টেলিস্কোপে প্রথমবারের মতো গারগেনটিয়ান ব্ল্যাক হোলের চিত্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মে ১৩, ২০২২, ০৫:৩৯ পিএম

টেলিস্কোপে প্রথমবারের মতো গারগেনটিয়ান ব্ল্যাক হোলের চিত্র

আমাদের গ্যালাক্সির একেবারে কেন্দ্রে অবস্থান করা গারগেনটিয়ান ব্ল্যাক হোলের চিত্র প্রথমবারের মতো ধারণ করা হলো টেলিস্কোপে। ইভেন্ট হরিজন টেলিস্কপ (ইএসইটি) কোলাবোরেশন নামক আন্তর্জাতিক আলোকচিত্রী দল ছবিটি তুলেছেন। সাধারণত এ ধরণের ছবি তুলতে উচ্চ মাত্রার রেজ্যুলেশনের লেন্সের দরকার পড়ে। মিল্কি গ্যালাক্সির একেবারে কেন্দ্র থেকে এই ব্লাক হোলের চিত্র ধারণে ইভেন্ট হরিজন টেলিস্কোপ আটটি ব্যাপক ব্যবধানযুক্ত রেডিও অ্যান্টেনাকে একটি নেটওয়ার্ক একত্রিত করে। 

দ্য জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ব্লাক হোলটির আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে

‘স্যাজিটিরিয়াস এ ’ নামের এ  ব্লাক হোলটির ভর সূর্য থেকে ৪০ লক্ষ গুণ বেশি। সাধারণত ভরের কারণে বৃহস্পতির মতো বড় গ্রহগুলোও যদি এই ব্লাক হোলের কক্ষপথে পড়ে, তবে নিমেষেই হারিয়ে যাবে। চিত্রটিতে দেখা যায়; একটি কেন্দ্রীয় অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকাকে ঘিরে রেখেছে উত্তপ্ত আলোকোজ্জ্বল গ্যাস, যা কিনা চুম্বকিয় শক্তি থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে। উত্তপ্ত গ্যাসীয় বস্তুটি চক্রাকারভাবে একটি গহবরকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে, যে গহবরটিকেই বিজ্ঞানীরা ব্লাক হোল বলে থাকেন। উত্তপ্ত এ গ্যাসীয় বৃত্তটি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৯০ হাজার মাইল গতিতে ঘুরছে। খালি চোখে বস্তুটিকে কিছুটা বুধ গ্রহের মতো মনে হতে পারে। এ ব্লাক হোলটি পৃথিবী থেকে ৪ কোটি মাইল দূরে অবস্থান করছে। অন্যভাবে বলা হয়েছে: ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে এটি।  তাই এই ব্লাকহোলটি থেকে আমাদের গ্রহের জন্য ক্ষতির কোন সম্ভাবনা নেই।

মেসিয়ার ৮৭ ব্লাক হোল

এটা এই ধরণের ছবির মধ্যে দ্বিতীয়। এর আগে ২০১৯ সালে মেসিয়ার ৮৭ অথবা এম ৮৭ নামক গ্যালাক্সি থেকে বিশাল ব্লাকহোলের চিত্র ধারণ করতে সক্ষম হয় নাসা। ওই ব্লাকহোলটির ওজন সূর্য থেকে ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন গুন বেশি। আর যে মেসিয়ার ৮৭ গ্যালাক্সির ভেতর থেকে ব্লাক হোলটির চিত্র ধারণ করা হয়েছিলো, তা আমাদের গোটা সোলার সিস্টেম থেকে বড়।

বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে ইএইচটি প্রকল্পের ইউরোপীয়ান উদ্যোক্তা প্রফেসর হেইনো ফালকে বলেছেন, নতুন ছবিটি এজন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিশাল আয়তনের এই ব্লাকহোলটি  আমাদের। আমরা যদি ব্লাকহোল সম্পর্কে জানতে চাই, তবে এই ব্লাকহোলটি গবেষণা করেই বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। কারণ এটা খুবই কাছে অবস্থিত। সাধারণত ব্লাক হোল বলতে বোঝায়, মহাকাশের একটি বিশেষ এলাকা যেখানে যেকোন বস্তুই নিমেষে ধ্বসে পড়ে। এর অভ্যন্তরীন আকর্ষণ এতো প্রবল যে কোন কিছুই একবার এর সীমানায় প্রবেশ করলে, এর থেকে বাইরে বেরোতে পারে না। এমনকি আলোও এর আকর্ষণ ফাঁকি দিতে পারেনা। বড় বড় নক্ষত্রের বিস্ফোরণের ফলে ব্লাক হোল তৈরি হয়, যার অধিকাংশ বিশালাকার সূর্যের থেকে কয়েক কোটি গুন বড়।

ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্স স্ট্যাডি ইন নিউ জার্সির গবেষক লিয়া মেডেরস জানিয়েছেন, এর আগে ২০১৮ সালে আমরা টেলিস্কপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। সর্বশেষ ইএইচটি টেলিস্কপ কম্বিনেশনের চিত্রগুলোও সংগ্রহ করা হয়েছে। চলতি বছর আমরা আরও ৩টি টেলিস্কপ নেটওয়ার্কের সঙ্গে একত্রিত করে নতুন নতুন ছবি ধারণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। এগুলো মিল্কি ওয়ে ও ব্লাক হোল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সাহায্য করবে এবং এ সংক্রান্ত গবেষণাকে এগিয়ে নেবে।

 

Link copied!