আওয়ামী লীগের জোট বঞ্চিতরাই রওশনের কমিটিতে

জাতীয় ডেস্ক

মার্চ ৯, ২০২৪, ০৯:৪৫ এএম

আওয়ামী লীগের জোট বঞ্চিতরাই রওশনের কমিটিতে

ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোটে জাতীয় নির্বাচন করতে না পারা নেতৃত্ব দিয়েই নতুন কমিটি ঘোষণা দিয়েছে রওশনপন্থী জাতীয় পার্টি। তাদের অনেককেই জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

নতুন কাউন্সিলে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন বাবলাকে। এছাড়া কো-চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন সাইদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সাদ এরশাদ, গোলাম সারওয়ার মিলন, বাবু সুনীল শুভ রায়সহ আরও অনেকে।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। দলটির সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে না পারায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে একাধিক দফায় সময় চেয়ে নিয়েছিল জাপা। সেই সময়ও গত হয়েছে কয়েক মাস আগেই। কিন্তু কাউন্সিল করতে পারেনি জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে থাকা দলটি।

আর এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাচ্ছেন রওশন এরশাদ। হঠাৎ করেই একতরফাভাবে জাতীয় পার্টির কাউন্সিল ডাকেন রওশন এরশাদ। এরপর তাকে সামনে রেখে বর্ধিত সভাসহ নানান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। রওশনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন সিনিয়র প্রভাবশালী নেতাকে এর মধ্যেই বহিষ্কার করেছেন জি এম কাদের।

গত ২৮ জানুয়ারি রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেন। একই সঙ্গে নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি। রওশন এরশাদ দাবি করেছেন, তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুরোধে এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

রওশনপন্থীরা জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির অন্য অংশের চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবকে মানতে চাইছেন না। আর অন্যান্য সব কমিটিকে তাদের কমিটি বলে দাবি করে আসছেন। তারা বলতে চাইছেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সব জেলা-উপজেলা কমিটি তাদের সঙ্গে রয়েছে। তারা কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।

জাতীয় পার্টি এখন অর্ধ ডজন
সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির এখন ৬ টুকরা হয়েছে। জাপা প্রথম ভাঙনের শিকার হয় ১৯৯৯ সালে। তখন কারাবন্দী এরশাদের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন সংসদ সদস্য ও কয়েকজন সিনিয়র নেতা। মিজানুর রহমান চৌধুরী-আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে গঠন করা হয় পৃথক জাতীয় পার্টি (মিম)। ওই ভাঙন ছিল সবচেয়ে বড় ভাঙন। তখন অল্পের জন্য সংসদীয় নেতার পদ রক্ষা করতে সক্ষম হন কারাবন্দী এরশাদ। পরে দলীয় প্রতীক লাঙল নিয়ে টানা হেচড়া করেন জাতীয় পার্টি (মিম)। শেষ পর্যন্ত কোর্টে গড়ায় বিষয়টি। তখন কোর্টে এরশাদের পক্ষে লড়েছিলেন সহধর্মীনী রওশন এরশাদ। জাপার ওই অংশটি এখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরীক। নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পার্টি জেপি নামে নিবন্ধিত অংশটির প্রতীক বাইসাইকেল।

২০০০ সালে জাতীয় পার্টি তখন বিএনপি জোটের দিকে ঝুঁকেছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনের পুর্বে হঠাৎ ইউটার্ন নিলে তৎকালীন মহাসচিব প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জু ও কাজী ফিরোজ রশীদের নেতৃত্বে আরেকবার ভাঙ্গনের মুখে পড়ে জাপা। এবার সৃষ্টি হয় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (নাফি) বিজেপি। যে দল এখনও জাতীয় পার্টি বিজেপি নামে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে রয়ে গেছে। এই অংশও ইসিতে নিবন্ধিত তাদের দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়েছে গরুর গাড়ি।

বিজেপি ভেঙে আরেকটি দল হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি নামে। এই অংশও ইসিতে নিবন্ধিত। কাঁঠাল প্রতীক পাওয়া ওই অংশের ইসির নিবন্ধন নম্বর ০২৮।

সর্বশেষ ভাঙনের শিকার হয় ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর। সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত কাজী জাফর আহমেদের হাত ধরে। তখনও বেশ কিছু প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ বের হয়ে গিয়ে নতুন জাতীয় পার্টি (জাফর) সৃষ্টি করেন। এই অংশও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে সক্রিয় রয়েছে।

Link copied!