বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বদলে যায় গণমাধ্যমের চরিত্র

শামস তারেক আজিজ

আগস্ট ১৫, ২০২৩, ০৯:৪১ এএম

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বদলে যায় গণমাধ্যমের চরিত্র

সংগৃহীত ছবি

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘটে গিয়েছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড। সপরিবারে হত্যা করা হয় বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শুধু হত্যা করেই শান্ত হয়নি ঘাতকেরা। ক্ষমতায় অবৈধভাবে আরোহণ করে ইতিহাসের পাতা থেকে পুরোপরি মুছে ফেলতে চায় বঙ্গবন্ধু নামটি। এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তৎকালীন সংবাদপত্রের সার্বিক চিত্র বদলে যেতে থাকে। এ হত্যাকাণ্ডের আগেও যেখানে সেই সংবাদপত্রের পাতায় নির্দ্বিধায় প্রকাশ করা হতো বঙ্গবন্ধুর ছবি, লেখা হতো তাঁর নাম, সেখানে মাত্র একদিনের ব্যবধানে বদলে যায় সবকিছুই। এমনকি পরদিন কোনো পত্রিকাতেই স্পষ্টভাবে ছাপা হয়নি এই হত্যার কোনো খবর। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এবং পরবর্তীকালে প্রকাশিত পত্রিকাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়,  ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ড ভোরের দিকে ঘটায় ততক্ষণে সব পত্রিকার ছাপা শেষ হয়েছিল, তাই কোনোটিতেই দেখা যায়নি এ সম্পর্কিত কোনো সংবাদ। সেদিন দৈনিক ইত্তেফাকের ফ্রন্টপেজে ছাপা হয় “বঙ্গবন্ধু আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করিবেন” শিরোনামের একটি সংবাদ। 

ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য বাংলাদেশ অবজার্ভার’ এর সমগ্র ফ্রন্টপেজ জুড়েই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে খবর ছাপতে দেখা যায় সেদিন।পত্রিকাটির সেদিনের প্রধান শিরোনাম ছিল “BANGABANDHU VISITS DU TODAY, Hearty welcome will be accorded” । এতে প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ছয়টি প্রতিবেদনের শিরোনামে সরাসরি বঙ্গবন্ধু শব্দটি উল্লেখ ছিল।

কিন্তু একদিনের মাঝেই বদলে যায় সংবাদপত্রগুলোর সামগ্রিক অবস্থা । ১৬ তারিখ দেশের ক্ষমতা বদলের কথা জানায় প্রায় সকল পত্রিকা, শুধু স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি হত্যাকাণ্ডের কথা। 

কয়েকটি পত্রিকা বঙ্গবন্ধু ‘নিহত’ বলে উল্লেখ করলেও জানায়নি আসল কারণ। সেদিন ‘দ্য বাংলাদেশ অবজারভারের’ প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘Mustaque becomes president’।  শোল্ডারে লেখা ছিল- ‘Armed Forces take over: Martial Law proclaimed: Curfew imposed’। আর মূল শিরোনামের নিচে কিকারে ছোট করে লেখা ছিল ‘ Mujib Killed: Situations remain calm’।  

এছাড়া প্রথম পৃষ্ঠায় একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়, ‘Historical Necessity’ শিরোনামে।

দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম ছিল “খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ”। এছাড়া প্রথম পাতায়ই “ঐতিহাসিক নবযাত্রা” নামক একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয় সেদিন।  

‘দ্য বাংলাদেশ টাইমসের’ আট কলামের প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘‘MUSTAQUE ASSUMES PRESIDENCY” এই শিরোনামের, শোল্ডারে লেখা ছিল, ‘Martial Law Proclaimed in the country : Mujib Killed’ প্রধান খবরের সাথে মোশতাকের শপথের ছবি ছাপা হয়েছিল। 

দৈনিক বাংলা ও আট কলামের শিরোনামে ছাপায় “খন্দকার মুসতাক নয়া রাষ্ট্রপতি” এর শোল্ডারে লেখা ছিল “শেখ মুজিব নিহত: সামরিক ও সান্ধ্য আইন জারি: সশস্ত্র বাহিনীর আনুগত্য প্রকাশ” 

১৭ আগস্ট  দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত হয়,  মুশতাক সরকারকে কয়েকটি দেশের স্বীকৃতির খবর। 

দৈনিক ইত্তেফাকে ১৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দাফনের খবর ছাপা হয় মাত্র ৩৭ শব্দে। 

দ্য ডেইলি অবজারভারও সেদিন গুরুত্ব দিয়েছিল নতুন সরকারের প্রতি সৌদি আরব ও সুদানের স্বীকৃতিকে। তারা টুঙ্গিপাড়ায় মুজিবের দাফনের কথা ছাপায় মাত্র ২৪ শব্দের। 

বিদেশি পত্রিকাদের মাঝে ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ ১৬ আগস্ট নয়া দিল্লি থেকে জানায়,  "A military-backed government believed to favour both Islam and the West took power in Bangladesh today after a bloody predawn coup." 

সেদিন সমগ্র ভারতব্যাপী প্রচারিত একটি রেডিও, ‘রেডিও আকাশবাণী’  প্রচার করে "Jesus died. Now millions of people remember him by wearing cross. Perhaps, once Mujib as well will be like that." 

১৭ আগস্ট ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ ‘‘Fall of an Idol” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে।

Link copied!