মার্চ ২৯, ২০২৩, ০৮:০৬ পিএম
ভেঙে পড়েছেন প্রথম আলোর সাভার প্রতিনিধি শামসুজ্জামান শামসের মা করিমন নেসা। ছেলেক ভোররাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবরের পর থেকে উৎকণ্ঠিত এই মা পাগলের মতো আচরণ করছেন। ছেলেকে নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে তিনি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনে কথা বলতে চাইলে শামস নিজেই যেত। সে কি চোর ডাকাত?
পুলিশের কোনো সংস্থা শামসকে ধরে নেওয়ার কথা স্বীকার না করলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, কেউ বিচার চাইলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতেই পারে। পরে জানা যায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শামসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে আমবাগান এলাকায় একটি বাসা নিয়ে থাকেন শামস। তাঁর ভাই ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজান বেকারিতে অভিযান চালাতে গিয়ে প্রাণ হারানো পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম। তিনিও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।
শামসদের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায়; সেখানে থাকেন তাঁর মা। তিনি ছেলেকে তুলে নেওয়ার খবর পান সকাল ১০টার দিকে। দুপুরে সাটুরিয়া কাটিগ্রাম শামসদের বাড়িতে গিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা দেখেন, সব ঘর তালা মারা। উঠানে বসেছিলেন আমেনা বেগমসহ স্থানীয় কয়েকজন নারী।
শামসুজ্জামানের মায়ের চাচি শাশুড়ি আমেনা বলেন, ছেলের খবর পেয়েই পাগলের মতো আচরণ করতে থাকেন তার মা। বুক চাপড়ে, কপাল চাপড়ে কাঁদতে থাকেন তিনি। কান্না শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন।
করিমন স্বামীকে হারান ২০০৬ সালে। দুই ছেলে তখনও ছাত্র। স্বামী হারিয়ে দুই ছেলেকে ঘিরেই জীবন চালিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। বড় ছেলে রবিউল সহকারী পুলিশ সুপার হওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি ফেরে তাঁর জীবনে। কিন্তু ২০১৬ সালে রবিউল মারা যাওয়ার পর শামসই তাঁর জীবনের একমাত্র অবলম্বন।
প্রতিবেশীরা বলেন, করিমনকে এমন কাঁদতে তারা দেখেছিলেন রবিউলের মৃত্যুর পর। তাই তাঁরা ভয় পেয়ে যান।
আমেনা বেগম বলেন, তখন তাঁরা করিমনের ভাইদের খবর দেন। তখন ভাই ইসমাইল হোসেন গাড়ি নিয়ে এসে করিমনকে তার বাড়ি ধামরাইয়ে নিয়ে যান।
ধামরাইয়ের ডাউটিয়া গ্রামে ইসমাইলের বাড়িতে ঢোকার আগেই করিমন নেসার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, আল্লা আমার স্বামী নিছ, এক সন্তানরে নিছ। আমার এই সন্তানকে বুকে ফিরায় দাও আল্লাহ, আমি আর কিচ্ছু চাই না। আমার সন্তান ঘরে থাকব, আমি ওর মা ডাক শুনবো।
গত ২৬ মার্চ প্রথম আলোর যে প্রতিবেদনটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তার প্রতিবেদক ছিলেন শামস। ওই প্রতিবেদনে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ উপাদান থাকার কথা বলছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। মামলা খবর শুনে করিমন নেসা বলেন, আমার পোলায় কি চোর না ডাকাত? ওরে কীসের মামলায় দিছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলতে থাকেন, আর ওরে ধইরা নিল কেন, আমার ছেলেরে বললে তো নিজেই যাইতো, এমনি কইরা ওরে তুলে নিল ক্যান?
করিমন নেসার ভাই ইসমাইল হোসেন বলেন, দুর্ভাগ্য! আমার বোনটার পিছু ছাড়ছে না। বড় ছেলে যাওয়ার পর এই ছোট ছেলেই তার সবকিছু। ছেলের খবর শোনার পর থেকেই পাগলের মত আচরণ করছে ও।