ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের পরিকল্পিত চক্রান্ত রুখে দেন: শেখ পরশ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ২, ২০২৩, ১২:৫২ এএম

ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের পরিকল্পিত চক্রান্ত রুখে দেন: শেখ পরশ

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এখন বেশ জোরেশোরে চলছে উল্লেখ করে ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের পরিকল্পিত চক্রান্ত রুখে দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ।

শনিবার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে রোজা উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার খাদ্যসামগ্রী উপহার বিতরণ কার্যক্রম অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান।

আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং বিশেষ অতিথি দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম।

যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, “আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনা, আপনাদের প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে আপনাদের কাছে পাঠিয়েছেন কিছু খাদ্যসামগ্রী দিয়ে। এই উপহারগুলো আপনাদের অধিকার। এগুলোকে অনুদান মনে করবেন না। সরকার সর্বদা সচেষ্ট আছে আপনাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করার জন্য। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সৃষ্টি হয়েছিল জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। আজকে বিশ্বমন্দা ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস-পত্রের দামের উর্ধ্বগতি হওয়াতে আপনাদের যে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে সেটা আমরা অনুভব করি। কিন্তু আপনারা দুশ্চিন্তা করবেন না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী যুবলীগ আপনাদের পাশে আছে এবং চিরদিন থাকবে।”

শেখ ফজলে শামস্ পরশ আরও বলেন, “বাংলাদেশের জনগণের সাথে আমাদের নাড়ির সম্পর্ক। এদেশের জনগণকে আমরা সবসময় আমাদের সাথে পেয়েছি। এদেশের জনগণ চরম বিপদের সময় আমাদের পাশে ছিল এবং সবসময় থাকে। জনগণ থাকে সেই সকল রাজনৈতিক দলের সাথে যারা দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে, দেশকে গড়ার স্বপ্ন দেখায়। আমাদের নেত্রী এই দেশকে গড়ার স্বপ্ন বুখে ধারণ করে, তাই আওয়ামী লীগের সাথে এই দেশের মানুষ আছে। তিনি বলেন, একটা ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের এক পরিকল্পিত নীলনঁকশার বাস্তবায়ন চলছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা চলছে, যে সাধারণ মানুষ যেন সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। আর এ নীলনঁকশার বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন এক-এগারোর কুশীলবরা।”

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এখন বেশ জোরেশোরে চলছে উল্লেখ করে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, “ দেশের সুশীলসমাজের একটি অংশ এখন জনগণকে বিভ্রান্ত করতে তৎপর হয়েছেন। ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের মাঠে নামানোর এক পরিকল্পিত প্রয়াস চলছে। কিছু গণমাধ্যম এখন খুবই নগ্নভাবে বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ। যার ন্যাক্কারজনক বহিঃপ্রকাশ সম্প্রতি জনগণের সম্মুখে এসেছে প্রথম আলোর হলুদ সাংবাদিকতার মাধ্যমে। এটাকে শুধু হলুদ সাংবাদিকতা বলা যায় না। এই ধরণের সাংবাদিকতা সমগ্র সাংবাদিক পেশাজীবীদের কলঙ্কিত করেছে। এর মাধ্যমে শিশু সরলতাকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রদ্রোহিতা করা হয়েছে। আমি নিজে একজন সাংবাদিকের সন্তান হিসেবে ভিশনভাবে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। আমি প্রথম আলোকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য সকল মহলকে আহ্বান করছি এবং প্রথম আলোর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি করছি।”

তিনি বলেন, “একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু ওই সমালোচনা যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দেশবিরোধী হয়, তাহলে তার প্রতিবাদ করার অধিকার জনগণের আছে। প্রথম আলোরা এই সকল চক্রান্তমূলক কাজে লিপ্ত। অর্থাৎ সব মিলিয়ে দেশটাকে ঝুঁকিপূর্ণ, সংকটময় দেখানোর ন্যাক্কারজনক অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সরকার ব্যর্থ এটি প্রমাণ করতে মরিয়া এরা। এ সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা সুযোগসন্ধানী। দেশকে অস্থিতিশীল করতে পারলেই এদের পোয়াবারো। এদের কারণে গণতান্ত্রিক সরকার বার বার সংকটে পড়ে। অগণতান্ত্রিক শক্তি ডালপালা মেলে। ’৭৫-এর প্রেক্ষাপট একটু খতিয়ে দেখলে দেখবেন। হলিডে ও গণকণ্ঠ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল।”

