জানুয়ারি ২৩, ২০২২, ১২:৩১ এএম
গত দুই বছরে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এখনও দেশের ব্যবসাবাণিজ্য সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এ কারণে ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধার মেয়াদ না বাড়ালে অন্তত ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ী খেলাপি হবেন। এ অবস্থায় ঋণের কিস্তি পরিশোধে অন্তত জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। শনিবার এফবিসিসিআই আয়োজিত কাউন্সিল অব চেম্বার প্রেসিডেন্টস-২০২২ এর মতবিনিময় সভায় ওই দাবি জানানো হয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন সারাদেশ থেকে আসা জেলা, সিটি ও নারী উদ্যোক্তাদের চেম্বারগুলোর সভাপতি ও সহ-সভাপতিরা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার পর এখন ওমিক্রন সংক্রমণে আবারও ব্যবসা বাণিজ্যের নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় অনেক ব্যবসায়ীর ঋণের কিস্তি দেওয়ার সক্ষমতা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সময় না বাড়ালে ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই খেলাপি হবেন, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে।
সভায় সংগঠনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ব্যবসায়ীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, ‘ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধার মেয়াদ না বাড়ালে অন্তত ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ী খেলাপি হবেন। মহামারিকালীন মন্দা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা এখন আরও বেশি দরকার। তা না হলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কঠিন হয়ে পড়বে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশে যেসব খাতের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিল, সে খাতগুলোই এখনও প্রণোদনার ঋণ পায়নি। মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। কিন্তু অন্যান্য প্রণোদনা তহবিলের অর্থ প্রায় শতভাগ ছাড় হলেও, এসএমই প্রণোদনার বড় অংশ বিতরণ হয়নি।’
ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ছোট আকারের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর অনীহা আছে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো মনে করে ছোট আকারের ঋণ দেওয়া লাভজনক নয়। বড় ব্যবসা খাতে ঋণ দিলে ব্যাংকের জনবল ও খরচ কম হয়। কিন্তু এ ধারণা ভুল। বরং এতে মন্দ ঋণের ঝুঁকি বাড়ে। এসএমই খাতে খেলাপি ঋণ নেই বললেই চলে।’
দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকারের নীতি নির্ধারণী বৈঠকে বেসরকারি খাতকে রাখার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিতে ৮২ শতাংশ অবদান রাখছে বেসরকারি খাত। তাই বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে যেকোনও নীতি প্রণয়নে এফবিসিসিআইর মতামত থাকা জরুরি।’
এফবিসিসিআই সভাপতিকে প্রতিমন্ত্রীর সমমর্যাদা দেওয়ার দাবিও জানান সারাদেশ থেকে আসা বিভিন্ন চেম্বারের সভাপতি ও সহ-সভাপতিরা।
এ সময় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, করোনা মহমারিতে বিপর্যস্ত ব্যবসা বাণিজ্যের মধ্যেও রাজস্ব আদায় করতে নানাভাবে তাদের হয়রানি এবং ভীতির পরিবেশ তৈরি করছেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। স্থানীয় পর্যায়ে চাঁদাবাজিরও শিকার হচ্ছেন। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরেও জেলা পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। এ কারণে প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের পক্ষের মহামারি পরবর্তী উত্তরণ কঠিন হয়ে পড়ছে।
এছাড়াও অডিটে সিঙ্গেল অ্যাকাউন্ট বাস্তবায়ন হলে তা পুরো অর্থনীতিতে বিপর্যয় আনবে বলে মত দেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, কারখানা স্থাপনে ৩৩টি লাইসেন্সের দরকার হয়। এসব সনদ নিতে বিপুল পরিমাণ ভোগান্তির শিকার হতে হয় উদ্যোক্তাদের। এই সমস্যা সমাধানে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।