ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চমক, কী ভাবছে আওয়ামী লীগ?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২, ০৫:৫০ এএম

ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চমক, কী ভাবছে আওয়ামী লীগ?

দেশে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের এখন পর্যন্ত মোট ৬ টি ধাপ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয়বারের মত এবার ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে অংশগ্রহণ করেছেন। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নিরঙ্কুশ জয় পেলেও, স্থানীয় নির্বাচনে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ৬ ধাপে মোট ৩,৯৬৭ টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের নেতারা মোট ২১৩৩ টি ইউপিতে জয়লাভ করেছেন। এর মধ্যে সর্বশেষ ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচনে মোট ২১৮ টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতারা জয়লাভ করেছেন ১১৭ টিতে, অন্যদিকে চমক দেখিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মোট ৯৫ টি ইউপিতে জয় পেয়েছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দাবি করেন, ইউপি নির্বাচন হয় আঞ্চলিক ভিত্তিতে। এর সাথে জাতীয় নির্বাচনের সম্পর্ক খুব কমই থাকে। এছাড়াও এ ধরণের আঞ্চলিক নির্বাচনগুলোতে আরও নানা দিক কাজ করে, যার ফলে এ নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ তারা দেখছেন না।

খুলনা বিভাগের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দেখভালের দায়িত্ব পাওয়া নেতা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “ইউপি নির্বাচনে একই দলের একাধিক ভালো প্রার্থী থাকে। আঞ্চলিকভাবে দলের লোকজনের প্রভাব বিস্তার, নেতৃত্ব ধরে রাখা, বংশপরিচয়, স্থানীয় পরিচয়সহ নানা রকম বিষয় কাজ করে এ নির্বাচনে, জাতীয় নির্বাচনে যে বিষয়গুলো দেখা যায় না।”

“যেহেতু একাধিক প্রার্থীকে একই সঙ্গে দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া সম্ভব হয় না, দেখা যায় একই আসনে দুজন বা তিনজন প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, এটাকে আমরা খারাপভাবে দেখছিনা, অনেকক্ষেত্রেই বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতে যান। এখানে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সবাই সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং দলের জনপ্রিয়তাও এখন তুঙ্গে রয়েছে,” বলেন তিনি।

চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনও একই দাবি করেছেন। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “ইউপি নির্বাচন আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়। এর সাথে জাতীয় নির্বাচনের সাধারণীকরণ করার কিছু নেই। এ নির্বাচনে একই স্থানে দলের অনেক ভালো প্রার্থী থাকেন, যারা দলীয় মনোনয়ন না পেয়েও নির্বাচনে দাড়ান। অনেকসময় তাদের কাছে দলীয় প্রার্থীরা হারেন, এখানে আশঙ্কা করার মতো তেমন কিছু নেই।”

এদিকে এবার বিএনপির প্রার্থীরা প্রত্যক্ষভাবে দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও, স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হয়েছেন অনেকেই। গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৬ ধাপে মোট ৩৩৮ টি ইউপিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। গণমাধ্যমের কাছে বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন, সরকারদলীয় প্রার্থীদের দমন-পীড়ন না থাকলে তারা আরও ভালো করতেন।

এদিকে, স্থানীয় এই নির্বাচনে সহিংসতাও এবার বহুগুণে বেড়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবারের ইউপি নির্বাচনের ৬ ধাপে দেশে ৬৭২ টি সহিংসতার ঘটনায় ১১৩ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন ৭২০১ জন। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র জানুয়ারি মাসেই পঞ্চম ও ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচনে নির্বাচনী সহিংসতায় ২৯ জন মারা গেছেন।

মোট সাত ধাপের ইউপি নির্বাচনের সপ্তম ধাপ অনুষ্ঠিত হবে ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখে। সপ্তম ধাপের নির্বাচনে ১৩৮ টি ইউপিতে অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সর্বশেষ নির্বাচন হবে ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে, ৮ টি ইউপিতে।

Link copied!