একশ্রেণির ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী, দেশ গেল বলে আর্তনাদ করেছিল উল্লেখ করে  শেখ ফজলে শামস্ পরশ  বলেন, “মুনাফাখোর, কালোবাজারি, মজুদদাররা দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে বাজার অস্থির করে তুলেছিল। সেই পুরানো খেলা চলমান। আজ তিন মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার দেশ পরিচালনা করছে। এত দীর্ঘ দিবস-রজনী ক্ষমতা থেকে দূরে থাকাটা তথাকথিত সুশীলসমাজের কীভাবে সহ্য হবে? তাই শুরু হয়েছে সেই পুরোনো খেলা। চারদিকে হতাশার নানা বাদ্যযন্ত্র বাজানো হচ্ছে। কয়েকজন সুশীল তাঁদের নিয়ন্ত্রিত কিছু গণমাধ্যম, কিছু মতলববাজ সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্ত, ক্ষমতার মধু খাওয়া কিছু নব্য মোশতাক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কেউ কেউ (যারা এখনো নিজেদের প্রভু ভাবেন) আরেকটি এক-এগারোর আয়োজন করতে চাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জানেন, জনগণই তাঁর শক্তি। তাই তিনি বার বার আমাদের জনগণের কাছেই পাঠান। আর আমরা আপনাদের কাছে বার বার ফিরে আসি। আপনারাই আমাদের ভরস। তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের সামনে অনেক কাজ। আপনারা যদি যুবলীগ করতে চান, তাহলে পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে। শেখ হাসিনা যেই রাজনৈতিক মানদ- স্থাপন করেছেন সেটা অনুসরণ করতে হবে। সততা এবং নিষ্ঠার সাথে গণমানুসের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে যেতে হবে। আমাদের আগামীতে এই দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কোন জনবিচ্ছিন্ন সুশীলদের পূর্ব-নির্ধারিত সুশাসনের সংজ্ঞা দ্বারা আমাদের পরিচালিত হতে হবে না। আমাদের সুশাসনের সংজ্ঞা জননেত্রী শেখ হাসিনা রচিত করেছেন ইতিমধ্যে, সেটা হচ্ছে মানবিকতা, ন্যায়পরায়ণতা ও স্বচ্ছতা।”

প্রধান অতিথির বক্তব্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাড. কামরুল ইসলাম এমপি বলেন, “রোজার মাসে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই বিএনপি অকারণে আন্দোলন করছে। আর আওয়ামী লীগের কাজ হচ্ছে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা। তাদের ভালমন্দ দেখা। তাই আজকে যুবলীগের উদ্যোগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে রোজাদারদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী উপহার বিতরণ। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে চলেছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ সকল সূচকে অভূতপূর্বক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে আজ সম্মানের সাথে দেখা হয়। এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সন্ত্রাসী দল। ’৭১-এর পরাজিত শক্তি জামাত-বিএনপি আবারও মাথাচারা দিয়ে উঠছে, দেশের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। এই সকল ষড়যন্ত্রের জবাব দিতে হবে যুবলীগকেই।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “মহামারি করোনা এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বের অর্থনীতি যখন টালমাটাল সেই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘূর্ণায়মান। আর আমাদের আছে বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। আজ ইউরোপে ১ ডজন মুরগী কেনা যায় না, ৫ লিটার তেল কেনা যায় না, ২ কেজি টমেটো কেনা যায় না। সেখানে একজন শেখ হাসিনা নাই বলেই আজকে বন্ধ হয়ে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক, সিগনেচার ব্যাংক, সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংক। আর বাংলাদেশে একজন শেখ হাসিনা আছে বলেই কোন ব্যাংক বন্ধ হয় না, ইন্স্যুরেন্স বন্ধ হয় না, না খেয়ে কেই থাকে না।”

সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, “আজ বিএনপির নেতারা গণতন্ত্র নিয়ে টালবাহানা শুরু করেছেন। বিএনপি করে কারা আপনারা ভাল করেই জানেন। যারা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ তারাই বিএনপি করে। বিএনপির জন্ম সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে। জিয়াউর রহমান বন্দুকের গুলিতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছিল। তার সন্তান তারেক রহমান। ২০০২-২০০৬ সাল বাংলাদেশকে কারাগারে পরিণত করেছিল। সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছিল। বাড়ি-ঘর করতে গিয়ে চাঁদা দেওয়া লেগেছে, ব্যবসা করতে গিয়ে চাঁদা দেওয়া লেগেছে। তিনি আরও বলেন, বিএনপির যারা কুলাঙ্গার আছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করবই করবো।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাড. মামুনুর রশীদ, মোঃ হাবিবুর রহমান পবন, মোঃ নবী নেওয়াজ, তাজউদ্দিন আহমেদ, মো. আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জহির উদ্দিন খসরু, অ্যাড. ড.শামীম আল সাইফুল সোহাগ, দপ্তর সম্পাদক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি সম্পাদক মোঃ শামছুল আলম অনিক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মুস্তাফিজ, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক মোঃ আবদুল হাই, ধর্ম সম্পাদক মাওলানা খলিলুর রহমান সরদার, উপ-দপ্তর সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, উপ-অর্থ সম্পাদক সরিফুল ইসলাম দুর্জয়, উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ রাশেদুল হাসান সুপ্ত, উপ-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পাদক এন আই আহমেদ সৈকত, উপ-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ গোলাম কিবরিয়া শামীমসহ কেন্দ্রীয় মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।

Link copied!