবাসীরা একটু বেশি সময় নিয়ে ইফতার করে থাকেন। তাদের ইফতারের টেবিলে থাকে রিজ্জা, ক্রাচেল, মিস্সামেন, হারিরা, ব্রিওয়াত, স্টিল্লা, হারশা, স্যাল্লো, রিজ্জা নামে ঐতিহ্যবাহী খাবার।

কানাডা

উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডায় রোজার সময় ১৪ ঘণ্টা। দেশটিতে আজান শোনার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। তবে ইফতারের সময় হলে আলার্ম বাজানো হয়। অ্যালার্ম বাজলেই ইফতার শুরু হয়। কেউ অফিস থেকে ফেরার সময় কেনা কাবাব-রুটি-বিরিয়ানি দিয়ে ইফতার সারেন। আর অফিসে থাকলে ১৫ মিনিটের বিরতি নিয়ে খেজুর-পানি মুখে দিয়েই ইফতার করেন।

কাতার

কাতারের বহুল জনপ্রিয় একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হারিস। মাংসের টুকরা মিলিয়ে গম সিদ্ধ করে রান্না হয় হারিস। এটি কেননা রোজাদারদের বেশ ক্যালোরি জুগিয়ে থাকে। তাছাড়া খাবারটি উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যে উপকারী।

মিশর

মিশরে ধুমধাম করে রোজা পালন করা হয়। সাধারণ পানি ও খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙেন মিশরীরা। তবে প্রধান ইফতার সামগ্রীতে থাকে আটা, বাদাম, মধু, কিসমিস ছড়ানো এক ধরনের কেক জাতীয় খাবার,তাছাড়া খেজুর, খুবানি কালোজাম মিশানো ফলের ককটেল। তাছাড়া রমজান উপলক্ষে চাঁদ আকৃতির এক ধরনের রুটি তৈরি করে যার নাম খাবস্ রমজান।

দশম শতকে মিসরে যখন ফাতেমি খিলাফত ছিল, তখন কায়রোর মুক্বাতাম পাহাড়ে একটি কামান বসানো হয়েছিল। ওই কামানের গোলা ছুড়ে একই সময় সকল নগরবাসীকে ইফতারের সঙ্কেত দেয়া হতো। এখনও অনেক জায়গায় কামানের গোলা ছুড়ে ইফতারের সময় জানান দেওয়া হয়।

মালয়েশিয়া

ইফতারকে মালয়েশিয়ানরা বলেন ‘বারবুকা পুয়াসা’। খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার শুরু করেন তাঁরা। বান্দুং ড্রিংক, আখের রস, সয়াবিন মিল্ক নামের রকমারি পানীয় থাকে। ভারী খাবারের মধ্যে থাকে চিকেন রাইস, নাসি লেমাক, লাকসা।

Link copied!