আগস্ট ১৬, ২০২৪, ০১:৪৭ পিএম
১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মানুষকে বিবস্ত্র করা থেকে গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনাগুলো যারা ঘটিয়েছে, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে উল্লেখ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম।
ছাত্রসমাজ এই সংকটের সময় যা করেছে, তার জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। ছাত্রসমাজ রাস্তায় থাকা কখনোই একটি দেশের স্থিতিশীলতার পরিচয় না। ইভেন (এমনকি) পুলিশের যেখানে দায়িত্ব পালনের কথা, ট্রাফিকের কথা যদি বলি, সেখানে না থাকাও স্থিতিশীলতার পরিচয় না। দেশের স্থিতিশীলতার জন্য যার যেখানে দায়িত্ব সেখানে ফিরে যাওয়া উচিত
- সারজিস আলম
সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অমর একুশে হল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে এই কথা বলেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবারের ঘটনার সমালোচনা করে সারজিস বলেন, “আমরা বিভিন্ন ভাইরাল ভিডিও দেখেছি, বাবার বয়সের একজন মানুষকে কান ধরে উঠবস করানো হচ্ছে। একজনকে বিবস্ত্র করা হয়েছে ও মানুষ যাচ্ছেতাই বলছে। অসংখ্য মানুষের ফোন চেক করা হচ্ছে। মায়ের বয়সের একজনের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলার ঘটনাও আমাদের চোখ এড়ায়নি।”
আরও পড়ুন: উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনা: আসিফ মাহমুদ
এ সময় “আমরা লক্ষ্য করেছি ধানমন্ডি-৩২ নম্বরসহ বিভিন্ন স্থানে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হয়েছে যা আমাদের গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে যায় না” বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কেউ শোক পালন করতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া যাবে না বলেও সাংবাদিকদের সামনে উল্লেখ করেছেন সারজিস আলম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, “দেশে বিভিন্ন আদর্শের দল থাকতে পারে। আওয়ামী লীগ যা করেছিল তার ফল তারা ভোগ করবে। কিন্তু কেউ যদি নির্যাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় সেটা আমরা কখনও মেনে নেবো না। এর জন্য আমরা গণঅভ্যুত্থান করিনি। আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট বার্তা, ১৫ আগস্টে যদি কেউ তার অবস্থান থেকে শোক পালন করতে চায়, ফুল দিতে চায়, আমাদের জায়গা থেকে আমরা কখনও তাদের বাধা দিতে পারিনা। ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েও আপনি যদি আপনার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চান, আমরা একে সমর্থন করি না।”
আমরা বিভিন্ন ভাইরাল ভিডিও দেখেছি, বাবার বয়সের একজন মানুষকে কান ধরে উঠবস করানো হচ্ছে। একজনকে বিবস্ত্র করা হয়েছে ও মানুষ যাচ্ছেতাই বলছে। অসংখ্য মানুষের ফোন চেক করা হচ্ছে। মায়ের বয়সের একজনের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলার ঘটনাও আমাদের চোখ এড়ায়নি
- সারজিস আলম
সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
তিনি আরও বলেন, “গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা যা দেখেছি তাতে স্টুডেন্টদেরও (ছাত্র) কিছু পার্টিসিপেশন (অংশগ্রহণ) ছিল। আমরা জানি না তারা প্রকৃত অর্থে কোন মতাদর্শ ধারণ করে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সবাই একসঙ্গে বসে কথা বলেছি, আমরা স্পষ্ট বলি, আমরা খুঁজছি, এগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনও সমন্বয়ক বা সহ সমন্বয়ক (জড়িত) আছেন কিনা। আমরা তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যদি সিঙ্গেল একজনকেও সমন্বয়ক বা সহ সমন্বয়ক এর সঙ্গে জড়িত পাই, আমরা তাকে বহিষ্কার করবো।”
