জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন নিপীড়িত মানবতার কবি। সারা জীবন তিনি সমাজের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে কলম ধরেছেন। তিনি নির্ভীক চিত্তে কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা ও কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষুরধার রচনা অব্যাহত রেখেছেন। থেকেছেন আপসহীন।
জাতীয় পর্যায়ে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। এ বছর জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে–‘অগ্নিবীণার শতবর্ষ: বঙ্গবন্ধুর চেতনায় শাণিতরূপ।’
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে আশা প্রকাশ করে বলেন, নতুন প্রজন্ম নজরুল-চর্চার মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবে এবং দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করবে।
কবির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকের কঠিন শাসন কবির বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করতে পারেনি। নিজের ওপর ছিল তার গভীর আত্মবিশ্বাস এবং সত্যের প্রতি তার ছিল অবিচল আস্থা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে নজরুলের কবিতা ও গান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, নজরুলের সাহিত্যকর্মে পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের বাণী উচ্চারিত হয়েছে। অসামান্য ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ও জাতীয়তাবোধের মূর্ত প্রতীক।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মানবতা, সাম্য ও দ্রোহের কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিল সমাজের শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন। তিনি অন্যায়, অসত্য, নির্যাতন-নিপীড়ন, নানামাত্রিক অসাম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে যুগে যুগে প্রতিবাদ প্রতিরোধের অনাবিল প্রেরণা জুগিয়েছেন।
কাজী নজরুল ইসলাম লোভ–খ্যাতির মোহের কাছে মাথা নত করেননি। কারা নির্যাতনেও বিচ্যুত হননি লালিত আদর্শ থেকে। অন্যদিকে তিনি মানুষের হৃদয়ের কোমল অনুভূতির প্রতিও সমান আবেগে সাড়া দিয়েছেন। অজস্র গানে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন বাংলার সংগীত ভুবন। প্রবর্তন করেছিলেন বাংলা গজল।
কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ছিল ঘটনাবহুল। বাংলা ১৩০৬ সনের ১১ জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন। তাঁর ডাকনাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন। পিতা ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম। অভাব–অনটন ছিল শৈশব থেকেই তাঁর নিত্যসঙ্গী। শৈশব থেকেই লেটো দলের বাদক, রুটির দোকানের শ্রমিক এভাবেই পেরিয়ে গেছে তাঁর শৈশব–কৈশোর। পরে কাজ করেছেন সৈনিক হিসেবে। সাংবাদিকতা করেছেন। কাজ করছেন এইচএমভি ও কলকাতা বেতারে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে পথে নেমেছেন। পাশাপাশি সাহিত্যসাধনা তো ছিলই। শাসকের কোপানলে পড়েছেন, কারারুদ্ধ হয়েছেন কিন্তু নত হয়নি নজরুলের উচ্চ শির।