দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও সংসদে অন্য কোন দল এককভাবে বিরোধী দল হওয়ার মত জায়গা করে নিতে পারেনি।
সংবিধান মতে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী দল এককভাবে নারী আসন চাইতে পারে। আবার চাইলে অন্য দল বা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সঙ্গে জোটও করতে পারে। আইনে আসনের নির্ধারনের নির্দিষ্ট পদ্ধতি উল্লেখ করা আছে।
সংসদে এইবার দ্বিতীয় অবস্থানে আছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আর তৃতীয় অবস্থানে জাতীয় পার্টি। অন্যান্য তিনটি দল পেয়েছে তিনটি আসন। দলগুলো সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ পায় তাদের নিজেদের অবস্থানের শতাংশ অনুযায়ী।
কিন্তু দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা স্বতন্ত্ররা যেহেতু কোন দলের আওতায় নেই, তাই দিন যত গড়াচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে ধোঁয়াশা। তারা কি একজোট হয়ে মোর্চা গঠন করবে? নাকি কোন দলকে সমর্থন করে বিরোধী শিবিরে যাবে, নাকি বিজয়ী এই ৬২ জনের (৫৮ জনই আওয়ামী লীগ নেতা) কেউ কেউ বা অধিকাংশই সরকারী দলকে সমর্থন দিবে? এইসব ধোঁয়াশা এখনো কাটে নি। তাঁর মধ্যে শুরু হয়ে গেছে নতুন আলোচনা, কিভাবে দ্বাদশ সংসদ ভাগাভাগি করবে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে কারা কতটি আসন পাবে?
মোট ২২৩ টি আসন জিতে এককভাবে আওয়ামী লীগের ভাগে পড়বে ৩৭টি আসন। এছাড়া জাতীয় পার্টির ২ টি আসন। রইল বাকী ১১ টি। এখন যদি অন্যান্য তিনটি দল যে তিনটি আসন পেয়েছে তারা জোটবদ্ধ হয় বা না হয়, আইন অনুযায়ী তাদের ৩ আসনের বিপরীতে ১টি আসন ররাদ্দ হবে।
২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদে সংরক্ষিত নারী সদস্যদের সংখ্যা ৫০ এ উত্তীর্ণ করা হয়। আর ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি আনা সপ্তদশ সংশোধনীতে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের বিধি আরও ২৫ বছর বহাল রাখা হয়।
সুতরাং, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী একটি দল থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক নারী সাংসদকে সুযোগ দেওয়া হবে; এবং তা হবে সংসদে ঐ দলের কতজন প্রতিনিধি রয়েছে তার অনুপাতে।
অর্থাৎ একটি রাজনৈতিক দলের ৬ জন যদি নির্বাচিত সাংসদ হন, তাহলে ঐ দল থেকে একজন প্রার্থী সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ হবেন।
সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ৭ জানুয়ারি এবং গেজেট প্রকাশিত হয়েছে ৯ জানুয়ারি।
এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য তিনটি দলের সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে সংশয় না থাকলেও শংকা তৈরি হয়েছে ৬২টি আসনে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে।
এমতাবস্থায়, সংরক্ষিত আসন পেতে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা একাধিক বিকল্প পাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা চাইলে কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। অথবা নিজেরাও এক বা একাধিক স্বতন্ত্র নির্দলীয় জোট গঠন করতে পারবেন। এ ধরনের জোট গঠনের বিষয়টি সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ২১ কার্যদিবসের (৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) লিখিতভাবে জানাতে হবে।
এ সময়ের মধ্যে কোনো স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য যদি কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটে যোগ না দেন, তাহলে তাঁদের আলাদাভাবে তালিকাভুক্ত (নির্দলীয় সদস্য তালিকা) করবে ইসি। এই তালিকাভুক্ত সদস্যদের সমন্বয়ে একটি ‘নির্দলীয় জোট’ গঠিত হয়েছে বলে গণ্য হবে। তখন ওই জোটে থাকা স্বতন্ত্রদের আসনের বিপরীতে সংরক্ষিত আসন বণ্টন করা হবে।
আবার স্বতন্ত্রদের মধ্যে কেউ কোন দলে যুক্ত হলে যতজন বাকি থেকে যাবেন অর্থাৎ স্বতন্ত্র হিসেবেই থেকে যাবেন তাদের নিয়েই ‘নির্দলীয় জোট’ গঠিত হয়েছে বলে গণ্য হবে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ নেতা। তারা বলছেন সংরক্ষিত নারী আসনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধন্তের অপেক্ষায় রয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ–২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা মিলে ১০টি বা তার বেশি সংরক্ষিত আসন পাবেন। কেউ কেউ গ্রুপ করার কথা বললেও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করেননি। তিনি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হলেও আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কী ভাবছেন, তা তিনি এখনো জানেন না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি কাজ করবেন।
“সংসদ নেতা ও স্পিকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত”
এ বিষয়ে জানতে চাওায়া হলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, স্বতন্ত্রদের সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে এ যাবতকালে কোনো দৃষ্টান্ত ও সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। তারা যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জোটবদ্ধ না হন তবে তাদের আসন স্পিকার ও সংসদ নেতার সিদ্দ্বান্ত মোতাবেক বন্টন করা হবে। তিনি আরও বলেন এ বিষয়ে সংসদ নেতা ও স্পিকারের সিদ্বান্তই চূড়ান্ত বলে গন্য হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহ নেওয়াজ দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ কে বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে তাঁর পরিষ্কার ধারণা নেই।
এই অভিমতের মাধ্যমেই বোঝা যায়, বিষয়টির জটিলতা সম্পর্কে।