অনলাইনে মতপ্রকাশের সূচকে আরও পিছিয়েছে বাংলাদেশ। এর পেছনে দুটি কারণের কথা উল্লেখ করেছে মার্কিন অলাভজনক গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউস। প্রথমত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ধরপাকড় বৃদ্ধি। দ্বিতীয়ত, ক্রমেই অভিনব সব উপায়ে সরকারি নজরদারি।
গবেষণা প্রতিবেদনে পয়েন্টের ভিত্তিতে বিশ্বের ৭০টি দেশকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। পয়েন্ট ১০০ থেকে ৭০ এর মধ্যে থাকলে 'মুক্ত', ৬৯ থেকে ৪০ এর মধ্যে থাকলে 'আংশিক মুক্ত' এবং ৩৯ এর নিচে হলে 'মুক্ত নয়'। এ হিসাবে ২০১৩ সাল থেকেই আংশিক মুক্ত শ্রেণির দেশগুলোর তালিকায় তলানিতে বাংলাদেশ।
ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্টারনেটে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সূচকে ২০২১ সালের হিসাবে বাংলাদেশকে ১০০ তে ৪০ পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালে এই পয়েন্ট ছিল ৪২। তার আগে ২০১৯ সালে ৪৪, ২০১৮ সালে ৪৯, ২০১৭ সালে ৪৬ ও ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৪৪ পয়েন্ট।
প্রতিবেদনটিতে ইন্টারনেটে স্বাধীনতার স্তর নির্ণয়ে ৩ ধরনের মোট ২১টি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে- ১. সেবা ব্যবহারে বাধা, ২. কনটেন্টের সীমাবদ্ধতা, ৩. মানবাধিকার লঙ্ঘন। প্রতিবেদন তৈরিতে ২০২০ সালের ১ জুন থেকে চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত ঘটনাবলি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাপী টানা ১১ বছর ধরে ইন্টারনেটে স্বাধীনতা কমছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিবেচ্য উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে থ্রি–জি ও ফোর–জি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়। প্রায় এক বছর পর ২০২০ সালের আগস্টে তা চালু করা হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় গত মার্চে চলমান আন্দোলনে তিন দিনের জন্য ফেসবুক ও ফেসবুক- ম্যাসেঞ্জার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আল–জাজিরা ও ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি নজরদারি সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নজরদারি, হ্যাকিং ও মুঠোফোন থেকে তথ্য সংগ্রহের প্রযুক্তি কিনেছে বাংলাদেশ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনটির বিরুদ্ধে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবাদ শুরু হয়। করোনা মোকাবিলায় সরকারের সমালোচনা করে দেওয়া ফেসবুক পোস্টের জেরে গত বছরের মে মাসে আটক হন মুশতাক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৮০০–এর বেশি মামলা হয়েছে এবং সরকারের সাইবার ট্রাইব্যুনালের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের অক্টোবরে আইনটি প্রণয়নের পর থেকে মামলা দায়ের হয়েছে প্রায় ২ হাজার।’
ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের নয়টি সূচকের মধ্যে সাতটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে বাধা, ওয়েবসাইট বন্ধ, ইন্টারনেট বন্ধ, সরকারপন্থী ভাষ্যকার, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আটক, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে শারীরিকভাবে হেনস্তা ও কারিগরি হামলা।
৯৬ পয়েন্ট পেয়ে তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে আইসল্যান্ড। আর সবচেয়ে কম পয়েন্ট রয়েছে চীনের, দেশটির মাত্র ১০ পয়েন্ট পেয়েছে।
তালিকায় থাকা সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে কেবল পাকিস্তান। ২৫ পয়েন্ট পেয়ে 'মুক্ত নয়' তকমা পেয়েছে তারা। ভারত ও শ্রীলঙ্কা যথাক্রমে ৪৯ ও ৫১ পয়েন্ট পেয়েছে ।