শুক্রাণু বা ডিম্বাণু ছাড়াই স্টেম সেল ব্যবহার করে সফলভাবে কৃত্রিম ভ্রুণ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। যদিও এই ভ্রুণগুলোতে হৃদপিণ্ড বা মস্তিষ্কের মতো অঙ্গ থাকে না, তবে এতে সাধারণত প্লাসেন্টা, কুসুম থলি এবং ভ্রূণে বিকশিত হয় এমন কোষ থাকে।
যুক্তরাজ্যের কেমব্র্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির একদল বিজ্ঞানী সম্প্রতি দাবি করেছে, তারা গবেষণাগারে এমন মানব ভ্রুণ তৈরি করেছেন, যাতে শুক্রাণু বা ডিম্বাণুর প্রয়োজন হয়নি।
এ বিষয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির অধ্যাপক ম্যাগডালেনা জেরনিকা-গোয়েটজ বলেন, ‘আমরা কোষের (ভ্রূণের স্টেম) পুনঃপ্রোগ্রামিং করে মানুষের ভ্রূণের মতো মডেল তৈরি করতে পারি। কৃত্রিম এই ভ্রুণটি অবশ্য স্বাভাবিক ভ্রুণের মতো এখনো পরিপূর্ণ হয়ে ওঠেনি। স্বাভাবিক ভ্রুণে যে সময়ে হৎস্পন্দন ও মস্তিষ্কের গঠন শুরু হয়-নতুন ভ্রুণটিতে এখনো তা ঘটেনি। তবে ভ্রুণটির বৃদ্ধি ও বিকাশ অব্যাহত আছে এবং গবেষকরা আশা করছেন-স্বাভাবিকের চেয়ে খানিকটা ধীর গতিতে হলেও একসময় এই ভ্রুণটিতে হৃৎস্পন্দন ও মস্তিষ্কের গঠন শুরু হবে।’
মানব জরায়ুর ভেতরে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর নিষেকের পর নিষিক্ত সেই কোষটির ভ্রুণের আকার পেতে ১৪ দিন সময় লাগে। গবেষণাগারে তারা যে ভ্রুণটি সৃষ্টি করেছেন, সেটিও স্বাভবিক ভ্রুণের মতোই বিকশিত হবে বলেও আশা করছেন গোয়েৎজ।
এর মাধ্যমে একদিন জিনগত রোগ এবং গর্ভপাতের কারণ সম্পর্কে আরও উচ্চধারণা পাওয়া যাবে। এই গবেষণা যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশকিছু দেশে নীতিগত এবং আইনি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সিনথেটিক ভ্রুণ তৈরির মাধ্যমে চিকিৎসা পদ্ধতিকে নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের।
গবেষণাটি এখনও কোনো বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়নি। গবেষণাটি আইনি এবং নৈতিক উদ্বেগ উত্থাপন করছে। কারণ, অনেক দেশে কৃত্রিম ভ্রুণ তৈরি ও এটিতে কোনো প্রকারের পরিবর্তন নিয়ে বিধিনিষেধের অভাব রয়েছে।
সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের সহযোগী গবেষণা পরিচালক জেমস ব্রিস্কো মানব ভ্রূণের স্টেম সেল থেকে প্রাপ্ত মডেলের জন্য স্পষ্ট নিয়মের অনুপস্থিতিকে উল্লেখ করেছেন। অপরদিকে, ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) এর মাধ্যমে মানব ভ্রূণের উৎপাদন একটি প্রতিষ্ঠিত আইনি কাঠামোর মধ্যে কাজ করে।