বৈষম্যবিরোধীর (ছাত্র আন্দোলনের) নাম ভাঙিয়ে আমরা যারা সমন্বয়ক, সহ-সমন্বয়ক, আমরা কোথাও অথরিটি খাটাতে যাইনি। আমরা বলেছি, ন্যায্য জিনিসই যেন বাস্তবায়ন হয়। এখন ভুয়া অনেক সমন্বয়ক তৈরি হয়েছে। আমরা কোনও অথরিটি নই, আমরা একটি প্রেসার গ্রুপ। আমরা বলতে পারি দুর্নীতি হচ্ছে, দুর্নীতিবাজকে সরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু আমরা কাউকে সরিয়ে দিতে পারি না
- সারজিস আলম
সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
সমন্বয়ক সারজিস বলেন, “অতিরঞ্জিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত যদি কাউকে আমরা পাই ও ভবিষ্যতেও যদি এমন কোনও ঘটনা হয় তবে এই রিলেটেড সবাইকে, কারণ তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তারা যেটা করেছে একজনকে বিবস্ত্র করা থেকে শুরু করে গায়ে হাত তোলা এগুলো কোনওদিন আইনসঙ্গত নয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত যা কিছু করা প্রয়োজন একটি প্রেসার গ্রুপ হিসেবে আমরা করবো। আমাদের দুজন যেহতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আছে, তাদের মাধ্যমে যেভাবে বিচার নিশ্চিত করা যায় আমরা করবো।”
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সারজিস বলেন, “ছাত্রসমাজ এই সংকটের সময় যা করেছে, তার জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। ছাত্রসমাজ রাস্তায় থাকা কখনোই একটি দেশের স্থিতিশীলতার পরিচয় না। ইভেন (এমনকি) পুলিশের যেখানে দায়িত্ব পালনের কথা, ট্রাফিকের কথা যদি বলি, সেখানে না থাকাও স্থিতিশীলতার পরিচয় না। দেশের স্থিতিশীলতার জন্য যার যেখানে দায়িত্ব সেখানে ফিরে যাওয়া উচিত।”
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে চাপপ্রয়োগ না করতে মার্কিন সরকারের কাছে তদবির করেছিল ভারত
তিনি আরও বলেন, “পুলিশ দায়িত্বে ফিরছে। সেক্ষেত্রে ছাত্র সমাজের প্রতি আমাদের আহ্বান, যেখানে যখন ট্র্যাফিক বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টিম আসবে, সেখানে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে ছাত্রসমাজকে সরে যেতে হবে। আপনাদের অবশ্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে হবে, ক্লাসে ফিরে যেতে হবে ও পড়ার টেবিলে ফিরতে হবে।”
সারাদেশে অনেক ভুয়া সমন্বয়ক তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধীর (ছাত্র আন্দোলনের) নাম ভাঙিয়ে আমরা যারা সমন্বয়ক, সহ-সমন্বয়ক, আমরা কোথাও অথরিটি খাটাতে যাইনি। আমরা বলেছি, ন্যায্য জিনিসই যেন বাস্তবায়ন হয়। এখন ভুয়া অনেক সমন্বয়ক তৈরি হয়েছে। আমরা কোনও অথরিটি নই, আমরা একটি প্রেসার গ্রুপ। আমরা বলতে পারি দুর্নীতি হচ্ছে, দুর্নীতিবাজকে সরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু আমরা কাউকে সরিয়ে দিতে পারি না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা দেখছি অনেককেই পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে, আমরা এটা করতে পারি না। এখন অসংখ্য ভুয়া সমন্বয়ক তৈরি হচ্ছে, তারা বিভিন্ন কাজ করছে। আমরা মনে করি, হয় তারা ব্যক্তিগত স্বার্থে এটা করছে, লুটপাট বা অর্থ আত্মসাতের জন্য করছে বা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ থাকতে পারে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কখনোই এমন কিছু প্রোমোট করে না যে কেউ একটি হোস্টেলে গিয়ে সার্চ করবে। কেউ আবাসিক হোটেলে যাবে, কেউ একজন অধ্যাপককে জোর করে নামিয়ে দেবে। আমরা দাবি জানাতে পারি, অথোরিটি সিদ্ধান্ত নেবে তারা এটা করবে কিনা। সেটাও তদন্তের ভিত্তিতে হওয়া উচিত।”