এশিয়া নয়, সুদূর ইউরোপ-আফ্রিকা-যুক্তরাষ্ট্র নয়। সময়ের মাত্রা পেরিয়ে মঙ্গল গ্রহে ছুটে যাওয়ার মতো অদ্ভুত ইচ্ছে আমাদের অনেকেরই আছে। কিন্তু কীভাবে যাবো সেখানে?
মঙ্গল গ্রহে যেতে হলে আপনাকে মৃত্যুর জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। সেখানে কোনো রকমে একবার যদিওবা নভোযানে করে যাওয়া গেল, তো সেখান থেকে ফিরে আসার মতো নভোযান এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। মানব সভ্যতা এখনও এতটাও উন্নত হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক এরদাল ইগিট বলেন, ‘মঙ্গলে হাঁটার সময় নির্ধারণ করতে আমাদের দুটি বিষয় পরিমাপ করতে হবে। নভোচারীর বেগ কত এবং প্রতিদিন সে কতটুকু হাঁটতে পারবে।’
কিন্তু এই দুটি বিষয়ের কোনোটিই আপনি জোর দিয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না। কারণ সব মানুষের চলার বেগ ও কাজের ক্ষমতা ভিন্ন। ধরুন, আপনিই মঙ্গলের সেই নভোচারী, যিনি মঙ্গলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়াবেন। যদি মঙ্গল গ্রহের বিষুবরেখা বরাবর হাঁটতে থাকেন, তবে হাঁটতে হবে ২১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। তবে একটা শর্টকার্ট পথও আছে। সে জন্য আপনাকে মঙ্গলের মেরু অঞ্চল বরাবর হাঁটতে হবে। এতে পথ কমবে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার। কিন্তু তাতে ঝামেলা বাড়বে। এই অঞ্চলে এত ঠাণ্ডা যে স্পেসস্যুট ছাড়া আপনি জমে বরফ হয়ে যাবেন। নিশ্চয়ই স্পেসস্যুট পরেই থাকবেন। অক্সিজেন বা লাইফ সাপোর্টও থাকবে। তবে সামান্য খোঁচা লেগে বা কোনোভাবে যদি স্যুট খানিকটা ফেটে যায়? সে কথা মাথায় রেখে ভাবুন তো, মাইনাস ১২৫ ডিগ্রি ঠাণ্ডার মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে? কথায় আছে, ‘সুপথের ঘোরাও ভালো।’
এখন মনে করুন, আপনার গতি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার। পৃথিবীতে মানুষ আসলেই গড়ে এই বেগে হাঁটতে পারে। কিন্তু মঙ্গলে হাঁটার গতি ঠিক এরকম হবে না। কারণ গ্রহটির মহাকর্ষ বল পৃথিবীর চেয়ে কম, পৃথিবীর প্রায় ৪০ শতাংশ। আরও ব্যাপার আছে। পৃথিবীতে আপনার সঙ্গে করে খাবার বা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ঘুরতে হবে না, পরতে হবে না স্পেসস্যুট। কিন্তু মঙ্গলে এসবই আপনাকে করতে হবে। ফলে কমে যাবে হাঁটার গতি। কিন্তু আমাদের যেহেতু একটা সংখ্যা ধরে নিতে হবে, তাই ধরে নিচ্ছি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার বেগে আপনি মঙ্গলে হাঁটবেন। তাহলে আপনার সময় লাগবে প্রায় ৪ হাজার ২৯০ ঘণ্টা, পৃথিবীর প্রায় ১৭৯ দিন। মঙ্গলে একদিন হয় পৃথিবীর ২৪ দশমিক ৭ ঘণ্টায়। একে বলে সোল। সুতরাং ৫ কিলোমিটার বেগে হেঁটে মঙ্গল ঘুরতে আপনার লাগবে ১৭৪ সোল বা মঙ্গলের ১৭৪ দিন। অর্থাৎ মঙ্গল গ্রহের হিসেবে বছরের এক-চতুর্থাংশ সময়। বলে রাখি, মঙ্গলে ৬৬৮ দশমিক ৬ সোলে এক বছর হয়।
তবে এখানেও একটা ‘কিন্তু’ রয়ে যায়। আপনি তো আর রোবট না যে টানা ৪ হাজার ঘণ্টা হাঁটবেন। মানুষ যেহেতু নিশ্চয়ই বিশ্রাম নিতে হবে। খেতে হবে। ঘুমাতে হবে। আবার টানা ৪ হাজার ঘণ্টা হাঁটার মতো অক্সিজেনও আপনার সিলিন্ডারে থাকবে না। ফলে অবশ্যই আপনাকে মাঝখানে থামতে হবে।
ধরে নিই, আপনি প্রতি রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাবেন। প্রতিদিন যে পরিমাণ হাঁটবেন, তাতে রাতে ৮ ঘণ্টার কম ঘুমালে চলবে না। মোট ঘুমে আপনার আরও ৫৬ সোল চলে যাবে। বোঝার সুবিধার্তে মঙ্গলের সোলকে আমরা দিন বলবো এখন থেকে। এবার ধরে নিচ্ছি প্রতিদিন খাওয়া, বিশ্রাম, পোশাক পরিবর্তন, নিজেকে পরিষ্কার রাখা ও যাবতীয় কাজের জন্য প্রতিদিন আরও ৫ ঘণ্টা করে ব্যয় করবেন। তাতে যাবে মোট ৩০-৩৫ দিন। তবে সব মিলিয়ে আপনার সময় লাগবে মঙ্গলের হিসেবে ১৭৪+৫৬+৩৫=২৬৫ দিন।