ভূমিকম্প হলে ঢাকায় প্রতি তিন ভবনের দুটিই ধসে পড়বে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩, ০১:৪৫ এএম

ভূমিকম্প হলে ঢাকায় প্রতি তিন ভবনের দুটিই ধসে পড়বে

শুধু অপরিকল্পিত নগরী নয়, বসবাসের অযোগ্য নগরী হিসেবেও তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। তারচেয়েও বড় উদ্বেগের বিষয় ভূমিকম্পের টাইম বোমার ওপর বসে আছে শহরটি। রাজধানীর প্রায় ৬৬ ভাগ ভবনই অনুমোদন ও নকশা ছাড়া নির্মিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি তিনটি ভবনের ২ টি ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অননুমোদিত ভবনের দায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)৷ তাই রাজউকের অসাধু কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

রাজউকের হিসেবেই ঝুঁকিতে ভবনগুলো

আয়ারল্যান্ডেভিত্তিক আর্থ অবজারভেশন সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও মিয়ানমার, এই তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। যার ফলে এ অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকায় গেলে দেখা যাবে, এখনো গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভবন।

রাজধানীর অধিকাংশ ভবনগুলোর অনুমোদন ও নকশা ছাড়া নির্মিত। যার ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দূর্ঘটনার ঝুঁকি। রাজধানীর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) মতে রাজধানীর ৬৬ ভাগ  ভবনই নিয়ম ভঙ্গ করে নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলে পরিকল্পিত নগরায়ন ব্যহত হবার পাশাপাশি দূর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছে ভবনগুলো। তবে জরিপের তথ্য পাওয়ার ৩ বছরের মধ্যেও কোন কার্যকরী পদেক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

নিয়ম মানা হয়নি অধিকাংশ ভবন নির্মাণে

রাজধানীর ৩ তলা বা তার বেশি উচ্চতার ভবনগুলো নিয়ে জরিপ করেছে রাজউক। এতে দেখা যায় ২ লাখ ৪ হাজার ১০৬টি ভবনের মধ্যে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬২৫টি ভবন নিয়ম ভঙ্গ করে নির্মাণ করা হয়েছে। শতকরা হিসেবে এটা ৬৬.১১ ভাগ৷ ২০১৮ সালে প্রায় ৭ মাস ধরে এই জরিপ চালান হয়।

রাজধানী ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা-ড্যাপ পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, ঢাকা শহরে সাততলা বা তার চেয়ে উঁচু ভবন আছে ১৬ হাজার ৯৩০টি৷ আইন অনুযায়ী এসব ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক৷ কিন্তু ফায়ার সার্ভিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মাত্র ৫ হাজার ২৪টি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ৩৪ শতাংশ ভবনই ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র নেয়নি। এদিকে ফায়ার সার্ভিস ৫ হাজারেরও বেশি ভবনকে নোটিশ দেয়৷ কারণ তাদের ফায়ার সিস্টেম নেই বা কার্যকর নয়৷

দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে হতাহতের পর আবারও রাজধানীর ভবনগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “জরিপ করার পর অভিযান চলেছিল। তবে মহামারীর কারনে অভিযানের গতি কিছুটা কমে গিয়েছিল। শীঘ্রই তালিকা ধরে ভবনগুলো সংশোধনে জোরদান করা হবে। জরিপে ক্রুটিপূর্ণ ভবনগুলো আশেপাশের ভবনগুলোর জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। যার ফলে এই বিষয়ে দ্রুতই পদক্ষেপ নেয়া হবে।”

পুরো রাজধানী জুড়েই ভবনগুলো সংস্কারের প্রয়োজন মন্তব্য করে রাজউক চেয়ারম্যান আরও বলেন, “ আমরা নগর পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে জরুরী বৈঠক ডেকেছি চলতি সপ্তাহে। তাদের মতামত ও পরামর্শক্রমে আমরা সিদ্ধান্ত নিব।”

গুচ্ছ আকারে ভবন চিহ্নিত করার তাগিদ

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সারা ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করলে লাভ নেই। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্স, অফিস, বাণিজ্যিক কেন্দ্রর মতো ভবন, যেখানে লোক সমাগম বেশি হয় সেগুলো নিয়ে আগে কাজ করা দরকার৷ সেগুলোর ফায়ার সেফটি ও সিকিউরিটি নিয়ে আগে ভাবা উচিত৷

নতুন ৪০ হাজার ভবনে সনদ ১৬১ টি!

২০০৮ সালে ইমারত নির্মাণ আইন পরিবর্তন করে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের বিধান করা হয়৷ এই বিধান অনুযায়ী, ভবন নির্মাণের পর রাজউক এবং এক্সপার্টদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি ভবনটি অনুমোদিত নকশা এবং সব নিয়ম মেনে তৈরি হচ্ছে কিনা, তা দেখে ব্যবহারের ছাড়পত্র দেবে৷ তারপর গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন দেয়া হবে৷

স্থপতি ইকবাল হাবিব জানান, ২০০৮ সালের পর থেকে ঢাকা শহরে ৪০ হাজার ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নিয়েছে মাত্র ১৬১টি ভবন৷ এই কাজের গাফলতি সম্পূর্ণ রাজউকের। মানুষ মারা গেলে তারা বলে ভবনটি অননুমোদিত।এই অননুমোদিত ভবনের দায় রাজউকের৷ এরজন্য তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

Link copied!