শিশু থেকে বৃদ্ধ- যে কোনো বয়সের মানুষের পছন্দের খাবার কেক। এই খাবারটি এখন তৈরি করা হবে নতুন পদ্ধতিতে প্রযুক্তির মাধ্যমে। থ্রিডি প্রিন্টার ব্যবহার করে এখন থেকে বানানো যাবে নানা ধরনের বেক করা খাদ্য।
থ্রিডি প্রিন্টার ব্যবহার করে খাদ্য তৈরির এ প্রক্রিয়া সৃষ্টি করেছেন খাদ্য প্রযুক্তিবিদ টেকলা অ্যালপার্স। পাউরুটি ও অন্যান্য বেক করা খাদ্য কীভাবে ওভেন ছাড়াই প্রস্তুত করা যায়, মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি এ বিষয়ে গবেষণা করছেন। তিনি থ্রিডি প্রিন্টারের সাহায্যে নতুন ধরনের বেকড খাদ্য তৈরি করতে চান।
এক ইনফ্রারেড হিটার প্রিন্টিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট পদার্থকে স্থিতিশীল করে। দেখতে মঙ্গলগ্রহে মহাকাশযান অবতরণের দৃশ্যের মতো লাগলেও এই পদার্থকে আসলে সীমাহীন রূপ দেওয়া সম্ভব।
সেই সাথে বেকিং প্রক্রিয়ার অনেক ধাপও বাদ দেওয়া যায়।
টেকলা জানালেন, ‘প্রচলিত প্রক্রিয়ায় কড়া নিয়ম অনুযায়ী ময়দা মেখে, নির্দিষ্ট রূপ দিয়ে শেষে রুটি বা কেক বেক করা হয়। আমরা সেই বাধ্যবাধকতা পুরোপুরি ত্যাগ করতে পারি৷ আমরা একেবারে ভিন্ন কাঠামো ও উপরিভাগ সৃষ্টি করতে পারি।’
খাদ্য প্রযুক্তিবিদ হিসেবে মার্টিন হেকেল মনে করেন, ‘বেকিং প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে হুবহু এক বস্তু সম্ভব নয়৷ ময়দা মাখা, সেটির মধ্যে বাতাসের অনুপাত, কাঠামোর মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে৷
ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, বেকার অবশ্যই কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন৷ তবে একেবারে নিখুঁতভাবে সব কিছু নির্ধারণ করা যায় না৷ থ্রিডি প্রিন্টারের সাহায্যে আমি কিন্তু ‘পোর’বা ছিদ্রের বিতরণ একেবারে নিখুঁত করে তুলতে পারি৷ ফলে প্রতি বার হুবহু এক পণ্য তৈরি করা সম্ভব৷
বাইরের অংশ হুবহু এক রাখা একটি বিষয়৷ তবে নির্দিষ্ট উপাদানও গুরুত্বপূর্ণ৷ প্রিন্টিংয়ের জন্য যে ময়দা মাখা হয়, তার মধ্যে এতকাল গমের স্টার্চ বা মাড় এবং সোয়াবিন প্রোটিন ব্যবহার করা হয়েছে৷
নিখুঁত অনুপাতে মেশালে প্রিন্টিংয়ের জন্য সেটা আদর্শ হয়ে ওঠে৷ গবেষকরা ইতোমধ্যে বেকিংয়ের জন্য এমন মণ্ড তৈরি করেছেন, যার মধ্যে লবণের মাত্রা কম থাকলেও লবণের স্বাদ কিন্তু ভালোই পাওয়া যায়৷
মার্টিন হেকেল মনে করেন, ‘থ্রিডি প্রিন্টারের সাহায্যে আবার লবণের মাত্রা কমানোর সুযোগ রয়েছে৷ বস্তুটির নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় লবণ রাখলে পাউরুটির মতো লবণের একই স্বাদ পাওয়া যায়৷ অথচ লবণের পরিমাণ অনেক কম থাকে৷’
সাধারণ ময়দা প্রিন্টিংয়ের মণ্ডের জন্য উপযুক্ত নয়৷ কারণ ময়দার মধ্যে আঠালো গ্লুটেন যন্ত্রপাতি ও প্রিন্টারের অগ্রভাগে আটকে যেতে পারে৷ সে কারণে প্রিন্টারে তৈরি বেকিং পণ্যে সাধারণত কোনো গ্লুটেন থাকে না৷ উপাদানের সুনির্দিষ্ট ব্যবহারের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি আরও কার্যকর করা সম্ভব৷
নির্দিষ্ট কিছু ফ্লেভার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে৷ কিছু মিনারেল, ট্রেস এলিমেন্ট ও ভিটামিনও ব্যবহার করা যেতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে হয়তো নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির জন্য আলাদা করে প্রয়োজন অনুযায়ী বেকিং পণ্য তৈরি করা সম্ভব হবে৷
মিউনিখ টেকনিকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকলা অ্যালপার্স বলেন, ‘কাগজেকলমে আমরা থ্রিডি প্রিন্টারের সাহায্যে নির্দিষ্ট উপাদানসহ বেকিং পণ্য তৈরি করতে পারি৷ তবে সেই মণ্ড প্রিন্টারের উপযুক্ত হতে হবে৷
পুষ্টিকর উপাদানগুলোর পরিমাণ প্রয়োজন অনুযায়ী অনেকটাই রদবদল করা সম্ভব৷ কোনো ব্যক্তির চাহিদার ভিত্তিতে সেটা স্থির করা যায়৷ তার জন্য নির্দিষ্ট পাউরুটি বানানো যায়৷’