জানুয়ারি ১৭, ২০২৪, ০৯:২৩ পিএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রবেশের পর নতুন-পুরাতন মুখ নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। মোট ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট কেবিনেটে প্রধানমন্ত্রী বাদে পূর্ণ মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন ২৫ জন, আর প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন ১১ জন। নতুন মন্ত্রিসভায় এবার প্রথমবারের মতো ১৪ জন যুক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠন করা নতুন এই মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
তুখোড় ছাত্রনেতা উবায়দুল মোকতাদির মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তারপর সরকারি চাকরি শেষে ফিরেছেন রাজনীতির অঙ্গনে। হয়েছেন চারবারের সংসদ সদস্য। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে প্রথমবারের মতো মন্ত্রিত্ব পেলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের এই সংসদ সদস্য।
২০১০ সালের ২২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট লুৎফুল হাই সাচ্চু মৃত্যুবরণ করলে এই আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
নবম জাতীয় সংসদে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, দশম জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং একাদশ জাতীয় সংসদে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হন তিনি।
১৯৫৫ সালের ১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চিনাইর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তার বাবার নাম মো. আবদুর রউফ চৌধুরী।
ঢাকা মাদ্রাসা-ই-আলীয়া থেকে ফাজিল পাশ করার পর ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্রদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রথম সাধারণ সম্পাদক তিনি। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালের মুজিব বাহিনীর অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এ সময় পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে তাঁর একটি পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ১৯৭৩-৭৪ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গ্রন্থনাও প্রকাশনা সম্পাদক এবং ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন হলে ২১ সদস্যবিশিষ্ট ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত হন। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর দেশব্যাপী গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলন ও প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রাখেন তিনি। গ্রেফতার হয়ে প্রায় দুই বছর কারাবরণও করেন এই রাজনীতিবিদ।
১৯৮৩ সালে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন এবং ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন।
আর এই দীর্ঘ পথচলার ফলস্বরূপ মন্ত্রী হিসেবে পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব পেলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের।