নভেম্বর ১৮, ২০২১, ১০:৪১ পিএম
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি করে জাতীয় সংসদে দেওয়া বিএনপির এক সংসদ সদস্যের বক্তব্যের জবাবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, “একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে যার সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেয়া হয়েছে ৪০১ ধারায়। আমি একটা কথা বলছি উনারা বার বার এই একই কথা বলছেন। আইনটা দেখলেইতো হয়, উনারা যতখুশি আমাকে গালি দিতে পারেন। তাতে আমার কিছু আসে যায়না। আমি আইন মোতাবেক চলবো।”
বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপির সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহনের অনুরোধ জানালে আইনমন্ত্রী তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে জিএম সিরাজ বিএনপি চেয়ারপারসনকে মানবিক বিবেচনায় চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানান। পাশাপাশি দাবি পূরণ না হলে সংসদ থেকে পদত্যাগ করার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
জিএম সিরাজ আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো না হলে এবং পরিস্থিতি চরম হলে দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপির পক্ষে এই সংসদে থাকা হয়তো সম্ভব হবে না। খালেদা জিয়ার কিছু হলে তার দায় আওয়ামী লীগকে বহন করতে হবে।’
সংসদ সদস্য জিএম সিরাজের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, “৪০১ ধারায় এমন কোন প্রভিশান নেই যা একটা নিষ্পত্তিযোগ্য কিংবা নিষ্পত্তিকৃত আবেদনকে পুনরায় বিবেচনা করা যায়।”
আইনমন্ত্রী বলেন, “আমি কিন্তু যা দুদিন আগে বলেছি সেই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি বা রিপিটেশন করতে চাই না। আইনের অবস্থান অতন্ত্য পরিষ্কার। আইন যা বলেছে সেই মতে, মানবিক কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে,আমরা যদিও সাজাপ্রাপ্ত এবং দন্ডপ্রাপ্ত, বেগম খালেদা জিয়াকে তার সাজা সাসপেন্ডেন্ট রেখে প্রথমে ছয় মাস এবং তার পরে এটা আরও বর্ধিত করা হয়েছে।”
সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি বাংলাদেশের আইনে নেই উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন,“ আমি বার বার একটা কথা বলেছি, বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এইটা নাই। উনারা (বিএনপির সংসদ সদস্য) যদি আমাকে দেখাতে পারেন, আমিতো দেখিয়েছি যে বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এটা নাই। উনারা যদি দেখাতে পারেন আমি বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু এইটাতো আইনের বইয়ে নাই তাই উনারাও দেখাতে পারবেন না, বিবেচনার প্রশ্নও আসে না।”
মামলা থাকা সত্ত্বেও সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে মানবিক কারণে বিদেশে পাঠানো হয়েছিল বলে বিএনপির নেতারা যে যুক্তি দেখিয়েছেন তা অসত্য উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, “উনারা(বিএনপির সংসদ সদস্য ও নেতারা) বলছেন মানবিক কারণে মুক্তি দেয়া যায়। উনারা কিছু উদাহরণ দেখিয়েছেন। উনারা বলেছেন ২০০৭-৮ সালে আমাদের প্রধানমন্ত্রী,জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নাকি মানবিক কারণে মামলা থাকা সত্ত্বেও উনারা বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। এটা অসত্য।”
তিনি বলেন, “সারাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোনদিন কোন মামলায় সাজাপ্রাপ হন নাই, এটা সত্য। সেজন্যে যখন তিনি বিদেশে গিয়েছিলেন, বিদেশ যাওয়ার পর তাকে দেশে আসতে বাঁধা দেয়া হয়েছিল। তিনি যখন জোর করে দেশে আসছিলেন তখন কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”
আইনমন্ত্রী বলেন, “উনারা বলছেন, আ স ম আব্দুর রবকে কারাগার থেকে উনারা জার্মানি পাঠিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্যে৷ কোন ধারায় পাঠিয়েছিলেন উনারা জানেন। তখন ছিল মার্শাল ল। উনারা যথেচ্ছা করেছিল,আজকে আইনের শাসন যেখানে আছে সেখানে আমি যথেচ্ছা করতে পারি না। মাননীয় সংসদ সদস্যরা খালেদা জিয়ার ব্যাপারে শারীরিক ব্যাপারে তথ্য দিচ্ছেন তাতে কিন্তু সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হচ্ছে। সেই চিকিৎসায় তারা সন্তুষ্ট কি অসন্তুষ্ট এটা উনাদের ব্যাপার।”