‘টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে’: জুলাই বিপ্লবের প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে দাঁড়ালেন উমামা ফাতেমা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ২৮, ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম

‘টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে’: জুলাই বিপ্লবের প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে দাঁড়ালেন উমামা ফাতেমা

গত বছরের ঐতিহাসিক জুলাই ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী প্ল্যাটফর্মবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার ভোরে নিজের যাচাইকৃত ফেসবুক পেজে একটি দীর্ঘ আবেগঘন পোস্টে তিনি সিদ্ধান্তের কথা জানান।

উমামা অভিযোগ করেন, প্ল্যাটফর্মের অভ্যন্তরে বিশ্বাসভঙ্গ, রাজনৈতিক কৌশল এবং নেতৃত্বের স্বার্থান্বেষী আচরণে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন।

আমি প্ল্যাটফর্মে এসেছিলাম জুলাই আন্দোলনের স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রাখতে। কিন্তু এখানে এসে দেখি, ‘সংস্কার’, ‘জুলাই’, ‘শহীদ’, ‘আহত’—এসব শুধুই ফাঁকা শব্দ,” লেখেন তিনি।

তিনি জানান, মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে স্বাধীনভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে তাঁকে বাধার মুখে পড়তে হয়।

অনলাইন এবং অফলাইনে আমাকে চাপে রাখা হয় যাতে আমি এই ব্যানারে কাজ না করি। আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম, কিন্তু একপর্যায়ে আমাকে কার্যত দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়।

উমামা ফাতেমা আরও দাবি করেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠনের মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নষ্ট হয়েছে।

আমি এনসিপি গঠনের পরও এই প্ল্যাটফর্মে কাজ করে জুলাইয়ের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বুঝেছিযদি এটি দলমুক্তভাবে চলত, তাহলে অনেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ত।

তিনি অভিযোগ করেন, যারা একসময় সভা-সমাবেশে তাঁর পাশে ছিলেন, তারাই পরে জুনিয়রদের ব্যবহার করে তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছেন।

যাদের একসময় ভাই মনে করেছি, তারাই সুযোগ ফুরালে টিস্যু পেপারের মতো ফেলে দিয়েছে।

উমামা জানান, প্ল্যাটফর্মে কিছু আন্তরিক সদস্য থাকলেও নেতৃত্বে থাকা সুবিধাবাদীরা তাদেরও কোণঠাসা করে ফেলেছেন। তিনি বলেন, এপ্রিলমে থেকেই কার্যত সংগঠন থেকে দূরে ছিলেন, তবে আবেগের কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে দাঁড়াতে পারেননি।

তিনি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কাউন্সিল নির্বাচনকেও প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করেন। ২৫ জুন দুপুর থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের পর রাতে ফলাফল প্রকাশিত হয়।

ভোটে অংশ না নেওয়া একজন ব্যক্তি কিভাবে কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য হলেন? এসব দেখে আমি লজ্জিত হতাশ। একই স্বজনপ্রীতি, একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত আর চাটুকারদের খেলা চলে এখানে।

নবনির্বাচিত কমিটিতে রাশিদুল ইসলাম (রিফাত রাশিদ) সভাপতি, মো. ইনামুল হাসান সাধারণ সম্পাদক, মঈনুল ইসলাম সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সিনথিয়া জাহিন আয়েশা মুখপাত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে উমামা বলেন, “ভেতর থেকে চেয়েছিলাম অন্তত কিছু ভালো হোক। কিন্তু এখন বুঝেছি, এই প্ল্যাটফর্ম যতটাই বিষাক্তভাবে জড়িয়ে গেছে, ততদিন ভালো কিছু সম্ভব নয়। এর ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

শেষে তরুণ কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “অনেক ভালো ছেলে-মেয়ে এখানে আছেন। তাদের প্রতি আমার পরামর্শনিজেদের পড়াশোনায় মন দিন, নিজের কাজ নিয়ে ভাবুন। আমি ভেঙে পড়ছি নাআমি নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছি।

Link copied!