বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশন (ফিফা)। এখন নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসাবে কাজী সালাউদ্দিনের প্রিয় আনসারিকে আনছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। আরো দুজনের নাম শোনা যাচ্ছে।
গত ১৪ এপ্রিল ফিফা জানায় সোহাগ কেনাকাটার যে কাজে টাকা নিয়েছেন সেটার ভুল তথ্য ফিফায় দিয়েছেন। টাকায় না করে লেনদেন চেকে হলে ভাল হতো মনে করে ফিফা।
মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের দুটি সংস্থা আর্থিক রিপোর্ট ফিফায় দিলে সোহাগ নিষিদ্ধ হন।
সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ফিফার কোনো অভিযোগ নেই। তাই তিনি দায় নিয়ে বহাল থাকছেন ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান হিসেবে।
আবু নাঈম সোহাগের বিরুদ্ধে মোটাদাগে চারটি ধারায় অভিযোগ প্রমাণের কথা বলছে ফিফা। সেগুলো হলো- ২০২০ সালের ফিফা এথিকস কোডের ধারা ১৫ (সাধারণ কর্তব্য), ১৩ (আনুগত্যের দায়িত্ব), ২৪ (জালিয়াতি ও মিথ্যাচার) এবং ২৮ (অযথার্থতা ও অনুদানের অপব্যবহার)। এসব ধারায় তাঁকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা এবং প্রায় ১২ লাখ টাকা (১০ হাজার সুইস ফ্রা) জরিমানা করা হয়েছে।
শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা। ফিফার ইথিক্স কমিটি দিয়েছে এমন সিদ্ধান্ত।
ফিফার ইন্ডিপেন্ডেন্ট এথিক্স কমিটির বিচারিক চেম্বার অভিযোগের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। ইতোমধ্যে বাফুফে সম্পাদকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থাটি। চিঠি পৌঁছার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে জরিমানা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফিফার ইন্ডিপেন্ডেন্ট এথিক্স কমিটির বিচারিক কমিটিতে চেয়ারপারসন গ্রিসের ভ্যাসিলস স্কৌরিসসহ অন্য সদস্যরা হলেন চিলির পামেলা ক্যামাস এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মোহাম্মদ আল কামালি। এ ছাড়া সোহাগকে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ফিফা জুডিশিয়াল বডির পরিচালক কার্লোস শ্নেইডার। প্রতিবেদনটি বলছে, ফিফার দেওয়া অনুদান অপব্যবহার করেছে বাফুফে এবং সেই বিষয়ে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সোহাগ ভুয়া নথি দিয়েছেন।
২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর প্রথম বাফুফের অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে অনিয়মের বিষয়টি চিহ্নিত করে ফিফাকে জানায় কন্ট্রোল রিস্ক গ্রুপ লিমিটেড। এরপর ক্রমান্বয়ে ওই বিষয়ে তদন্তে নামে ফিফা।
এরপর ২০২১ সালের ২২ মার্চ থেকে প্রায় দেড় বছর ধরে সোহাগের সঙ্গে ফিফার বিচারিক চেম্বারের যোগাযোগ এবং নিজের অবস্থানের স্বপক্ষে বিস্তারিত তথ্য দাখিল করেন বাফুফে সম্পাদক। এরপর সব যাচাই-বাছাই শেষে ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় বিচারিক চেম্বার।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাফুফে সম্পাদকের বিরুদ্ধে চারটি প্রধান অপরাধ উল্লেখ করা হয়েছে। আবু নাঈম সোহাগ মিথ্যা নথি এবং বক্তব্য দিয়েছেন। যেখানে জাতীয় ফুটবল দলের জন্য ক্রীড়া সরঞ্জাম ক্রয়ে ৩০ হাজার ২৭ মার্কিন ডলার (২৫ লাখ ৮৮ হাজার ৬৪০ টাকা ) ব্যয়ের তথ্য দিয়েছেন তিনি। এছাড়া চারশ ফুটবল ক্রয়বাবদ ১২ লাখ টাকা এবং বিমানের টিকিট ক্রয়বাবদ ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ ব্যয় হয়েছে।
পরবর্তী তদন্তেও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ করেছে ফিফা। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সেসব মিথ্যা তথ্যের দায়ভার নেওয়া এবং পুরো কার্যক্রমে সোহাগ নিজেই জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে ফিফা অনুদান পুরোপুরিভাবে অপব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া, ফিফাকে দেওয়া আর্থিক হিসাবে মার্কিন ডলারের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে সেটিও চলতি সময়ের সঙ্গে মিল নেই বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে। পরবর্তীতে ফিফার কাছে দেওয়া সোহাগের ব্যাখ্যা আইনি বিধি অনুসারে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয় এবং সেসব অভিযোগ থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেন সোহাগ।