বাংলাদেশের সুন্দরবন থেকে ভারতের অংশে চলে যাচ্ছে বাঘ!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২, ০৯:০৯ পিএম

বাংলাদেশের সুন্দরবন থেকে ভারতের অংশে চলে যাচ্ছে বাঘ!

বাঘ নিয়ে কত না থ্রিলার গল্প শুনেছে এ দেশের আগের প্রজন্ম। রাজকীয় বাঘ এ দেশের জাতীয় পশুও। কিন্তু বাঘের সংখ্যা দিনকে দিন কমছেই। শুধুই গল্পগাথার রূপকথায় পরিণত হচ্ছে বাঘ। আশংকাজনক হারে  সংখ্যা কমে যাওয়ায় ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে রক্ষা করতে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের অংশে বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ায় উদ্বেগে ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।

বাঘ বাঁচাতে বেসরকারি উদ্যোগে সুন্দরবনে শুরু হয় ‘সেভ টাইগার, সেভ বেঙ্গল' শীর্ষক সচেতনতামূলক প্রচার। এখন বাঘের সংখ্যা বাড়ছে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে। বাংলাদেশ থেকে আসা বাঘও জুড়ছে এই সংখ্যায়, এমনটাই দাবি করছেন পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা

সরকারি হিসাব মতে, গত বছরের ডিসেম্বরে শুমারিতে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছিল ৯৬টি। চলতি বছরের শুমারির চূড়ান্ত ফলাফল যদিও এখনো আসেনি তবে পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী বলছেন, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী আরও বলছেন, ‘গত বছরের শুমারি অনুযায়ী, এ রাজ্যের সুন্দরবনে বাঘের সংখ‌্যা ছিল ৯৬। চলতি বছরের শুমারির তথ‌্য ও ছবি হায়দরাবাদে পাঠানো হয়েছে। তার রিপোর্ট এখনো আসেনি। তবে বাঘের সংখ‌্যা বৃদ্ধির ঈঙ্গিত মিলেছে। নতুন ২৭টি রয়েল বেঙ্গলের খোঁজ পাওয়া গেছে বনে!’

নতুন ২৭টি বাঘ বিবেচনায় নিলে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২৩-টি।

Tiger 01

নতুন দ্বীপে বাঘ

দুই দেশ মিলিয়ে সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এর সিংহভাগ বাংলাদেশের অন্তর্গত। ছয় হাজার কিলোমিটার বাংলাদেশের অন্তর্গত। বাকি চার হাজার কিলোমিটার ভারতে।

মন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, ভারতের আরো কয়েকটি দ্বীপের বাঘের উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছেন আধিকারিকরা।

জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘সুমারি করার সময় রামগঙ্গা ও অন‌্যান‌্য অঞ্চলের পাঁচটি দ্বীপে বাঘের সন্ধান মিলেছে। এই দ্বীপগুলিকে বাঘ সংরক্ষণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এখানকার বাঘের সংখ‌্যাটাও যোগ হবে।’

খাবারের খোঁজে?

পশ্চিমবঙ্গের বন দপ্তর জানাচ্ছে, বাংলাদেশে বাঘের খাবার পর্যাপ্ত নেই। খাবারের টানে রয়্যাল বেঙ্গল ভারতীয় অংশে চলে আসছে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে অরণ্যে বাঘের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের জোগান রাখা হয়েছে যাতে চতুষ্পদরা গ্রামে ঢুকতে না পারে।

বনমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘বাদাবনে বাঘের খাদ্যের যাতে টান না পড়ে, সেই লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ গভীর জঙ্গলে হরিণ ও শূকর নিয়মিত ছাড়া হয়। বাংলাদেশের অংশে এই খাবারের অভাব রয়েছে। তাই বাঘ এদেশে (ভারতে) চলে আসছে।’

বিশেষজ্ঞদের ভিন্নমত

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন পরিবেশ আধিকারিক প্রণবেশ সান্যাল সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলছেন, ‘কোভিডের জেরে বছর দুয়েক অরণ্যে মানুষের যাতায়াত কম ছিল। সেই সুযোগে বাঘের ছানা নিশ্চিন্তে বেড়েছে। তাই ঘন ঘন বাঘ দেখা যাচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্ক বাঘের সংখ্যা সুন্দরবনে বেড়েছে। তার মানে বাংলাদেশের বাঘ চলে এসেছে, এটা ভ্রান্ত ধারণা।’

Tiger

সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকরাও একই সুরে কথা বলেছেন। প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন ডয়চে ভেলেকে বলছেন, ‘রায়মঙ্গল নদী দুই দেশের সীমান্তে রয়েছে৷ সেটা পার হয়ে বাঘ ভারতের দিকে চলে আসছে, এটা বলার মতো প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। তবে বাঘ বাড়ছে, সেটা স্বাভাবিক নিয়মে যেমন বাড়ে।’

ডবব্লিওডবব্লিওএফ-এর সুন্দরবন প্রোগ্রাম অধিকর্তা অনামিত্র অনুরাগ দণ্ড বলেন, ‘ভারতীয় সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা স্থিতিশীল। ৯৬টির ছবি উঠেছে। আরো কয়েকটা বেশি থাকতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে খাবার অভাব বা সেজন্য বাঘের ভারতে চলে আসা, এটা ঠিক বলে মনে হয় না।’

পশ্চিমবঙ্গের প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্তা শিবাজী ভট্টাচার্য বাঘের দেশান্তরের বিতর্ককে বিজ্ঞানের চোখে দেখছেন। তাঁর মতে, ‘বাঘ সীমান্ত বোঝে না। ওরা খাবার বা নিরাপত্তার খোঁজে অন্যত্র চলে যায়। প্রজননের সময় বাঘিনী অনেক দূরে গিয়ে পুরুষ সঙ্গীকে খুঁজে নেয়। এসব উদ্দেশ্যে যদি বাঘ এক জায়গা থেকে অন্যত্র চলেও যায়, সেটাকে আমাদের মতো করে ভাবলে চলবে না।’

‘ওরা এলে, চলেও যেতে পারে। এতে বাংলাদেশের কোনো চিরস্থায়ী ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে কি না, তা আমার জানা নেই।’ যোগ করেন শিবাজী। 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

Link copied!